Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থেমেছে প্রচারণা

বিশেষ সংবাদদাতা বরিশাল | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

প্রার্থীদের সাথে ভোটারদেরও স্নায়ুচাপ আর বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে গত রাতে। প্রচারণার শেষ দিনে দুপুর ২টার সাথে নগরীজুড়েই প্রার্থীদের পক্ষে মাইকযোগে প্রচারণা শুরু হয়। রাত ৮টায় মাইকিং বন্ধ হয়ে গেছে। আর রাত ১২টায় সব ধরনের প্রচারণার সুযোগই শেষ হয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই নগরীতে বিজিবির টহল শুরু হয়েছে।
বড় প্রার্থীদের কর্মীরা অনেক রাত পর্যন্ত বস্তি এলাকায় ছুটেছেন। তবে গতকাল ২০ দলীয় জোট প্রার্থী মজিবুর রহমান সারোয়ার গণসংযোগসহ কোনো পথসভা করেননি। গতকাল দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি নেতাকর্মীদের ব্যাপক হয়রানিসহ ধরপাকড়ের অভিযোগ করেন। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৩৫ নেতাকর্মীকে কথিত চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতারসহ আরো বিপুল সংখ্যক কর্মীর ঘরে ঘরে পুলিশ হানা দিয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। গত কয়েকদিনে পুলিশি ভূমিকায় বরিশাল নগরীতে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বিপন্ন বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকলে শেষ পর্যন্ত ভোট বয়কটের কথাও জানান তিনি। বাসদের মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেছেন, সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে সমান সুযোগের পরিবেশ নির্বাচন কমিশন তা এখনো পরিপূর্ণভাবে তৈরি করতে পারেনি। গতকাল বরিশাল বাসদ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি গণমাধ্যমের কাছে বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা মুখে আচরনবিধি ভঙ্গ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঙ্কার দিলেও বাস্তবে শাসক দলের প্রার্থী প্রথম দিন থেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি কমিশন। অপরাপর প্রার্থীর বেলায় পান থেকে চুন খসলেই নানা হয়রানি করা হয়েছে।
এদিকে মহাজোট প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহ গতকাল নগরীর ফজলুল হক এভিনিউতে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখেন। বিকেল নগরীর সদর রোডে ছাত্রলীগও মিছিল করে। এ সময় সদর রোড সংলগ্ন টাউন হল এলাকায় বিএনপি অফিসের নিরাপত্তায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এবারের নির্বাচনে বরিশাল মহানগরীতে ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৪১ হাজার ৯৫৯ জন। এর মধ্যে নতুন ভোটার ৩০ হাজার ৭৩২ জন। আগামীকাল নগরীর ৩০ ওয়ার্ড ও ১০টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের ১২৩টি কেন্দ্রের ৭৫০টি বুথে ভোট গ্রহণ। এর মধ্যে তিনটি ওয়ার্ডের ১১ বুথে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট নেয়া হবে। সকাল ৮টা থেকে টানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটাররা ভোট প্রদানের কথা।
আগামীকাল ভোট গ্রহণের লক্ষে নগরীতে প্রায় সাত হাজার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ১২৩টি ভোটকেন্দ্রসহ মাঠে থাকছে। এ পর্যন্ত নগরীতে একটি নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকলেও গত তিনদিনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড়ে দৃশ্যপটের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার দ্বিতীয় দফায় দুদিন নগরীতে থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনাসহ বিভিন্ন বিষয় মনিটরিং করেন। কিন্তু অতি উৎসাহী কিছু কর্মকান্ডে এ নির্বাচন অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ হতে শুরু করেছে। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনায় নগরীর অনেক ভোটারের মধ্যেও উৎকণ্ঠা লক্ষ করা গেছে। নির্বাচনের দিন নির্বিঘে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া ভোট প্রদানের বিষয়েও নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। গতকালও অনেক ভোটারই প্রশ্ন করেছেন, তারা ‘ভোট দিতে যেতে পারবেন কিনা’? মহাজোট ছাড়া সব প্রার্থীই ইতোমধ্যে নির্বাচনের আগে ও পরে সেনা মোতায়েনের দাবিও করেছেন। ‘২০০৩ ও ২০০৮-এর নির্বাচনে সেনা টহল থাকায় ভোটারদের মধ্যে যে আস্থা ছিল এবার তা লক্ষ করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। নির্বাচন কমিশন বরিশালে কিছুটা তৎপর হলেও তাদের অনেক পরামর্শ ও আদেশ সঠিকভাবে প্রতিপালিত হয়নি বলেও অনেকে মত প্রকাশ করেছেন।
এদিকে বরিশাল মহানগর পুলিশের তরফ থেকে ভোটের আগের রাত ১২টা থেকে ভোটের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত নগরীতে সব ধরনের যন্ত্রিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গতকাল মাইকিং করা হয়েছে। এ ছাড়াও নগরীতে বহিরাগতদের প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দল থেকে বহিষ্কারের পরও জাতীয় পার্টি প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের প্রচারণা গতকালও অব্যাহত ছিল। কর্মী ও সমর্থকদের চাপেই তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না বলে জানিয়েছেন। পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মহশিন উল ইসলাম হাবুল তাদের প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছে বলে জানিয়ে সব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দেয়ার কথাও জানান। ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুবও শেষ প্রচারণার দিনে নগরজুড়ে গণসংযোগ ও ব্যাপক প্রচারণায় ছিলেন।
অপর দিকে মহাজোট প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহও গতকাল নগরীর বিভিন্ন এলাকার সর্বস্তরের মানুষের সাথে কুশল বিনিময় ও দোয়া কামনা করেন। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এবার অনেকটা ঐক্যবদ্ধভাবেই সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন।
বিএনপিসহ ২০ দলেও এবারের সিটি নির্বাচন যথেষ্ঠ ঐক্য গড়ে তুলেছে। বিএনপিতে এতদিন যারা মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নের দাবিদার ছিলেন, তারাও ঐক্যবদ্ধভাবে সারোয়ারের পক্ষেই এতদিন মাঠে কাজ করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি করপোরেশন নির্বাচন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ