বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোরআন ও হাদিসে অসংখ্য সতর্কবাণী রয়েছে। মজলুমের ফরিয়াদ থেকে বেঁচে থাকার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর বিখ্যাত হাদিসের কথা সকলের জানা। এখানে আমরা এমন একজন বিশিষ্ট সাহাবির বদদোয়ার কথা বলতে চাই, যিনি ছিলেন ‘আশারায়ে মোবাশ্বারা’র (বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন) একজন। তার নাম সাঈদ ইবনে জায়দ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল (রা.)। তিনি প্রথম দিকের ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে একজন। তার সাথে হজরত উমর (রা:)-এর বোনের বিয়ে হয় এবং তিনিই হজরত উমর (রা:)-এর ইসলাম গ্রহণের কারণ হয়েছিলেন। তিনি সকল জেহাদে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবে বিশেষ কারণে ‘জঙ্গে বদর’ এ শরিক হতে পারেননি। কারণটি ছিল এই যে, তাঁকে তালহা ইবনে আব্দুল্লাহর সঙ্গে কোরেশের উটের কাফেলা অনুসন্ধানের জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। তিনি ‘আতিক’ নামক স্থানে হিজরি ৫১ সনে ইন্তেকাল করেন এবং মদিনা মোনাওয়ারায় ‘জান্নাতুল বাকি’তে তাকে দাফন করা হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৭০ বছর। এ মহান সাহাবির দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হতো। তাঁর এমনই একটি ঘটনা নিম্নরূপ :
বর্ণিত আছে যে, আরওয়া বিনতে ওয়ায়েস নামের এক মহিলা কোনো এক ব্যাপারে হজরত জায়দ (রা:)-এর সাথে ফেঁসে যায়। সে বিষয়টি নিয়ে মারওয়ান ইবনে হাকামের নিকট উপস্থিত হয়। মারওয়ান তখন মদিনার আশেপাশে ‘হিরা’ নামক স্থানে বসবাস করত। আরওয়া তার কাছে অভিযোগ করে যে, সাঈদ ইবনে জায়দ (রা:) তাঁর অধিকার প্রদান করতে চান না এবং তিনি তার জমির কিছু অংশ তাঁর কব্জাগত করে রেখেছেন। আরওয়ার এ বক্তব্য শ্রবণ করে হজরত সাঈদ ইবনে জায়দ (রা:) বলেন, ‘আমি এই নারীর প্রতি কিভাবে জুলুম করতে পারি? অথচ আমার সামনে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর এই হাদিস রয়েছে যাতে তিনি বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি কারো জমিনের অঙ্গুলি পরিমিত স্থানও জোরপূর্বক কব্জাগত করে, কেয়ামতের দিন তাকে সাত জমি সমান শৃঙ্খল পরানো হবে।’ এ কথা বলেই তিনি আরওয়ার পক্ষে জমি ছেড়ে দেন। অতঃপর মারওয়ান ইবনে হাকামকে বললেন, ‘আপনি এ মহিলার ব্যাপারটি ছেড়ে দিন এবং তার সম্পর্কে সতর্ক থাকুন।’ এরপর তিনি ওই মহিলার জন্য এইভাবে বদদোয়া করেন : ‘আল্লাহুম্মা ইন কানাত কাজেবাতান, ফা আমম্মে বাছরা হা, ওয়াজ আল কাবরাহা ফি বি’রিহা’। অর্থাৎ, হে আল্লাহ! যদি এ মহিলা মিথ্যাবাদী হয়, তা হলে তুমি তাকে অন্ধ করে দাও এবং তার কবর কূপে বানাও।
তৎক্ষণাৎ আরওয়া বিনতে ওয়ায়েস অন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর এ সময় একটি সয়লাব (বন্যা) আসে যা ওই মহিলার জমির সীমানা স্পষ্ট করে দেয়। যখন আল্লাহ তায়ালা আরওয়াকে অন্ধ করে দেন, তখন তার অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছিল যে, সে দেয়ালগুলো খুঁজে খুঁজে এবং তা ধরে ধরে চলতে থাকে এবং বলতে থাকে, ‘আমার ওপর সাঈদ ইবনে জায়দ ইবনে আমর ইবনে নোফাইলের বদদোয়া লেগেছে। তখন ওই চলন্ত অবস্থায়ই সে ক‚পে পড়ে মারা যায়।
কেউ কেউ বলেন, ওই মহিলা হজরত জায়দ (রা:)-এর নিকট অনুরোধ জানায় তার জন্য দোয়া খায়ের করতে। তখন তিনি জবাবে বললেন, ‘আমাকে যে বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তায়ালা দান করেছেন, তা আমি কোনো অবস্থায় ফেরত দিতে পারি না।’
হজরত জায়দ (রা:) মিথ্যাবাদী মহিলা আরওয়ার বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ না করেই তার দাবি অনুযায়ী জমি দিয়ে দেন এবং মারওয়ানকেও বলে দেন বিষয়টি নিয়ে মাথা না ঘামাতে। কেননা তিনি জানতেন, মহিলার দাবি অন্যায় ও মিথ্যা। আর এ অন্যায় আল্লাহ সহ্য করবেন না। তাই তিনি কথা না বাড়িয়ে মহিলার দাবি অনুযায়ী জমি দিয়ে দেন এবং আল্লাহর দরবারে বদদোয়া করেন এবং সাথে সাথে তা কবুল হয়ে যায়। তাই হাদিসে বলা হয়েছে, মজলুমের (আল্লাহর দরবারে) ফরিয়াদ হতে আত্মরক্ষা করো। কেননা তা আল্লাহর দরবারে দ্রুত কবুল হয়। মজলুমের বদদোয়া আরশ ভেদ করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।