পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ সকল ক্ষেত্রে দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। বাংলাদেশ আশা করছে, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবার পরও জাপান বাংলাদেশকে দেয়া টেকনিকের, লিগ্যাল, বাণিজ্য ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
বিগত ২০১৬ সালে ঢাকায় হোটেল হলি আর্টিজেনে অপ্রত্যাশিত ঘটনায় ৭ জাপানী নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার যেকোন সন্ত্রাসী ঘটনায় জিরো টলারেন্স নীতি পালন করে চলছে। বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোমধ্যে ওই ঘটনার তদন্ত করে বিচারিক আদালতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেছে। ওই ঘটনার পর সরকারের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে এ জাতীয় আর কোন সন্ত্রাসী ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। বর্তমানে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো। এখন জাপানী নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমনের উপর থেকে বিদ্যমান লেভেল-২ ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলে বাংলাদেশ খুশি হবে।
জাপানে সফররত বাণিজ্যমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার টোকিওতে জাপানের ইকোনমি, ট্রেড এন্ড ইন্ডাট্রি মন্ত্রী হিরোশিগে সেকো এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষীক বৈঠকের সময় এ সব কথা বলেন।
জাপানের ইকোনমি, ট্রেড এন্ড ইন্ডাট্রি মন্ত্রী হিরোশিগে সেকো বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ সকল ক্ষেত্রে দ্রæত উন্নয়নে জাপান খুশি। জাপান সরকার এবং জাপানের জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবার পরও জাপান বাংলাদেশকে দেয়া বাণিজ্যি ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, বাংলাদেশে এখন কোন নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। জাপানী নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমনের উপর থেকে বিদ্যমান লেভেল-২ ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রæত প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। জাপানী বিনিয়োগকারীদের জন্য ইকোনমিক জোন বরাদ্দ দিতে বাংলাদেশ প্রস্তুত। এখানে জাপানের বিনিয়োগকারীগণ স্মার্ট টেকনোলজি, বøু ইকোনমি, হাই-টেক প্রকাক্ট, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রডাক্ট, টেক্সটাইল, এগ্রোপ্রসেসিং প্রডাক্ট, অটো মোবাইল, আইসটি এবং জুট প্রডাক্ট খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে জাপান বাংলাদেশকে ১৮.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতের ৪০টি প্রকল্পের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জাপান। জাপান বাংলাদেশকে অনেক পণ্য রপ্তানিতে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করছে। ফলে জাপানের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে। গত ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে বাংলাদেশ জাপানে রপ্তানি করেছে ১,০১২.৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য, একই সময়ে আমাদনি করেছে ১,৮৩৩.৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। জাপান বাংলাদেশকে চামড়ার হ্যান্ড গেøাবস সহ আরো কিছু পণ্যের ডিউটি ও কোটা ফ্রি বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করলে জাপানে বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি আরো বাড়বে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ মহুর্তে বাংলাদেশে জাপানের ৩১২টি কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করছে, এখানে প্রায় ৪২ হাজার জনবল কাজ করছে। এখানে জাপানের বিনিয়োগ প্রায় ১,৪৬৭.২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, এরমধ্যে ২০১৭ সালে ডাইরেক্ট ফরেন ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে ৭০.২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জাপানী উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাতে ফ্যাশন ডিজাইন উন্নয়ন, উন্নতমানের পোশাক তৈরী এপিআই এবং লেদার পণ্য তৈরী খাতে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসতে পারে।
পরে বাণিজ্যমন্ত্রী জাপান-বাংলাদেশ কমিটি ফর কমার্সিয়াল এন্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন এর উদ্যোগে বিজনেসম্যান টু বিজনেসম্যান বৈঠকে মতবিনিময় করেন। এরপর তিনি জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন(জেটরো)-এর প্রেসিডেন্ট ইয়াশুশি আকাহোশি এর সাথে বৈঠক করেন।
মন্ত্রীর সঙ্গে জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতেমা, এফবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমই-এর প্রেসিডেন্ট মো. সিদ্দিকুর রহমান, এলএফএমইএবি এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নাজমূল হাসান, বিজিএমই-এর পরিচালক মুনির হোসেন, ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সারাফাত, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ওবায়দুল আযমসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সদস্যগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।