Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে হেভীওয়েট প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারনা

লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক অফিস | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৮, ৩:৩৩ পিএম

১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে নির্বাচন নিয়ে প্রচার-প্রচারনা চলছে।মেঘনা নদী বেষ্টিত লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন। এ আসনে হেভীওয়েট প্রার্থীদের অংশ গ্রহনে সকল জাতীয় নির্বাচন জমজমাট হয়ে থাকে। মেঘনার ভাঙনে বিগত ২০ বছরে এ আসনের অনেক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মেঘনার ভাঙনে ভিটা-মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। নদী ভাঙন আর প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করেই এখানকার মানুষ প্রতিদিন বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন। নির্বাচনী আমেজ এলাকায় চলছে গণসংযোগ, শুভেচ্ছা বিনিময়, গ্রুপিং লবিং। অপরদিকে ভোটারদের মধ্যেও চলছে নানা আলোচনা। কে কোন দলের মনোনয়ন পাচ্ছে, কে হলে ভালো হয় তা নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষন। জাতীয় পর্যায়ের ধর্নাঢ্য ব্যক্তিরা এ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক লাইনে ব্যাপক দান-অনুদান প্রদান করে যাচ্ছেন।
১৭টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও রামগতি/কমলনগর ২টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনের অধিকাংশ মানুষ মৎস্য শিকার এবং কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসনে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটের নেতা-কর্মীরা। মনোনয়ন পেতে আওয়ামীলীগ-বিএনপির দলীয় নেতারা ছাড়াও এ আসনে জোটের শরীক অন্যান্য হেভিওয়েট প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন তারা। পাশাপাশি ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাধারন ভোটারদের কাছেও। দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। মূলত এই আসনে আগামী নির্বাচনে লড়াই হবে ১৪ দলের সাথে ২০ দলের। ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জেএসডি (জাসদ) ও এলডিপি সমর্থিত মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা, সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ শুরু করেছেন । শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে ব্যানার ও পেষ্টুন টাঙ্গিয়ে নিজেদের প্রার্থীতা ঘোষনা করছেন। আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রাথীদের মাঝে দেখা গেছে ব্যাপক আগ্রহ।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলক জেএসডির কেন্দ্রীয় সভাপতি আ স ম আব্দুর রব। এরশাদ সরকারের সময় তিনি একবার সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐক্যমতের সরকারের মন্ত্রী হন তিনি। আগামী নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন আ স ম আব্দুর রব।
২০১৪ সালের ১০ম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (আল মামুন)। এরপর থেকে এলাকার উন্নয়নমুলক ও মেঘনার ভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ করছেন তিনি। মেঘনার ভাঙ্গন প্রতিরোধে ১৩৪৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হওয়ার পর ১ম পর্যায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার বাঁধ ২শ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ ইতিমধ্যে শেষ হওয়ার পথে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্মীপুর সফরে নদী ভাঙন রোধের দ্বিতীয় দফায় অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি আদায় করতে সক্ষম হন তিনি।
এ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন, বর্তমান এমপি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (আল মামুন), কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক এবং এ আসনের সাবেক সংরক্ষিত মহিলা এমপি ফরিদুন্নাহার লাইলী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কমলনগর উজেলা আয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামছুল কবির। ভূমিহীন নেতা হিসেবে পরিচিত আজাদ উদ্দিন চৌধুরীও মনোনয়ন চাইবেন। তিনি ইতিমধ্যে এ লক্ষ্যে আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়েদুল কাদেরের হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। ইতিপূর্বে তিনি জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট মাহবুবুর রহমানও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
আওয়ামীলীগের বর্তমান এমপি ও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (আল মামুন) বলেন, রামগতি-কমলনগরে অনেক উন্নয়ন কাজ করেছি। এ অঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে যে বড় দাবী ছিল নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ। সে বিষয়ে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার কাজ করছে। ইতিমধ্যে ১৩৪৯ কোটি টাকা একনেকে পাশ হয়ে প্রায় ২শ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ম পর্যায়ের সাড়ে ৫ কিলোমিটার বাঁেধর কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে এ আসনে যে উন্নয়ন হয়েছে অতীতের ৪০ বছরেও এ পরিমাণ কাজও হয়নি বলে দাবী করেন তিনি। নেতা-কর্মীদের দূদির্নে ছিলাম, ভষিৎতেও থাকবো। অতীতের চেয়ে নেতাকর্মীরা এখন অনেক উজ্জীবিত। আমি রামগতি-কমলনগর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে দলের নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করে নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করছি। ইনশাআল্লাহ নেত্রী মনোনয়ন দিলে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লায়লী বলেন, আমি ছাত্র জীবন থেকে আওয়ামীলীগের সক্রীয় রাজনীতি করে আসছি। চট্টগ্রাম ভার্সিটির সামসুন নাহার হলের দু-বার ভিপি নির্বাচিত হই। আমি একজন সক্রীয় মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। রামগতি আসনে সংরক্ষিত মহিলা এমপি হিসেবে ইতিমধ্যে দায়িত্ব পালন করেছি। তা-ছাড়া সারাদেশে নৌকার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এ এলাকার মানুষ আমাকে এমপি হিসাবে নমিনেশান চাইতে অনুরোধ করছেন। আমাদের নেত্রী যদি মনে করেন আমাকে দিয়ে এই এলাকার মানুষের জন্য কাজ করাবেন, তাহলে আমি সাদরে গ্রহণ করবো।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কমলনগর উজেলা আয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামছুল কবির বলেন আমি ছাত্র জীবন থেকে আওয়মী রাজনীতির সাথে জড়িত। ২০০২সাল থেকে ২০০৭সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলে ছাত্র সংসদে যুগ্ম সম্পাদক ছিলাম। সব সময় নেতা কর্মীদের পাশে ছিলাম। আমি এলাকার তৃনমূল নেতা কমীদের সাথে নিয়ে ব্যাপক গনসংযোগ করছি। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাছিনা আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি নি:স্বার্থ ভাবে এলাকার উন্নয়নে কাজ করবো।
এ আসনে বিএনপি থেকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী, সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দিন নিজান, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সফিউল বারী বাবু। এবং কেন্দ্রীয় তাঁতীদলের সহ-সভাপতি আবদুল মতিন চৌধুরী।
২০০১ ও ২০০৮ এর নির্বাচনে আশরাফ উদ্দিন নিজান এমপি নির্বাচিত হন। এলাকায় তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তিনি এমপি থাকাকালীন নদীভাঙ্গন রোধে অনেক কাজ করেছেন। তৃনমূল নেতা কমীদের সাথে তার অবস্থান ভাল আছে।
কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সফিউল বারী বাবু তিনিও বিভিন্ন অকেশানে নিজ এলাকায় যাচ্ছেন। দলীয় নেতা কর্মীদের খোজ খবর নিচ্ছেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাই জেল জুলম কিছুই তাঁকে পিছনে ফেলতে পারেনি।
তাঁতীদলের সহ-সভাপতি আবদুল মতিন চৌধুরীও দুর্দিনে নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে বর্তমানে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সাথে ২০ মামলার আসামী হয়ে আইনী মোকাবেলা করছেন । তিনি বিএনপির মনোনয়নের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
এখানে আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট রয়েছে। তাই এ আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ে সম্ভাবনা কোন ভাবে উড়িয়ে দেয়া যায়না।
এই আসনে আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী এক সময়ের বিএনপি সরকারের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মেজর (অবঃ) আব্দুল মন্নান। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পার্টি বিকল্প ধারার কেন্দ্রীয় মহাসচিব। তিনি আগামী নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকেও মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছেন।
সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলার বিএনপির সভাপতি আশরাফ উদ্দিন নিজান জানান, আমি দুইবার এমপি নির্বাচিত হয়েছি। আমার এলাকাবাসী তথা লক্ষ্মীপুর বাসী জানে আমার সততা, যোগ্যতার কথা। এ মূহুর্তে আমার এলাকার ৭০ ভাগ নদী ভাংগা মানুষ তাদের সাহায্য সহযোগিতার কথা চিন্তা করছি। দলের ৫ হাজার ৩শত ৯০জন নেতা-কর্মীর মামলা মোকাবেলা করতে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা ও চিন্তা করতে হচ্ছে। আমার নমেনিশান নিয়ে এখন চিন্তা করার দরকার মনে করছিনা। দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও আমাদের নেতা তারেক রহমান নমেনিশান নিয়ে চিন্তা করবেন। তাঁরা যা ভালো মনে করবেন তাই মেনে নিব।
কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সফিউল বারী বাবু বলেন,দলের জন্য নিবেদীত প্রাণ হয়ে কাজ করছি। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও আমাদের নেতা তারেক রহমান দলীয় ভাবে আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচিত হয়ে রামগতি ও কমল নগরের জনগনের কল্যানে কাজ করবো।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচনী প্রচারনা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ