Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বগুড়ায় ভুল চিকিৎসায় স্কুল ছাত্রের মৃত্যুতে ক্লিনিক সিলগালা

বগুড়া ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৮, ৬:১৩ পিএম

বগুড়ায় ভুল চিকিৎসায় এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ‘ডলফিন ক্লিনিক অ্যা- ডায়াগনস্টিক’ নামে বেসরকারি একটি হাসপাতাল সিলগালা করে দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতাজ মহল বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের শেরপুর রোডে ওই ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে ক্লিনিকটি সিল করে দেন।
বুধবার রাতে ডলফিন ক্লিনিক নামে ওই হাসপাতালের অ্যাপেনডিসআইটিস অপারেশন করাতে গিয়ে স্কুল ছাত্র সাকিব হাসানের (১৪) মৃত্যু হয়। শহরের ফুলতলা এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে সাকিব স্থানীয় ফয়জুল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সাবিকের বাবার অভিযোগ, চিকিৎসক নামধারী ব্যক্তিদের ভুল চিকিৎসায় তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসক, নার্সসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী পলাতক রয়েছে।
বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. শামসুল হক জানান, কথিত ওই ক্লিনিকের কোন অনুমোদনই ছিল না। ঘটনাটি তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল ওয়াদুদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে ৩ কর্ম দিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, স্কুল ছাত্র সাকিব পেটের ব্যথায় ভুগছিল। বুধবার দুপুরে তাকে প্রথমে শহরের অপর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ব্যথার কারণ অ্যাপেনডিসাইটিস বলে জানান। আপাতত অপারেশনের প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে ব্যথার জন্য কিছু ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন। পরে এক দালাল সাকিবের বাড়ি গিয়ে তাকে কম খরচে ডলফিন ক্লিনিকে অপারেশনের প্রস্তাব দেয়। সেই অনুযায়ী তাকে বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডলফিন ক্লিনিক অ্যা- ডায়াগনস্টিক-এ ভর্তি করা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাকিবকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। সেখানে সাদেকুল ইসলাম নামে এক চিকিৎসক তাকে অজ্ঞান করে (অ্যানেসথেসিয়া দেয়) এবং ডা. এ. কে পাল তার অপারেশন করেন।
সাবিকের বাবা আব্দুল আজিজ জানান, প্রায় এক ঘণ্টা পরেও তার ছেলেকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের না করায় তাদের সন্দেহ হয়। এরপর তারা অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে গিয়ে ছেলের নিথর দেহ দেখতে পায়। সেই অবস্থায় তারা ছেলেকে নিয়ে শহরের কানুচগাড়ি এলাকায় অপর একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে জানান, অনেক আগেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে শজিমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে দেয়।
অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. এ. কে পালের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পুরো ঘটনার দায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, অপারেশন সাকসেসফুল ছিল। তার দাবি অজ্ঞান করানোর ক্ষেত্রে অথবা অপারেশন পরবর্তী চিকিৎসা সেবায় কোন ঘাটতির কারণে রোগীর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
বগুড়ার ক্লিনিক ভিজিলেন্স টিমের সদস্য সচিব সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সামির হোসেন মিশু জানান, অভিযানকালে চারতলায় অবস্থিত অপারেশন থিয়েটার কক্ষটি তালাবন্ধ ছিল। পাঁচতলায় কিছু বিছানাপত্র পাওয়া গেছে। সেগুলো জব্দ করা হয়েছে। বগুড়া সদর থানার ওসি বদিউজ্জামান জানান, ময়না তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোন মামলা কিংবা অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে আমরা জেনেছি লাশ দাফনের পর তারা মামলা করা হতে পারেন।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ