পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলা সাহিত্যের রাজপুত্তুর হুমায়ূন আহমেদের আজ ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের এই দিনে তিনি আমেরিকার বেলভিউ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। হুমায়ূন আহমদ ছিলেন বাংলা সাহিত্যের পাঠক সৃষ্টির এক যাদুকর। রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছে; আর হুমায়ুন সৃষ্টি করেছেন বাংলা সাহিত্যের পাঠক। লেখার সাহিত্য মানের বিচার-বিশ্লেষণ না গেলে ভাবা যায় হুমায়ুন ছাড়া বাংলা সাহিত্যের পাঠকের কথা! শুধু কী বাংলা সাহিত্যের পাঠক সৃষ্টি; তিনি নাটক ও সিনেমায় রুচিশীল দর্শক তৈরি করেছেন। যা যুগের পর যুগ ধরে গবেষণারত নাটক-সিনেমার রথী-মহারথীদের পক্ষ্যে সম্ভব হয়নি। তাঁর ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের বাকের ভাইয়ের ফাঁসি বন্ধের দাবিতে ঢাকার রাজপথে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী মিছিল পর্যন্ত করেছে। হুমায়ুনের নাটক টিভিতে প্রচার হলে সন্ধ্যার মধ্যেই ঢাকার রাজপথ ফাঁকা হয়ে যেত। সিনেমা হলে দর্শক উপচে পড়তো হুমায়ূনের সিনেমা দেখার জন্য।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস হাজার বছরের। শিল্পে রয়েছে বহুযুগের ঐতিহ্য। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কবিতা-গল্প-উপন্যাসের বইয়ের পাঠকে চলছিল হাহাকার। একটা সময় ছিল বাংলা একাডেমীর বইমেলায় প্রকাশকরা বই বিক্রী করতে না পেরে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতেন। আবার যা বিক্রী হতো তার বেশির ভাগই পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের বই। এ ছাড়া সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিনে পয়সায় জাহাজ ভর্তি করে পাঠানো বই পাঠক সামান্য দামে ক্রয় করতো। কিন্তু সে বইয়ের বেশির ভাগই লাইব্রেরীতে শো-পিছ হিসেবে থাকতো। হুমায়ূন সেই মনোবলি ভেঙ্গে দিয়েছেন।
রোমেনা আফাজের কথা মনে আছে? তাঁর লেখা ‘দস্যু বনহুর’ এক সময় বাংলাদেশের ট্রেন, স্টীমার, বাসে বিক্রী হতো মুড়িমুড়কির মতো। তখন বাংলাদেশের বইয়ের বাজারে চলছিল পশ্চিম বাংলার লেখকদের জমজমাট ব্যবসা। বই ক্রয় মানেই ভারতীয় লেখকের বই। শরৎ চন্দ্রের বই তো মানুষের হাতে হাতে শোভা পেত। কিন্তু রোমেনা আফাজের চটি বই দস্যু বহুর বাংলাদেশের বই পাঠকদের নতুন করে দিশা দেখায়। মানুষ বাংলাদেশের লেখকদের লেখা বইয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে। সেবা প্রকাশনী থেকে আনোয়ার হোসেনের বই এক সময় তরুণ-তরুণীদের হৃদয় কাড়ে। কিন্তু হুমায়ুন আহমদ সবকিছু ছাপিয়ে যান। কলকাতার লেখক সুনীল-সমরেশ-শীর্ষেন্দু-যাযাবরদের দখলে থাকা ঢাকাসহ বাংলাদেশের সৃজনশীল বইয়ের ‘মার্কেট’ দখলমুক্ত করেন রসায়নবিদ হুমায়ুন। দেশের যে তরুণ-তরুণীরা কলকাতার লেখকদের বইয়ের দিকে হুমড়ি খেয়ে পড়তেন; তারা গোগ্রাসে গিলতে শুরু করেন হুমায়ূনের সায়েন্স ফিকশনের বই। সৃজনশীল সাহিত্য পাঠে দেশে রাতারাতি ঘটে যায় বিপ্লব। যাকে ‘বাংলা সাহিত্যের পাঠক বিপ্লব’ বললে বেশি বলা হবে না। বাংলা সাহিত্যে একশ’ নামজাদা কবি-সাহিত্যিক মিলে যুগের পর যুগ ধরে দেশে যে ‘পাঠক’ তৈরি করতে পারেননি; হুমায়ূন আহমেদ একাই তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি বাংলা সাহিত্যের পাঠক তৈরি করেন। হুমায়ূন আহমেদকে বলা যায় বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিকদের চূঁড়ামনি। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় কোলকাতায় একটি সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ভারতীয় সিনেমা আর কলকাতার টিভিগুলোয় প্রচারিত বাংলা সিরিয়ালের কারণে সামাজিক সমস্যা বাড়ছে। সিনেমা ও সিরিয়ালে সমাজের খারাপ দিকটা দেখানো হয়। একটা ছেলের বাবা নেই, বাবার পরিচয় নেই। একজনের ঘরে তিন-চারটে বউ, তিন-চারটে কুটুন্তি (কুমন্ত্রণাদাত্রী)। একজন আরেকজনকে বিষ খাইয়ে দিচ্ছে। শাশুড়ি-বউয়ের মধ্যে রোজকার ঝামেলা। যত খারাপ খারাপ জিনিস যারা জানে না তাদেরও শিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে সিরিয়ালের মধ্যমে। এর ফলে সমাজে অনেক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে।’ পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কোলকাতার টিভিগুলোর সিরিয়াল নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন; অথচ আমাদের মা-খালা-বউ-ঝিরা এখনো ওই সব সিরিয়াল দেখার জন্য হুমরি খেয়ে পড়ছেন। এ দায় কার? আমরা কেন দর্শকদের চাহিদা মতো নাটক-সিনেমা তৈরি করতে পারছি না? কেন উপন্যাস গল্প লিখতে পারছি না? গত ঈদুল ফিতরে দেশের ২৫ থেকে ৩০ টিভি চ্যানেল সাপ্তাহব্যাপী কয়েক হাজার অনুষ্ঠান প্রচার করলো। এসব প্রচারিত অনুষ্ঠান, নাটক-সিনেমা কয়টি ছিল মানসম্পন্ন? কয়টিতে দেশের মাটি মানুষের জীবন চিত্র যায়গা পেয়েছে? অথচ হুমায়ুনর আহমেদ সে চেষ্টা করে সার্থক ভাবে সফল হয়েছেন। দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অবহেলিত জারি-সারি-মুর্শিদী-ভাওয়াইয়া গান সংগ্রহ করে নিজের সিনেমায় যুথসই ব্যবহার করে দর্শকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। নাটক সিনেমায় হিন্দুয়ানী সমাজচিত্রের পরিবর্তে বাংলাদেশের মুসলিম মধ্যবিত্তের সমাজ জীবন তুলে ধরেছেন। তাঁর রচিত-নির্দেশিত ও পরিচালিত এইসব দিন রাত্রি, বহুব্রীহি, কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাত, অয়োময়, আজ রবিবার নাটকগুলো ছিল অনবদ্য। সিনেমা’য় তিনি কম সাফল্য দেখাননি। শঙ্খনীল কারাগার, আগুনের পরশমনি, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া, নয় নম্বর বিপদ সংকেত, দারুচিনি দ্বীপ সিনেমাগুলো কী কম দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে? অথচ এখন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে চলছে খড়া। এখন প্রয়োজন হুমায়ূন আহমেদের মতো একজন সৃষ্টশীল ব্যাক্তি; যারা হাতে রয়েছে যাদুর কাঠি। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।