Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আ.লীগ ছাড়া কেউ জমা দিতে পারেননি মনোনয়নপত্র নির্বাচনের ১২ দিন আগেই বিজয়ী যারা

প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা
বেপরোয়াভাবে সন্ত্রাস সৃষ্টি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও রাম দা নিয়ে প্রার্থীদের বাড়ি হামলার কারণে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নে চেয়ারম্যানসহ ১০টি পদে কোন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি। ফলে নির্বাচনের ১২ দিন আগেই নির্বাচিত হয়ে গেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত এসব চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলররা। জামাল ইউনিয়নের ভোটাররা জানান, এরইমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দও শেষ হয়েছে। কিন্তু কোন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা নেই, নেই গ্রামে গ্রামে ভোটের আমেজ। ভোটারদের ভাষ্যমতে কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরের ১৩টি পদের মধ্যে চেয়ারম্যানসহ ১০টিতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী নেই। একটি করে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ওইসব ওয়ার্ডে। যারা সবাই সরকারি দলের নেতা-কর্মী। সাধারণ ভোটরার বলছেন, ষড়যন্ত্র করে নির্বাচনের আনন্দ থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ভয়ভীতি দেখিয়ে, হুমকি দিয়ে তাদের প্রার্থী হতে দেয়া হয়নি। অনেকে প্রার্থী হতে চাওয়ায় বাড়িতে সন্ত্রাসী পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। যে কারণে কেউ প্রার্থী হতে পারেননি। সরকারি দলের নেতাদের দাবি জামাল ইউনিয়নে বিএনপি’র অবস্থা খুবই খারাপ। যে কারণে তারা প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়েছে। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে তৃতীয় ধাপে ৯টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সিমলা-রোকনপুর ও রায়গ্রাম ইউনিয়ন সিমানা নিয়ে জটিলতায় আপাতত নির্বাচন হচ্ছে না। এই নির্বাচনে ৯টি ইউনিয়নের প্রার্থীরা গত ৩১ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখন চলছে গ্রামে গ্রামে নির্বাচনি প্রচারণা। উপজেলার জামাল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোদাচ্ছের হোসেন চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে কেউ মনোনয়ন জমা দেননি। শুধু চেয়ারম্যান নয় ওই ইউনিয়নের ৯ জন মেম্বর এককপ্রার্থী রয়েছেন। তারা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার অপেক্ষায়। চেয়ারম্যান ছাড়াও যারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয় অর্জনের পথে রয়েছেন তারা হলেন, জামাল ইউনিযনের ২ নম্বর (কামারাইল, গুটিয়ানি ও দুধরাজপুর) ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ কর্মী মো. সাইফুল্লাহ, ৩ নম্বর (উত্তর-গোপালপুর, দক্ষিণ-গোপালপুর ও হরদেবপুর) ওয়ার্ডে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল মালেক মোল্লা, ৪ নম্বর (উল্লাহ ও জয়নগর) আওয়ামী লীগ কর্মী মো. ফসিয়ার রহমান, ৫ নম্বর (কাবিলপুর, খাঞ্জাপুর, বাগডাঙ্গ ও ভাটের-ভাটপাড়া) ওয়ার্ডে ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজ খাঁন, ৬ নম্বর (নাকোবাড়িয়া, পার-খালপকুলা ও বড়-ডাউটি) ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ কর্মী মো. মোবারক আলী তরফদার, ৭ নম্বর (বাসুদেবপুর ও হুদা-ডাউটি) ওয়ার্ডে মো. ইমদাদুল হক ও ৮ নম্বর (বড়-তালিয়ান) ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ কর্মী মো. শের আলী। এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে এককপ্রার্থী রয়েছেন ২ নম্বর ওয়ার্ডে শিউলী ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে নূর জাহান। কোলা বাজারে কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউপি নির্বাচনে অনেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু একটি পক্ষ তাদের নানাভাবে হুমকি দেওয়ায় তারা প্রার্থী হতে পারেননি। এমনকি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ আলী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলে তার বাড়িতে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছেন। মেম্বার পদে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন তাদেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়া মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি মনোনয়নপত্র কেনায় পরদিনই বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। এমনকি ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার পরও মনোনয়নপত্র জমা দিতে যেতে পারেননি। উপজেলা পরিষদে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে পায়নি বলে অভিযোগ করেন। ওই ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি মো. আক্কাচ আলী জানান, ভয় দেখিয়ে তাদের প্রার্থী হতে দেয়া হয়নি। তিনি নিজেও একজন প্রার্থী ছিলেন। তিনি আরো বলেন, এই নির্বাচনে আসলে আওয়ামী লীগের পরাজয় হয়েছে। এভাবে প্রতিদ্বন্দ্বি ছাড়া নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায় না। এ ব্যাপারে সদস্য পদে এককপ্রার্থী ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মফিজ খাঁন বলেন, এভাবে জয়লাভ না করে ভোট হলে ভালো হতো। কিন্তু তারা সমঝোতা করে নিয়েছেন। আরেক এককপ্রার্থী মো. মোবারক হোসেন তরফদার বলেন ভোট হলে গোলামাল হয়, পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়। যে কারণে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচিত খারাপ না। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান পদের এককপ্রার্থী মো. মোদাচ্ছের হোসেন জানান, কাউকে ভয় দেখানো হয়নি। বিএনপি সমর্থিতরা নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবে না ভেবে ভোটে আসেনি। তিনি আরো বলেন, বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে কারা গিয়েছিলেন তা তিনি জানেন না, তবে বিষয়টি শুনেছেন। তিনি নিজেও মোহাম্মদ আলী সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেন, মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে কথা হয়েছে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি তাকে সহযোগিতা করবেন। এই শর্তে মোহাম্মদ আলী এবার তাকে মোদাচ্ছের হোসেনকে সহযোগিতা করছেন। একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ভোট দিতে না পেরে হতাশ। ভোটাররা বলছেন, ভোটে প্রার্থী থাকবে, প্রচার-প্রচারণা চলবে। গ্রামের মোড়ে মোড়ে নির্বাচনী আড্ডা হবে, চায়ের দোকানে চলবে ভোটের আলোচনা। প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি যাবেন। তাদের সঙ্গে ভোটারদের পরিচিতি ঘটবে। এর কিছুই না থাকায় তারা হতাশ হয়েছেন। মনিরুল ইসলাম নামের একজন প্রবীণ ভোটার জানান, বাংলাদেশ হওয়ার পর অনেক ভোটে ভোট দিয়েছেন, কিন্তু গ্রাম পর্যায়ে এ জাতীয় ভোট কখনও দেখেননি। এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, জামাল ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী না থাকায় এককপ্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কি কারণে সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে ওঠেনি তা তো আমরা জানি না, কেও অভিযোগও করেনি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আ.লীগ ছাড়া কেউ জমা দিতে পারেননি মনোনয়নপত্র নির্বাচনের ১২ দিন আগেই বিজয়ী যারা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ