বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
জীবনে অনেক সময় মানুষকে বিপদ-আপদ ও দু:খ-কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়। আবার কখনও বা সুখ-শান্তি ও আরাম-আয়াসের মধ্যেও কালাতিপাত করতে হয়। এই পরস্পর বিরোধী দুইটি দিক ব্যতীত মানুষের দুনিয়াবী জিন্দিগী পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। এটাই খোদার চিরন্তন বিধান। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে এর ব্যাখ্যা দান করেছেন। সুখ-শান্তি ও দু:খ-কষ্ট দ্বারাই আল্লাহ তার বান্দাদেরকে আজমায়েশ করে থাকেন। সুখ আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য এবং দু:খ ধৈর্যশীলতা প্রদর্শনের জন্য প্রদান করা হয় এবং এতেই মানুষের পরীক্ষা হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘এবং নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে ভয় ও ক্ষুধা এবং ধন ও প্রাণ এবং ফল-শস্যের অভাবের কোন একটি দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং সেই সকল ধৈর্যশীলকে সুসংবাদ প্রদান করো যাদের উপর বিপদ নিপতিত হলে তারা বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তারই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৬)
মানুষের জীবনে দুর্ভোগ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতে যে কয়টি নিদর্শনের উল্লেখ করেছেন, সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে মানুষ অনুধাবন করতে পারবে যে, ধৈর্য সহকারে এই পরীক্ষার মোকাবেলা করার জন্য বিশেষত মুসলমানদেরকে সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দান করা হয়েছে। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তফসীরকারগণ বলেন যে, আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্য, ধর্মের মর্যাদা রক্ষা করা। ‘হে মানব সমাজ! তোমাদেরকে অনেক সময় অধর্মের সম্মুখীন হতে হবে এবং আত্মরক্ষার জন্য অনেক সময় তোমাদেরকে জেহাদ বা ধর্ম যুদ্ধে লিপ্ত হতে হবে, তাতে তোমরা বিচলিত হবে না। যুদ্ধ-বিগ্রহে অবশ্য জানমাল বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাতে তোমাদের নিরুৎসাহ হলে চলবে না। এটা তোমাদের ধর্মপ্রাণতার পরীক্ষা। যদি ধৈর্য সহকারে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পার তবে তোমরা বিজয় লাভ করতে পারবে।’ আল্লাহর এই শিক্ষাকে ভুলে যাওয়ার ফলেই আজ মুসলিম সমাজ তাদের উপর কোন বিপদ আপতিত হলে বিচলিত ও দিশেহারা হয়ে পড়ে।
দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, এখানকার জীবনে যেমন চিরাসুখ আসতে পারে না, তেমনি বিপদ আপদও চিরস্থায়ী হয়ে থাকতে পারে না। এটা খোদায়ী বিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী এবং এর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। মানুষের উত্থান-পতনের অনাবিল ইতিহাসই এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ। জগতের এই পট পরিবর্তনেরই মধ্যেই নিহিত রয়েছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর রহস্যরাজি ও অফুরন্ত নিদর্শন। আল্লাহর ভাষায়, ‘ওয়াতিলকাল আইয়্যামু নুদাবেলুহা বায়নান্নাস’, অর্থাৎ- মানুষের মধ্যে আমি এইভাবে কালের পট পরিবর্তন সাধন করে থাকি।
জগতের এই ধারাবাহিক পট-পরিবর্তনের মাধ্যমে মানব জীবনে সুখ-দু:খ এসে থাকে এবং মানুষকে এই পরীক্ষার ফলাফল হতে শিক্ষাও অর্জন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ (সা:) কে সম্বোধন করে বলেছেন; ‘আমি কি তোমার জন্য তোমার বক্ষ প্রসারিত করিনি? এবং তোমার থেকে তোমার সেই ভার অপসারিত করেছি। তোমার জন্য তোমার বাণীকে উন্নত করেছি। অতএব, নিশ্চয় দুরূহতার সঙ্গে স্বচ্ছন্দ্য। অতএব যখন মুক্ত হও, পরিশ্রম কর এবং তোমরা প্রতিপালকের প্রতি প্রেমাসক্ত হও।’ (সূরা: আল ইনশিরাহ)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।