রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ঘিরে শান্তির নগরী হয়ে উঠছে উত্তাল। বেশ কিছুদিন ধরে আওয়ামীলীগ বিএনপি পোষ্টার ধরে আওয়ামীলীগ বিএনপি পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার খুলে ফেলা ভাংচুর, ভয়ভীতি প্রদর্শন, নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর, মিথ্যে অভিযোগে বিএনপি কর্মীদের আটক করে কারাগারে পাঠানোসহ বেশ অভিযোগে রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা পড়ছিল। তারাও বলছিলেন অভিযোগ পেয়েছি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এর মাঝে গতকাল সকালে বিএনপির প্রচারনা সভায় বোমা হামলাকে নগরবাসী অশান্তির কালো মেঘ হিসাবে দেখছেন। বোমা হামলার খবর দ্রæত ছড়িয়ে পড়েছে নগরীর এপ্রান্ত হতে ও প্রান্ত পর্যন্ত। গতকাল টক অবদি নগরী হয়ে ওঠে ব্যাস্ততম এলাকায় প্রকাশ্যে বোমা হামলার বিষয়টি। আর এনিয়ে বড় দু’দল বিএনপি আওয়ামীলীগ দুষছেন একে অপরকে। আওয়ামীলীগ প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে পক্ষপাত মূলক আচরনের অভিযোগ এনেছেন।
বিএনপির প্রচারণার সময় বোমা হামলা
রাজশাহী সিটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর সাগরপাড়া বটতলা এলাকায় জেলা ছাত্রদলের আয়োজনে ধানের শীষের গণসংযোগের সময় বোমা হামলা করা হয়। এসময়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বাংলাভিশন টেলিভিশনের রাজশাহী প্রতিনিধি পরিতোষ চৌধুরী আদিত্য ও স্বপন কর্মকার নামে তিনজন আহত হন। আহতের রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পিন্টারের আঘাত দেখা যায়।
এবিষয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের অন্যতম উপদেষ্টা, সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিনু বলেন, রাজশাহী সিটি নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট এবং বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ভীতি প্রদর্শন করার জন্য চিন্থিত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, বোমা মেরে বা নির্যাতন করে বিএনপিকে কোন ভাবেই দমিয়ে রাখা যাবেনা। বিএনপি বীরের দল। তার কর্মীরা জীবনের ভয় পায়না। এই ঘটনার তিনি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। সেইসাথে সন্ত্রাসীদের ২৪ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, জেলা ছাত্রদলের গণসংযোগ উদ্বোধনী বক্তব্য দেওয়ার সময় হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। কোন কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই বাংলাভিশনের সাংবাদিক আদিত্য মাটিতে পড়ে যায়। সন্ত্রাসীদের ধরতে গেলে সন্ত্রীরা পিস্তল উঁচিয়ে পালিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ এই সিটি নির্বাচনে নিশ্চিত পারজয় জেনে নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে। এই ঘটনার তিনি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
মেয়র প্রার্থী বুলবুল বলেন, বিএনপি’র জনপ্রিয়তা ও বর্তমান অবস্থা দেখে আওয়ামী লীগ শঙ্কিত হয়ে এই বোমা হামলা শুরু করেছে। তারা পূর্ব থেকেই তাদের এই পরিকল্পনা ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বোমা কেন অন্য যেকোন হামলা মোকাবেলা করার ক্ষমতা রাখে বিএনপি। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সামনে এসে মোকাবেলা করার আহবান জানান। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার না করে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে, বাড়িতে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী ও পুলিশ হামলা করছে। নির্বাচনের দিন জোর করে ভোট কেন্দ্র দখল করে সীল মারার স্বপ্নে দেখছে। কিন্তু রাজশাহীবাসী এই সন্ত্রাসী দলের সকল সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করবে। তিনি নির্বাচন কমিশনের নিকট এই সকল কর্মকান্ডের হোতা ও নিদের্শদাতাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী লিটনের সংবাদ সম্মেলন
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার জোয়ার দেখে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নির্দেশে তাদের প্রার্থীর পথসভায় বোমা হামলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
দুপুরে রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে লিটন এ কথা বলেন। এর আগে সকালে নগরীর সাগরপাড়া মোড়ে বিএনপির এক পথসভায় হাতবোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বাংলাভাইয়ের মদদদাতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু রাজশাহী আসার পর থেকেই উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন। সোমবার রাতে রাজশাহীর পর্যটন মোটেলে থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে লন্ডনে থাকা বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে বেশ সময় ধরে কথা হয়। তারেকের কথা মতো সকালে দুলু এ কান্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন লিটন। এ সময় তিনি দুলুকে ফেতারেরও দাবি জানান।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এসএম কামাল হোসেন বলেন, রাজশাহীর নির্বাচনের মাঠ ভালো আছে। আচরণবিধি মেনে প্রচারে নেমেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। নগরে নৌকার জোয়ার উঠেছে। এ কারণে নির্বাচনের পরিবেশ বিনস্ট করতে পরিকল্পিতভাবে বিএনপি নেতা দুলুরা নিজেদের সভায় বোমা বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়ে এর দায় আওয়ামী লীগের কাঁধে চাপানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। বোয়ালিয়া থানার ওসি আমান উল্লাহ আমান জানান, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের জন্য তারা মাঠে কাজ শুরু করেছেন। সব ধরনের কৌশল তারা অবলম্বন করছেন। দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।