পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একদিকে বিশাল বনায়ন, অন্যদিকে দিগন্ত ছোয়া উঁচু উঁচু পাহাড়। এর পরতে পরতে অপূর্ব সবুজের সমারোহ। কোথাও কোথাও বয়ে চলেছে ঝর্ণাধারা। অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার নগরী আজ ধ্বংসের পথে। মিয়ানমার থেকে আশ্রয় রোহিঙ্গা শরণার্থীরা প্রতিদিন উজাড় করছে বনভূমি; ধ্বংস করছে পাহাড়, গাছপালা ও লতাগুল্ম। হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে টেকনাফের সাবরাংয়ে সরকার অনুমোদিত এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন। অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যত্রতত্র গড়ে তুলছে বসতি । ফলে কক্সবাজারের সামগ্রিক পরিবেশও বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ও সচেতন মহলের। তবে অবশেষে বোধোদয় হয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রান্নায় জ্বালানির অপচয় ঠেকাতে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। কাঠের পরিবর্তে বিকল্প জ্বালানী হিসেবে বিকল্প জ্বালানীর ব্যবস্থা ও প্রতি পরিবারের জন্য আলাদা রান্নার বদলে সমাজভিত্তিক রান্নাঘর নির্মাণেরও চিন্তা করেছে সরকার। যদিও সচেতন মহলের মতে এই উদ্দ্যোগ নিতে অনেক দেরী হয়ে গেল।
এদিকে, গত রোববার সচিবালয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘গাছ কেটে জ্বালানি তৈরি করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তা রান্নার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এটা নিরসনে আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য কমিউনিটি রান্নাঘর নির্মাণের চিন্তা করছি।’
মিয়ানমারের আরাকান থেকে এপর্যন্ত প্রায় ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। তাদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার আশ্রয় ক্যাম্প। পাহাড় ও বন কেটে স্থাপন করা হয়েছে তাদের জন্য নানা অবকাঠামো। ফলে ওই সময়ে উজাড় হয়েছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের প্রায় পাঁচ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে এই বিপুল বনভূমি উজাড় হওয়ায় ৩৯৭ কোটি ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৩৯৩ টাকার সমপরিমাণ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ভয়ানক পরিবেশগত ঝুঁকির মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে কক্সবাজারের বনাঞ্চল। বাংলাদেশে ‘অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের চিহ্নিতকরণ’ সংক্রান্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্যে অনুসন্ধানে জানা যায়, দৈনিক ৫ লাখ কেজি জ্বালানি কাঠ পুড়ছে রোহিঙ্গারা। নতুন আসা রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য সরকার বরাদ্দকৃত তিন হাজার একর জমির পরও তারা আরো আড়াই হাজার একর পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে। মাস দেড়েক আগেও পর্যটন এলাকা কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের দুপাশে আঁকাবাঁকা গাঢ় সবুজ পাহাড় ছিল। অবাধে বন-গাছপালা কেটে কালো পলিথিনের সারি সারি ঝুঁপড়ি ঘর তৈরি করে সবুজ পাহাড়ের পিঠে কালো রেখা এঁকে দিয়েছে রোহিঙ্গারা। যে জনপদ ছিল সবুজ পাহাড়ের মন মাতানো রূপের জন্য বিখ্যাত, তা নিমিষেই হয়ে গেছে গাছপালাহীন।
অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা নাগরিকদের চিহ্নিতকরণ কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে এ দেশের ভূমি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দ্রব্যমূল্যের গতিপ্রকৃতি এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি হুমকির মুখে পড়ছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। তবে নির্দিষ্ট ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে তারা যেন বন বিভাগের জমিতে আবাসস্থল করতে না পারে, সে দিকেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও উপজেলা প্রশাসন সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। তাদের সম্পর্কে সচেতন থাকতে সংশ্নিষ্ট সব দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
জানা গেছে, গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১১ লাখ ১৮ হাজার কে গত এ পর্যন্ত নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে। নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত এই রোহিঙ্গাদের বাসস্থান ও জ্বালানির সংস্থানে কার্যত বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ১১টি স্থানে পাহাড় ও বনভূমি উজাড় করে তাদের ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে। প্রথম দফায় ৬৯৫ একর ও পরে চার হাজার ১৫৬ একর মিলিয়ে দুই দফায় চার হাজার ৮৫১ একর বনভূমি উজাড় করে রোহিঙ্গা বসতি স্থাপন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত উজাড় হওয়া সংরক্ষিত বনভূমির মধ্যে রয়েছে কুতুপালংয়ের এক হাজার ১২১ কোটি ৩৩ লাখ ৭৩ হাজার ১৩৬ টাকা মূল্যের ৪০১ দশমিক ৪০ একর, জামতলী ও বাঘঘোনার ৫৩ কোটি ৪২ লাখ ৫১ হাজার ৪০৮ টাকার ৫১৬ একর, বালুখালীর ৯৫ কোটি চার লাখ ৫৩ হাজার ৭৯০ টাকার ৮৩৯ একর, তাজনিমা খোলার ৪১ কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার ৬৮২ টাকার ৪৫১ একর, উখিয়ার বালুখালী ঢালা ও ময়নারঘোনার ২৭ কোটি এক লাখ ৪৩ হাজার ৮৬৬ টাকার ৩১০ একর, শফিউলল্গাহ কাটা এলাকার ১৮ কোটি ৮৬ লাখ ৭৪ হাজার ৩৮১ টাকার ২০১ দশমিক ২০ একর, নয়াপাড়ার ২২ কোটি ৮ লাখ ১৫ হাজার ৪৮০ টাকার ২২৪ একর, টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের পুঁটিবুনিয়ার সাত কোটি ৫৩ লাখ ৯৯ হাজার ৭৩২ টাকার ৮৮ দশমিক ৬০ একর, কেরনতলী ও চাকমারকুল এলাকার ৪৯ হাজার ৩৪৪ টাকার ৭৯ দশমিক ৮০ একর এবং লেদারের তিন কোটি ৮২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৭৪ টাকার ৪৫ একর সংরক্ষিত বনভূমি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, বনভূমির এই ক্ষতি হয়তো সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে কিছুটা পূরণ করা যাবে। আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা যাতে টেকনাফ ও উখিয়া ছাড়া অন্য কোনো স্থানের পাহাড় ও পরিবেশের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছুদ্দোজা বলেন, আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গার সংখ্যা আরো বাড়তে পারে এ আশঙ্কায় পরে নতুন ক্যাম্প করাযায় মত আরও সাড়ে তিন হাজার একর জমির প্রয়োজন। এ জন্য জমির বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, যে পরিমাণ বনভূমি উজার হয়েছে, তা খুবই উদ্বেগের। তাদের মতে প্রতিদিন ৪টি বল খেলার মাঠ সমান বনভূমির কাঠ উজাড় করছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের জন্য বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করা না গেলে বন বিভাগের আরও ক্ষতি হবে। বিকল্প হিসেবে এলপিজি, কালো লাকড়ি বা একাধিক পরিবারের একসঙ্গে রান্নার ব্যবস্থা করার কথা জানান তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।