Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সরিষাবাড়ীতে রমরমা শিক্ষাবাণিজ্য

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) থেকে এম এ মান্নাান | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

সরিষাবাড়ীতে কোচিং প্রাইভেট বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানকার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর লেখাপড়ার মান নিম্নগামীতে চলে এসেছে। কোনো কোনো স্কুল ও মাদরাসায় ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি সংখ্যা একেবারে কম। গত এক সপ্তাহে উপজেলার ৪৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২২টি মাদরাসার মধ্যে প্রায় ২০টি প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হাজিরা খাতার সঙ্গে ক্লাসে উপস্থিতির কোনো মিল নেই। কোনো স্কুল ও মাদরাসায় ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি ৪০ শতাংশেরও কম। ছাত্র-ছাত্রীরা পাশবর্তী কোনো কোচিংয়ে সকাল থেকে বিকেল নাগাদ ক্লাস করছে। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকারের বিধি নিষেধ আছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া কোনো কোচিং সেন্টার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পযর্ন্ত কোনো ক্লাস করাতে পারবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকারের এসব বিধিনিষেধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরিষাবাড়ী প্রধান শহর, আরামনগর বাজার, বাউসি বাজার, পঞ্চাশী মৌলভী বাজার, সানাকৈর বাজার, ভাটারা বাজার ও পিংনা বাজারসহ অর্ধশতাধিক স্পটে কোচিংসেন্টার বা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে সেখানে চলছে রমরমা কোচিং ও প্রাইভেট শিক্ষা। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা শিক্ষা দিলেও সেখানকার পড়ালেখার মান কিছুটা হলেও কোচিংগুলো পরিচালিত হচ্ছে এসএসসি বা এইচএসসি পাস শিক্ষক-শিক্ষিকা দিয়ে। এখানকার পড়ালেখার মান নিম্নগামী হলেও অভিভাবকদের ফুঁসলিয়ে কৌশলে তাদের ছেলে-মেয়েদের কোচিংয়ে পড়াতে বাধ্য করছে একটি মহল। ফলে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি দিন দিন কমে যাচ্ছে। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিমলা বাজারের প্রায় অর্ধশত অভিভাবক জানান, শিমলা বাজারের বেশ কয়েকটি বাসায় কলেজ ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাদের প্রতিষ্ঠানের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সারাদিন বাসায় প্রাইভেট পড়ান। কথা হচ্ছিল সরিষাবাড়ীর প্রথম সারির কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে।
আরডিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম জানান, কিছু কিছু কোচিং ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান আগে গোপনে ক্লাস করত আর এখন প্রকাশ্যে ক্লাস করছে। আমার প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার মান উপজেলার সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি। এমন কথা বলেন, আরামনগর বাজার আরইউটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরুণ কুমার সাহা, সরিষাবাড়ী সরকারি পাইলট গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আব্দুর রউফ, সালেমা খাতুন বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ওয়াজেদা পারভীন, ডোয়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফ হোসেন, পঞ্চাশী রেজাউর হক কাবেরিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার এম এ মান্নান, দৌলতপুর ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আলহাজ আ. খালেকসহ প্রায় ৩০-৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান জানান, আমরা বারবার স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেছি এসব প্রাইভেট কোচিং বন্ধ করতে। তারাও উদ্যোগ নিয়েছিল কোচিং বন্ধ করার জন্য এবং এ ব্যাপারে চিঠিও দিয়েছিল।
কেন বা কি কারণে এসব কোচিং বা প্রাইভেট বন্ধ হচ্ছে না তা কে জানে। এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোজাম্মেল হক ও একাডেমি সুপারভাইজার এ টি এম রুহুল আমিন বেগ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম, এসিল্যান্ড ফিরোজ আল মামুনের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, কোচিংগুলো বন্ধ করার জন্য অতি শীঘ্র ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে বিশ্বস্থ এক সূত্রে জানা গেছে, আগামী এক মাসের মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন যদি কোচিং ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ না করে তবে সরিষাবাড়ীর ৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করে প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিক্ষাবাণিজ্য
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ