Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেন্ট্রাল হাসপাতালে ফের ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যু

ওরা চিকিৎসক না খুনি, ওরা কসাই-নিহত আরিয়ানের বাবা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

রাজধানীর গ্রিনরোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে ফের ভুল চিকিৎসায় ১৯ মাসের শিশু মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় হাসপাতালের কর্মকর্তাদের ওপর চড়াও ও ভাংচুর করেন বিক্ষুব্ধ স্বজনরা। নিহত শিশু আরিয়ানের স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসায় অবহেলা ও অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগে শিশু আরিয়ানের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে এ হাসপাতালে ভ’ল চিকিৎসায় আরো ৩জনের মৃত্যু হয়। কিন্তু কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় আরো ঘটলো মৃত্যুর ঘটনা।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১১জুলাই বুধবার থেকে জ্বর ছিল শিশু আরিয়ানের। জ্বর না কমায় পরদিন গত ১২ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে সেন্ট্রাল হাসপাতালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশু বিশেষজ্ঞ সুজিত কুমার রায়ের অধীনে পেডিয়াট্রিক ইউনিটের শিশু ওয়ার্ডে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। আরিয়ানের রক্ত পরীক্ষা করে দেখা যায়, প্লাটিলেটের উপস্থিতি ৭৬ হাজার। চিকিৎসা চলাকালীন সেটি দাঁড়ায় ১ লাখ ২২ হাজার। গত শনিবার সকাল থেকে শিশু আরিয়ানের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। দুপুরে অবস্থা আরও খারাপ হয়। ওই সময় চিকিৎসকদের ডাকাডাকি করলেও চিকিৎসকদের কেউ সাড়া দেননি। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রোববার বিকেল সাড়ে ৫টায় মারা যায় শিশুটি।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আরিয়ানের বাবা সাহাদাত হোসেনের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী সদরে। ব্যবসার কারণে রাজধানীর ধানমন্ডি থানাধীন ২৯/৩২ হাতিরপুলে স্ব-পরিবারে থাকেন তিনি। সাহাদাত হোসেন-আছিয়া খাতুন শিমু দম্পতির একমাত্র সন্তান আরিয়ানের জন্ম ২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর।
একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে অসনহায় বাবা সাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমার আরিয়ানের অবস্থা যখন খুব খারাপ তখন ডিউটি ডাক্তার ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত। আর যে ডাক্তারের অধীনে আরিয়ানকে ভর্তি করা হয় সেই ডাক্তার সুজিত কুমার রায়কেও বারবার ডেকে পাওয়া যায়নি। ওরা আমাদের আরিয়ানের কষ্ট বোঝেনি। ওরা চিকিৎসক না খুনি, ওরা কসাই।
ধানমন্ডির থানার ওসি আব্দুল লতিফ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। পরে আরিয়ানের পরিবার লাশ নিয়ে চলে যান। তারা অভিযোগ দিলে মামলা হবে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গতকাল সকালে সাহাদাত হোসেন আরো বলেন, ওরা (সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক) বলেছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গু হলে প্রচন্ড জ্বর আসে। তাপমাত্রা বেড়ে যায়। রক্তের প্লাটিলেট কমতে থাকবে। কিন্তু ভর্তির পর আরিয়ানের রক্তের প্লাটিলেট ছিল ৭৬ হাজার। পরে চিকিৎসা চলাকালীন ছিল ১ লাখ ২২ হাজার। ডাক্তারকে বিকেলে অনেক ডাকাডাকি করেছি। তিনি আসেননি। ডিউটি ডাক্তাররা বসে বসে মোবাইল ব্যবহার ও ফোনে কথা বলতে দেখা যায়। তাদেরও ডেকে পাওয়া যায়নি। রাতে আরিয়ানকে ২৫০ মিলিগ্রামের সাপজিটার দেয়া হয়। অল্প বয়সী শিশুকে কী করে ওরা ২৫০ এমজি ওষুধ দেয়! এরপর থেকে অস্বস্তি শুরু হয় আরিয়ানের। চোখমুখ কালো বর্ণ ধারণ করে। হাসপাতাল ডেঙ্গু বললেও যেভাবে ট্রিটমেন্ট দরকার ছিল তা হয়নি। অবস্থার অবনতির বিষয়টি বারবার জানানোর পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয়নি। বিকেল ৪টার দিকে আমার বাবুসোনা মারা যায়। এরপর ওরা নিউন্যাটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এনআইসিইউ) ভর্তি করে। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মৃত্যু ঘোষণা করে তারা।
সেন্ট্রাল হাসপাতালের উপ-পরিচালক (এডমিন) ডাক্তার মোজাহের হোসেন বলেন, আরিয়ানের মৃত্যু কর্তব্য অবহেলা কিংবা ভুল চিকিৎসায় হয়নি। ডাক্তাররা দেখেছে, অবস্থার অবনতি হওয়ায় এনআইসিইউতে নেয়া হয়েছে। সেখানেই রোববার বিকেল সাড়ে ৫টায় মারা যায় আরিয়ান। তিনি আরও বলেন, আরিয়ানের ডেঙ্গু জ্বর হয়েছিল। ক্লাসিকেল ডেঙ্গুর চিকিৎসায় যে ব্যবস্থা নেয়া দরকার, চিকিৎসকরা তা নিয়েছিলেন। ডেঙ্গু শক্ট সিন্ড্রমের কারণে মারা যায় আরিয়ান। উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ জুন ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের হাতাহাতি ঘটনাও ঘটে হয়। জন্ডিস রোগে শিশুটির চিকিৎসা চললেও ডেথ সার্টিফিকেটে বলা হয়, সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল। পাশাপাশি তার হার্টের একটি এক্সরে রিপোর্টও সংযুক্ত করা হয়। এছাড়া গত বছরের ১৮ মে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মারা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আফিয়া জাইন চৈতি। ওই ঘটনায় হাসপাতালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভাংচুর চালায়। পরে অভিযুক্ত তিন চিকিৎসককে আটক করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও চৈতিকে দেয়া হয় ক্যান্সারের চিকিৎসা। ডাক্তাররা বলেছিলেন, আফিয়ার লিউকেমিয়া (ব্লাড ক্যান্সার) হয়েছে। সেই অনুযায়ীই তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তবে মৃত্যুর আগে জানানো হয় ক্যান্সার নয়, ডেঙ্গু হয়েছিল। পরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে চিকিৎসকসহ সেন্ট্রাল হাসপাতালের ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিশু মৃত্যু

২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ