Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানুষ মেরে ইসলামকে বদনাম করে এরা কারা

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে এক প্রচারাভিযানে আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রায় দেড়শত মুসলমান প্রাণ হারালো। মারাত্মক আহত হয়েছে অন্তত দু’শতাধিক মানুষ। খায়বার পাখতোয়ানখা অঞ্চলে মিছিলে বোমা মেরে এতগুলো নিরীহ মানুষ হত্যার দায় স্বীকার করেছে আইএস।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, যে ব্যক্তি বিনা কারণে কাউকে হত্যা করবে সে অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। পবিত্র হাদীসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ বলেন, একটি নিরপরাধ মানুষকে যদি দুনিয়ার সবাই মিলেও হত্যা করে তথাপি আমি কাউকে ছাড় দিব না। প্রত্যেককেই এ হত্যার দায় নিতে হবে। -আল হাদীস। মহানবী (সা.) বলেছেন, কোনো অন্যায় হত্যায় যারাই অংশ নিবে প্রত্যেককে এ খুনের দায় নিতে হবে। এমনকি একজন যদি শুধু ‘উক্ব’ শব্দটি মুখে উচ্চারণ করে থাকে। (আরবীতে মারো অর্থ উক্বতুল, এখানে পুরো উক্বতুল শব্দটিও বলার প্রয়োজন নেই। শুধু ‘উক্ব’ বললেই খুনের দায় নিজের ঘাড়ে এসে যাবে। যে শব্দটির কোনো অর্থ হয় না। তবে খুনে আগ্রহ ও অংশগ্রহণ বোঝা যায়।) বর্তমানে ইসলামের দুশমনরা নানা কৌশলে হত্যা ও বোমা হামলা চালায়। সাথে সাথে এর দায় স্বীকার করে যে কোনো মুসলিম গোষ্ঠী। তদন্ত করে বের করা যায় না, এরা কেমন মুসলিম যারা সম্পূর্ণ নিরীহ মুসলমানদের এভাবে বোমা মেরে হত্যা করে। কোনো মুসলমান কি নিরপরাধ মানুষকে নির্বিচারে এভাবে হতাহত করতে পারে? ঘটনা যখন ঘটে তখন মিডিয়ায় নাম এসে যায় নানা জিহাদী গ্রুপের। আমাদের বোঝে আসে না কোনো জিহাদী গ্রুপ তাদের টার্গেট কে হত্যা না করে কোন যুক্তিতে মুসলমানদের মিছিলে বোমা মেরে শত শত লোক হত্যা করে। আমরা কী করে বিশ্বাস করবো যে, প্রকৃত ইসলামিক স্টেট, জিহাদী সংগঠন বা মুসলিম স্বাধীনতাকামী কোনো শক্তি স্কুলের নিষ্পাপ ফুলের মতো শিশুদের হত্যা করতে পারে। যদিও অনেকে যুক্তি দেখান, যখন পরাশক্তি বা তার দোসররা নিরপরাধ মুসলিম জনপদে, স্কুলে, মাদরাসায়, হাসপাতালে, বিয়ের অনুষ্ঠানে বোমা মেরে বৃদ্ধ নারী ও শিশুদের হত্যা করে তখন তাদের স্বজনদের কেমন লাগে তা কিছুটা যেন দুশমনরাও অনুভব করতে পারে সে জন্য মাঝেমধ্যে এসব হামলা চালানো হয়। এ যুক্তি পাল্টা যুক্তি চলতে থাকলে সমস্যা কোনোদিনই শেষ হবে না। মুসলমানদের পবিত্র জিহাদ ও উশৃঙ্খল সন্ত্রাসের মধ্যে সুস্পষ্ট ভেদ রেখা সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা রাখতে হবে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। কোনো বিবেচনায়ই আত্মঘাতী হামলা সমর্থনযোগ্য নয়। বিশেষ করে সেটি যখন সামরিক অঙ্গনে যুদ্ধের পর্যায়ে না হয়। বেসামরিক লোকজন, নারী-শিশু, রোগী, বৃদ্ধ, শান্তিকামী নাগরিক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি কোনো লোককে হত্যা যুদ্ধ চলাকালেও জায়েজ নয়। স্বাভাবিক অবস্থায় একটি শোভাযাত্রায় বা জনবহুল স্থানে বোমা হামলা করে শত শত লোক মেরে ফেলা কী করে জায়েজ হতে পারে। যদি অমুসলিম অক্ষশক্তি মুসলমানের বদনাম করার জন্য এমন অমানবিক অপরাধ করে থাকে তাহলে একটি রাষ্ট্রের উচিত এর গোড়া খুঁজে বের করা এবং এসব সন্ত্রাস শিকড়সহ উপড়ে ফেলা। পাকিস্তান কী তার অতীতের সন্ত্রাসী হামলাগুলোর নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করতে পেরেছে? এ কাজটি আজ খুব বেশি প্রয়োজন। কেননা, বিশ্বব্যাপী সব অমুসলিম ইদানিং তাদের স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি হারিয়ে মনে হয় যেন ক্ষেপে উঠেছে। বলা হচ্ছে, সব মুসলমান সন্ত্রাসী নয় তবে যত সন্ত্রাসী সব মুসলমান। কত মারাত্মক কথা। বিশ্বব্যাপী মুসলমানদেরই রক্ত ঝরছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে গত ২৫ বছরে বিশ্বজুড়ে শত্রুরা সোয়া কোটি মুসলমানকে হত্যা করেছে। আর সন্ত্রাসী হিসাবেও আখ্যায়িত হয়েছে তারাই। যারা মেরেছে তারা নয়। হাজার ঘটনা ঘটলেও পশ্চিমা জ্ঞানপাপী ও তাদের দোসররা এমনকি নিরপেক্ষতার শপথ নেওয়া অন্ধ মিডিয়া খ্রিস্টান সন্ত্রাসী, ইহুদী সন্ত্রাসী, বৌদ্ধ সন্ত্রাসী, হিন্দু সন্ত্রাসী চোখে দেখে না। সন্ত্রাসী বলতেই তারা ধরে নিয়েছে কেবল মজলুম মুসলমানেরাই এ উপাধী পাওয়ার যোগ্য। পৃথিবীতে আজ সত্য ও ন্যায়ের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে। এরপরও আমরা ইসলামের শান্তির বাণী বার বার উচ্চারণ করতে চাই। যদি কোনো মুসলমান সে যে নাম বা পরিচয়ই প্রকাশ করুক। হোক জিহাদী, হোক আইএস, হোক লষ্কর কোনো কাজ হবে না। তাকে ব্যাপকভাবে মানুষ হত্যার গোনাহর ভাগী হতেই হবে। নির্বিচারে যখন কোনো অমুসলিমকে এমনকি পশু-পাখিকে হত্যা বৈধ নয়, তখন কালেমা পড়ুয়া মুসলমান মেরে ফেলা কোন যুক্তিতে সমর্থনযোগ্য হতে পারে। পাকিস্তানের এই হত্যাকান্ড শরীয়তের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ। কোনো মুসলমানের পক্ষে এ কাজ করা আদৌ সম্ভব কি না তা ভাববার বিষয়। যদি কেউ বিভ্রান্ত হয়ে বা ধর্মের অপব্যাখ্যা শুনে এমন কাজ করে থাকে তাহলে এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। তাকে আল্লাহ কর্তৃক জিজ্ঞাসিত হতে হবে। কঠিন আযাব ভোগ করতে হবে। আর যদি কোনো অপশক্তি এ হত্যাকান্ড চালিয়ে এক গুলিতে দুই শিকার করে থাকে তাদেরও খুঁজে বের করে চরম শিক্ষা দেওয়া উচিত। একে তো তারা বিশ্বব্যাপী ইসলামের বদনাম করছে, আরেকদিকে সুযোগমত লাখো মুসলমান হত্যা করে পৈশাচিক আনন্দে মেতে উঠছে। প্রকৃত জিহাদ ছাড়া যাদের এ নৃশংসতা দমন করা সম্ভব নয়। মুসলিম জাতির নেতারা, তাদের দায়িত্বশীলরা যত তাড়াতাড়ি এ বাস্তবতাটি অনুধাবন করবেন ততই দ্রæত পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে থাকবে।



 

Show all comments
  • আবুল কাসেম ১৬ জুলাই, ২০১৮, ২:৪৬ এএম says : 1
    অনেক সুন্দর একটি লেখা । হুজুরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • ইসমাইল ইমন ১৬ জুলাই, ২০১৮, ২:৪৮ এএম says : 1
    মুসলিম জাতির নেতারা কবে যে এই বিষয়গুলো বুঝতে পারবে ?
    Total Reply(0) Reply
  • তারেক মাহমুদ ১৬ জুলাই, ২০১৮, ২:৪৯ এএম says : 1
    মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, যে ব্যক্তি বিনা কারণে কাউকে হত্যা করবে সে অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে।
    Total Reply(0) Reply
  • বুলবুল আহমেদ ১৬ জুলাই, ২০১৮, ২:৫১ এএম says : 1
    মুসলমানদের পবিত্র জিহাদ ও উশৃঙ্খল সন্ত্রাসের মধ্যে সুস্পষ্ট ভেদ রেখা সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা রাখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • করিম ১৬ জুলাই, ২০১৮, ১০:২৭ এএম says : 0
    গোপনে মুসলিম বিশ্বের শিকড উপডে পেলার জন্যই ইসরাইল-আমেরিকা আইএস সৃষ্টি করেছে ৷ তাদেরকে মিথ্যা লক্ষবস্তু বানিয়ে অতীতের ইসলামী বিশ্বের সব কীর্তি ও অবদানগুলিকে সমুলে ধ্বংস করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য৷ বাগদাদের হামলা সমূহ এটাই বলে ৷যাতে একবিংশ শতাব্দীর সম্ভাব্য বিশ্বব্যাপী ইসলামী বিপ্লবকে ঠেকিয়ে দেয়া যায়, এজন্যই তাদের এত আয়োজন ৷ কিন্তু ,,,,,,,,,,,, না ৷
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন