বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আমাদের দেশে ইসলামী নামের বিকৃতির প্রবণতা ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। আবার বিকৃত নাম সংশোধনের প্রয়োজনও অনেকে মনে করেন না। বিশেষভাবে এখানে আমরা মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা:)-এর একটি নামের বিকৃতির কথা উল্লেখ করতে চাই।
কোরআন শরিফে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর আগমন সম্পর্কে হজরত ঈসা (আ:)-এর সুসংবাদ বর্ণিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে; “আমার পরে যিনি (নবী) আসবেন তাঁর নাম ‘আহমাদ’।” হুজুর (সা:)-এর ‘মোহাম্মদ’ নামের পর ‘আহমাদ’ (সা:) নামটি সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। এর অর্থ সর্বাধিক প্রশংসার যোগ্য। বাংলা উচ্চারণে নামটি ‘আহমদ’ ব্যাপকভাবে প্রচলিত যা অশুদ্ধ নয়। কিন্তু আমদের দেশের মুসলমানদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন, নামটি বিকৃতভাবে ‘আহমেদ’ ব্যবহার করতে গর্ববোধ করে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর প্রতি এটিও এক প্রকারের অমর্যাদা ও অসম্মান প্রদর্শনের শামিল। ইসলামকে আধুনিকায়নের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে গিয়ে যারা মহানবী (সা:)-এর নাম ‘আহমদ’ কে বিকৃত করে ‘আহমেদ’ বানাতে দ্বিধা বোধ করে না এবং জেনে শুনে এ বিকৃত নাম ব্যবহার করে থাকেন অনুতাপ তাদের জন্য, আর যারা না জেনে ব্যবহার করেন, তারা সংশোধন করে সঠিক শুদ্ধ নাম ‘আহমদ’ ব্যবহার করবেন বলে আশা রাখি।
রাসূল প্রেমিকদের মধ্যে এমন লোকের অভাব নেই যারা ‘মোহাম্মদ’ (সা:) নামের প্রতি এতই আসক্ত যে, এ নামের বরকত লাভের জন্য ব্যাকুল থাকে। ‘আশ-শিফা’ নামক পুস্তকে হজরত ইমাম মালেক বর্ণনা করেন;
‘মক্কাবাসীদের নিকট এই কথা প্রসিদ্ধ যে, যে গৃহে মোহাম্মদ নামের কেউ থাকে সে ঘরাণায় বংশবিস্তার করে এবং তাদেরকে অধিক রিজিক দান করা হয়।’
একটি বর্ণনা অনুযায়ী, তিউনিশিয়ার একজন বাআমল আলেম ছিলেন আয়মান আবুল বারাকাত মোহাম্মদ। তার চৌদ্দ পুরুষ পর্যন্ত পরপর ‘মোহাম্মদ’ নাম ছিল। তিনি মদিনায় অনেক বছর অতিবাহিত করেন। যখন তিনি সেখান থেকে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করেন তখন রাসূূলুল্লাহকে (সা:) স্বপ্নে দেখেন। তিনি বলেন, ‘তুমি কেন আমাকে ছেড়ে যেতে চাও?’ এ কথা শুনে আয়মান আবুল বারাকাত মোহাম্মদ ফিরে আসেন এবং হিজরি ৭২৪ সালে মদিনায় ইন্তেকাল করেন।
বর্ণীত আছে যে, সমর খন্দের একটি শহরের নাম ‘মাকিরাদিন’। এখানে একটি কবরস্থানের নাম ‘তুরবাতুল মোহাম্মদিন’ অর্থাৎ এ কবরস্থানে শুধুমাত্র সে সকল মুর্দারকে দাফন করা হয়, যাদের নাম ‘মোহাম্মদ’। সুতরাং ৬ শত হিজরি পর্যন্ত এ কবরস্থানে চার শতাধিক লেখক, মুফতি এবং আলেমকে দাফন করা হয়েছিল।
আরো একটি ঘটনা- বিখ্যাত ‘হেদায়া’ গ্রন্থের লেখক শায়খুল ইসলাম বোরহানুদ্দীন মুরগীনানী ৫৯৩ হিজরি সালে ইন্তেকাল করেন, তাঁকেও এ কবরস্থানে দাফন করার অনুমতি দেয়া হয়নি, কেননা তার নামে ‘মোহাম্মদ’ এর পবিত্র নাম যুক্ত ছিল না। তাই তাকে নিকটস্থ বাইরের অপর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, যার নাম ‘মোহাম্মদ’, সে দোজখে প্রবেশ করবে না।
কাজী আয়াজ (রহ:) তার ‘আশ-শিফা’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন একটি ঘোষণা হবে, যার নামের সাথে মোহাম্মদ নাম যুক্ত রয়েছে, সে জান্নাতে চলে যাক।’
আবার এমন কিছু ঘটনাও রয়েছে যে, অমুসলিম হয়ে যারা মোহাম্মদ নাম রেখেছে, তাদের মুসলমানদের রোষানলে পড়তে হয়েছে এবং এ নামকে যারা উপহাস করেছে, বিক্ষুব্ধ মুসলমানদের নিকট তাদের নাজেহাল হতে হয়েছে। সুতরাং, রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর নামসমূহের যে কোনো একটির বিকৃতি, অবমাননা, অসম্মান ও অমর্যাদা প্রদর্শন এবং উপহাস ইত্যাদি কর্মের পরিণতি শুভ হতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।