Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারের আজ্ঞাবহ ইসি!

রফিক মুহাম্মদ/পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাম্প্রতিক কার্যক্রম ও কিছু বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা তাদের যোগ্যতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল বলছে ইসি সরকারের অজ্ঞাবহ। তাদের দ্বারা নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। ইসির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলের এমন অভিযোগ সেই শুরু থেকে। তবে খুলনা এবং গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগের পরও ইসির নিরবতায় তাদের সক্ষমতা নিয়ে দেশী বিদেশী পর্যবেক্ষক এবং বিশেষজ্ঞরাও এখন প্রশ্ন তুলছেন। ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোন সজ্ঞা নেই’ নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলামের এমন বক্তব্যে বিশেষজ্ঞরা বিষ্মিত ও হতবাক হয়েছেন। কমিশনারের এ বক্তব্যের পর অনেকে তার এ সাংবিধানিক পদে থাকার যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
খুলনা ও গাজীপুরে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি এবং অভিনব কায়দায় আইনশৃংখলাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করেছে পর্যবেক্ষকরা এমন অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল এই তিন সিটি করপোরেশন এলাকায় ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে গ্রেফতার না করার কথা বলেছিল। তবে গত বৃহস্পতিবার আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে বৈঠকের পর এ নির্দেশনা থেকে নির্বাচন কমিশন সরে আসে। আইনশৃংখলাবাহিনীর সাথে বৈঠকের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেন, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায়, সেই নির্দেশনাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেয়া হয়েছে। আশা করছি , সুষ্ঠুভাবে এই তিন সিটির নির্বাচন করা সম্ভব হবে। বাড়তি কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার হবে না।
সিইসির এই বক্তব্যে হতাশ হয়েছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা। এ ছাড়া বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও সিইসির এই বক্তব্যকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের অন্তরায় বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, সরকারের ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য এ নির্বাচন কমিশন কাজ করছে। তাদের দ্বারা নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তবে নির্বাচন কমিশনের যোগ্যতা ও দক্ষতার বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের কোন সন্দেহ নেই। তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন। তারা অত্যন্ত দক্ষতা ও যোগ্যতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। বিরোধী দলের অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করতে বিএনপির নেতারা অযৌক্তিক কথাবার্তা বলেন। সিটি নির্বাচনসহ সব নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়, সেজন্য সরকার কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করছে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউ) পরিচালক মো. আবদুল আলীম ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান কমিশনের কর্মকর্তাদের কার্যক্রম নিয়ে জনগনের মাধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এটা থেকে কমিশনকে বেড়িয়ে আসতে হবে। খুলনা বা গাজীপুরের মতো নির্বাচন কেউ প্রত্যাশা করেন না।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, আগামী নির্বাচন গুলোতে সরকার খুলনা-গাজীপুর মার্কা নতুন মডেলের ভোট সন্ত্রাসের নির্বাচন নির্বিঘœ করতেই ইসি তার আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে। সত্যিকার অর্থে এ নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ। সরকারের ইচ্ছা বাস্তাবায়নই তাদের লক্ষ। নির্বাচনের সময় সিটি করপোরেশন এলাকায় বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না এ অবস্থান থেকে সরকারের চাপের মুখে ইসি সরে এসেছে। বলা যায় ইসি সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে। তারা বলে, আইনশৃংখলাবাহিনীর সমর্থনে গাজীপুরে নিয়ন্ত্রিত ভোট হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হয়েছে। তাদের পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। কোন কোন কেন্দ্রে জোর করে ব্যালটে সিল মারা হয়েছে। এরকম আরও কিছু অনিয়মের কথা নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা তুলে ধরেন। ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের সংবাদ সম্মেলনের পর নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের সঠিক কোনো সংজ্ঞা নেই। কমিশন দেখে নির্বাচন আইনানুগ হয়েছে কি না? ইসি আইনের মধ্যে থাকতে চায়। আইনানুগ নির্বাচন হলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়। তার এ বক্তব্যের পর নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং বিশেষজ্ঞরা বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে যান। এমন মন্তব্যের পর নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক পদে তার থাকার তার যোগ্যতা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের সজ্ঞা যারা জানেন না তারা নির্বাচন কমিশনে থাকার যোগ্য কি না এ নিয়ে সবার মনে প্রশ্ন জাগে। খুলনার পরে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পুলিশ ও প্রশাসন প্রকাশ্যে সরকারের পক্ষে কাজ করেছে। এ সংস্কৃতি থেকে প্রশাসনকে বের হয়ে আসতে হবে। আমরা খুলনা ও গাজীপুরে মতো ভোট দেখতে চাই না। নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই তার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে।
দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দৃষ্টি এবার সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকে। ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের আগে এ তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইসি কতটা অবাধ ও সুষ্ঠু করতে পারে সে দিকে জাতি তাকিয়ে আছে। ###



 

Show all comments
  • Bashar Ahmed ১৪ জুলাই, ২০১৮, ৩:০১ এএম says : 0
    কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের বিকল্প নেই ।
    Total Reply(0) Reply
  • Niloy Rehman Chowdhury ১৪ জুলাই, ২০১৮, ৩:০২ এএম says : 0
    ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটি ছাপানোর জন্যে।
    Total Reply(0) Reply
  • কামরুল ১৪ জুলাই, ২০১৮, ৩:১৫ এএম says : 0
    ওরকম নির্বাচনের আয়োজন করার চেয়ে না করাই অনেক ভালো
    Total Reply(0) Reply
  • খালেদ ১৪ জুলাই, ২০১৮, ৩:১৭ এএম says : 0
    নির্বাচন কমিশনার সম্পর্কে মন্তব্য করতে আসলে আমার রুচিতে বাধে
    Total Reply(0) Reply
  • আজগর ১৪ জুলাই, ২০১৮, ৩:১৭ এএম says : 0
    নির্বাচন কমিশনারগণকে এই রিপোর্টগুলো কী কেউ দেখাতে পারেন ?
    Total Reply(0) Reply
  • পাবন রহমান ১৪ জুলাই, ২০১৮, ৩:১৮ এএম says : 0
    আমরা খুলনা ও গাজীপুরে মতো ভোট দেখতে চাই না।
    Total Reply(0) Reply
  • চম্পা ১৪ জুলাই, ২০১৮, ৩:১৮ এএম says : 0
    ইসি সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ