Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আইসিএল প্রতারণায় দিশেহারা কুমিল্লার হাজারো পরিবার

কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

কারো পেনশনের টাকা, কেউ ব্যাংকের জমানো টাকা উত্তোলন, কেউবা জমি বিক্রির টাকা আইডিয়েল কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে (আইসিএল) আমানত ও ডিপোজিট স্কিম প্রকল্পে বিনিয়োগ করে কুমিল্লার কয়েক হাজার পরিবার সর্বস্ব খুইয়ে এখন দিশেহারা। কুমিল্লা অঞ্চলে আইসিএলের ৬টি শাখায় এক লাখের বেশি গ্রাহকের দুইশো কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাসিন্দা আইসিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মূল উদ্যোক্তা শফিকুর রহমানের গ্রেফতার ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা আমানত এবং ডিপোজিটের প্রায় দুইশো কোটি টাকা ফেরতের দাবীতে কুমিল্লার প্রতারিত গ্রাহকরা রাজপথে ফুঁসে উঠেছে। ইতোমধ্যে কুমিল্লার বিনিয়োগকারিরা গ্রাহক সমন্বয় পরিষদ গড়ে তুলে গোটা জেলায় আন্দোলন শুরু করেছে।

সমবায়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইডিয়েল কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড (আইসিএল) ২০০১ সাল থেকে কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়, পদুয়ারবাজার এলাকাসহ চৌদ্দগ্রামে ৬টি শাখা অফিস খুলে দ্বিগুণ মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় একলাখ গ্রাহকের কাছ থেকে হজ আমানত, ডিপিএস, মাসিক মুনাফা, দ্বিগুণ বৃদ্ধি আমানত, আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসায়িক, দেনমোহর আমানত এবং লাখপতি ও কোটিপতি ডিপোজিট স্কিম প্রকল্পের নামে অর্থ সংগ্রহ শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকে মাত্র তিন বছরে রাজধানী ঢাকার পুরানা পল্টনের প্রধান অফিসসহ কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য জায়গার ৩৬টি শাখা অফিসের মাধ্যমে কয়েক লাখ লাখ গ্রাহকের ৪৪৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। তারমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের একটি বড় অংশ কুমিল্লার।
২০১৩ সালের মার্চ মাসে আইসিএল বন্ধ হওয়ার পর কুমিল্লার বিনিয়োগকারীরা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে প্রতারণা, চেক জালিয়াতি এবং অর্থ আত্মসাতের মামলা করে। অন্যদিকে দুদকও অনুসন্ধান এবং তদন্তে নামে। প্রায় ৫ মাস বিদেশে আত্মগোপনে থাকার পর ওই বছরের ২২ আগষ্ট কুমিল্লায় গ্রেফতার হোন আইসিএল প্রধান শফিকুর রহমান। বেশকিছুদিন পর জামিনে বের হোন শফিক। এরিমধ্যে শফিকের নামে বিভিন্ন গ্রাহকের দায়ের করা চেক প্রতারণাসহ অন্যান্য মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি রয়েছে। এদিকে গ্রাহকের দায়ের করা মামলায় সম্প্রতি গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে অন্তরীণ রয়েছেন আইসিএল প্রধান শফিকুর রহমানের স্ত্রী শামসুন নাহার মীনা।
আইসিএল গ্রুপের গ্রাহক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক ময়নামতি এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান ও সদস্য সচিব কাপ্তানবাজারের আজমির হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান কুমিল্লার লাখো লোকের সঙ্গে প্রতারণা করে কমপক্ষে দুইশো কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে শফিকুর রহমানের সহযোগীদের মধ্যে তার স্ত্রী কাজী শামসুন নাহার মীনা, শ্যালক কাজী ফখরুল ইসলাম, ভাগ্নে শেখ আহাম্মেদ ও শফিকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মোরশেদ জুয়েল জড়িত ছিল। শফিকের কারণে কুমিল্লার কয়েক হাজার পরিবার আজ নি:স্ব। আইসিএলে বিনিয়োগ করা কুমিল্লার সকল গ্রাহক ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শফিকের গ্রেফতার ও বিনিয়োগের অর্থ ফেরতের দাবীতে রাজপথে নেমেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রতারণা


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ