Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর স্বর্ণ ব্যবসায়ী হত্যা

গ্রেফতারকৃত বাপনের সঙ্গে পিন্টু ৭৯ বার কথা বলেছিল

স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৮, ৫:৫৬ পিএম

নারায়ণগঞ্জের কালীরবাজার স্বর্ণপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষ নিহতের ঘটনায় এখন শহরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তারই বন্ধু পিন্টু দেবনাথকে গ্রেফতারের পর চলছে জিজ্ঞাসাবাদ।
গ্রেফতারকৃত পিন্টু দেবনাথ কুমিল্লা জেলার মেঘনা থানার চন্দনপুরের মৃত সতীশ দেবনাথের ছেলে। সে শহরের আলমাপাড়া এলাকাতে রাশেদুল ইসলাম ঠান্ডুর চারতলা বাড়ির দোতলায় ভাড়া নিয়ে বাস করতেন তিনি।কালীরবাজার স্বর্ণপট্টি এলাকার কাজী ভবনের নিচতলায় মা স্বর্ণ শিল্পালয় নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দিন বলেন, প্রবীর ঘোষ নিখোঁজ হওয়ার পরপরই পুলিশ তাকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। ১৮ জুন রাতে পিন্টুর বাড়ির সামনের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, পিন্টুর পেছন পেছন হেঁটে যাচ্ছেন প্রবীর। ওই ফুটেজ দেখে পুলিশ একাধিকার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পিন্টুকে। কিন্তু বাইপাসের রোগী হওয়ায় তাকে তেমন চাপও দিতে পারছিলেন না তারা। ফলে এর আগে তিনবার তাকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তার চতুরতায় তেমন কোনো তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
প্রতিবার জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, ১৮ জুন রাতে তার কাছে এসে সাড়ে সাত হাজার টাকা চেয়েছে প্রবীর। পিন্টু তার কাছে দেড় হাজার টাকা আছে বলে জানালে টাকা না নিয়েই সে চলে যায়। তৃতীয়বার জিজ্ঞাসাবাদের তিনি জানিয়েছেন, ইসলাম হার্ট সেন্টার নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন পিন্টু। এ কারণে তার ওপর থেকে পুলিশও শেষ পর্যন্ত সন্দেহ সরিয়ে নেয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরফুদ্দিন আরও বলেন, নিখোঁজ প্রবীরের মোবাইল ফোন নম্বরটি আমরা অব্যাহতভাবে ট্র্যাকিং করছিলাম। ১৮ জুন রাতে ফোনটি নগরের আলমখান লেনের সামনে থেকে বন্ধ হয়ে যায়। এর পর সেটি সচল হয় ২১ জুন। ওইদিন প্রবীরের মোবাইল ও সিম ব্যবহার করে একটি খুদেবার্তা পাঠানো হয় প্রবীরের ছোট ভাই বিপ্লবের মোবাইলে। তাতে উল্লেখ করা হয়- এ ঘটনার সঙ্গে কালীরবাজারের রাঘববোয়ালরা জড়িত। প্রবীরকে ছাড়াতে দেড় কোটি টাকা নিয়ে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর যেতে বলা হয়। বাপনের এই খুদেবার্তাটি দেখালে পুলিশ বাপনের মোবাইলে ফিরতি বার্তা পাঠায়- কবে, কখন, কার কাছে টাকা পৌঁছাতে হবে। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে আর কোনো উত্তর না পাওয়ায় পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জানতে পারে, প্রবীরের মোবাইল ফোনটি কুমিল্লার সীমান্তবর্তী এলাকায় সচল করা হয়েছিল। এরপর ওখানে প্রবীরের স্বজনদের নিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ।
৭ জুলাই সন্ধ্যার পর হঠাৎ করেই প্রবীরের মোবাইল ফোনটি সচল হয়ে ওঠে আবার। ওটাতে অন্য সিম যুক্ত করে ব্যবহার করছে কেউ। পুলিশ আবারও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জানতে পারে এটি কালীরবাজার স্বর্ণপট্টি এলাকায় ব্যবহার হচ্ছে। ওই ফোনে যে সিমটি ব্যবহত হচ্ছে সেই নম্বরে পিন্টু ৭৯ বার কথা বলেছে এ সময়ের মধ্যে।
৮ জুলাই সকালে পুলিশ বাপন ভৌমিক নামে এক যুবককে আটক করে, নিখোঁজ প্রবীরের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে পুলিশ তার কাছ থেকে। মোবাইল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, সেটটি তাকে পিন্টু দিয়েছে। পরে তার তথ্যে পিন্টুকে ফের আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে পিন্টু পুলিশকে জানান, প্রবীর মোবাইল ফোনটি তার কাছে রেখে আগরতলা চলে গেছেন। এ কথা কাউকে না জানাতে তাকে দিব্যি দিয়ে যাওয়ায় এতদিন মুখ খোলেননি তিনি। কিন্তু মোবাইল সেট তার কাছে দিয়ে গেলে প্রবীরের সিম কীভাবে কুমিল্লার সীমান্ত অঞ্চলে সচল হলো এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি পিন্টু। এক পর্যায়ে পিন্টু ও বাপনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে প্রবীরকে হত্যা করে লাশ পিন্টু তার ভাড়া বাসার সেপটিক ট্যাঙ্কে টুকরা করে ফেলে দিয়েছে বলে জানান। সোমবার মধ্যরাতে পুলিশ পিন্টুকে নিয়ে তার ভাড়া বাসার সেপটিক ট্যাঙ্কে তল্লাশি চালায়।
১৮ জুন রাতেই পিন্টু তার ফ্ল্যাটে প্রবীরকে হত্যা করেছে বলে পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। প্রবীরকে হত্যা এবং লাশ সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেওয়ার পরপরই পিন্টু তার সহযোগী বাপনকে প্রবীরের মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দিয়ে কুমিল্লা পাঠিয়ে দেন। বাপন পিন্টুর কথামতো কুমিল্লা সীমান্ত অঞ্চলে গিয়ে ২১ জুন সেটি সচল করে একটি খুদেবার্তা পাঠান প্রবীরের ছোট ভাই বিপ্লবের কাছে। এরপর মোবাইল ফোন আবারও বন্ধ করে দিয়ে, সিম ফেলে দিয়ে, সেটা নিয়ে ফিরে আসেন নারায়ণগঞ্জে। কিন্তু পিন্টুর নির্দেশ ছিল মোবাইল ফোনটি যেন ফেলে আসা হয় কুমিল্লায়, যাতে পুলিশ মোবাইল ট্র্যাকিং করলে জানতে পারে প্রবীর কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে গেছে। তাছাড়া ঘটনাটিকে অপহরণ হিসেবে সাজাতে কুমিল্লা থেকে প্রবীরের মোবাইল ব্যবহার করে মুক্তিপণ চেয়ে খুদেবার্তাটিও পাঠিয়েছিল। এসব কারণে পুলিশকে বেশ বেকায়দায় পড়তে হয় ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বর্ণ ব্যবসায়ী হত্যা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ