বাড়িতেই ফাইনাল দেখবেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কাতারে
বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ দেখতে কাতারে যাচ্ছেন না আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। তিনি জানান, আজ
ফুটবল বিশ্বকাপ চলছে। রোমাঞ্চের সিড়ি বেয়ে রাশিয়ার আসরটি পৌঁছে গেছে সেমিফাইনালের চৌহদ্দিতে। তবুও চারিদিকে যেন শূণ্যতা আর শূন্যতা। শুরু থেকেই ফেভারিট পতনে রাশিয়া বিশ্বকাপ হারিয়েছে বৈচিত্র্য। খা খা স্টেডিয়াম চত্ত¡রগুলো কেবলই হাতড়ে বেড়াচ্ছে ‘কিছু একটা’র খোঁজে। সেই কিছু একটা যে ফুটবলের প্রাণ দুই লাতিন পরাশক্তি আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল তার আর বলে দিতে হয় না।
বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা লাখো ফুটবল সমর্থকদের সেই অন্তঃচিৎকার মাথা কুঁটে মরে রাশিয়ার দেয়ালে দেয়ালে। নিজের দেখা আগের বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতা থেকে জানি, সেমিফাইনাল ম্যাচের ২৪ ঘণ্টা আগ থেকেই স্টেডিয়াম চত্ত¡র গমগম করতে থাকে ফুটবল পিপাষুদের কোলাহলে। প্রিয় দলের পতাকা আর জার্সি গায়ে হোটেলের সামনে রাত জাগার চিত্রও চোখে পড়েছে বারংবার। তবে আয়োজনের দিকে থেকে চমক জাাগানো রাশিয়ার ভাগ্যে জুটলো শুধুই শূন্যতা।
আর্জেন্টিনার বিদায়টা হয়েছে শেষ ষোলর লড়াইয়ে। ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে মেসিদের বিদায়টা যেন কিছুটা অনুমেয়ই ছিল এবারের দলটির প্রতি সমর্থকদের প্রত্যাশার বিচারে। তবে বিশ্বকাপ জয়ের উদ্দেশ্যেই রাশিয়ায় পা রেখেছিল ব্রাজিলের তারকাভরা স্কোয়াড। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালেই আটকে যেতে হয় তাদের। দুর্দান্ত বেলজিয়ামের কাছে ২-১ গোলে হেরে খালি হাতেই দেশের বিমান ধরতে হয় নেইমার-জেসুসদের। ব্রাজিলের এমন বিদায়ে কপাল পুড়লো সমর্থকদেরও। প্রিয় দল ফাইনাল খেলবে বলেই সেমিফাইনাল ও ফাইনালের টিকিট কিনেছিলেন সাম্বার দেশের অনেকেই। কিন্তু ব্রাজিলের বিদায়ে সেই টিকিট বিক্রির জন্যই এখন ক্রেতা খুঁজতে হচ্ছে ব্রাজিলিয়ানদের!
তাদের মধ্যে থকে অগত্যা যারা সেমিফাইনাল দেখতে এসেছেন তাদের মুলন মুখগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো, কতটা কষ্ট আড়াল করতে হয়েছে। ব্রাজিলের এই বিদায়ে দলটির তারকা ফরোয়ার্ড নেইমারকেই দাঁড় করিয়েছেন রাশিয়ায় আসা দেশটির সমর্থকরা। তাদেরই একজন রিও ডি জেনিরো থেকে আসা ২৫ বছরের যুবক রিকার্ডো। নিজের অভিব্যক্তি জানাতে গিয়ে ক্ষোভও ঝররো তার কষ্ঠে, ‘আমরা হতাশ। যতটা ভারোবাসা নিয়ে আমরা রাশিয়া এসেছিলাম, তার মূল্যায়ন ফুটবলাররা দেননি। বিশেষকরে নেইমার। তার উপরই আমাদের স্বপ্ন জিইয়ে ছিল। ফুটবল মাঠে তো খেলা দেখাতেই পারেনি উল্টো তার আচরণে (অভিনয় প্রসঙ্গ টেনে) বিশ্বজুড়ে হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে ব্রাজিল।’
বাংলাদেশের সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে চোখে মুখে খেলে গেল খুশির ঝিলিক। জানালেন, তাদের দেশের সকলেই বাংলাদেশের সমর্থকদের ব্রাজিলপ্রীতির কথা জানেন, ‘আমরা জানি তোমাদের দেশের মানুষ কতটা ব্রাজিলকে ভালোবাসে। বিশ্বকাপ এলে বিশাল বিশাল পতাকায় ছেয়ে যায় তোমাদের দেশও।’ বাংলাদেশের ফুটবল সন্মন্ধে খুব একটা জানাশোনা না থাকলেও তামিম-মাশরাফি-সাকিবদের ঠিকই চেনেন রিকার্ডো। জানেন এদেশের ক্রিকেটের সাফল্য, গৌরবের কথাও, ‘বাংরাদেশ পুটবলে ভালো না হলেও ক্রিকেটে দারুণ এক দেশ হিসেবেই জানি। বিশ্বকাপের ইংল্যান্ডকে হারানোর ম্যাচটি আমি দেখেছিলাম। দারুন খেলেছে।’ বর্তমান দলটি বিশ্বের সকল দলকে হারানোর ক্ষমতা রাখে বলেই বিশ্বাস তার।
বিমানবন্দরের বাইরে নাতি আর মেয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে সাওপাওলোর গ্যাব্রিয়েল যোশেফ। হাতে সেমিফাইনাল আর ফাইনাল মিলিয়ে ছ-ছ’টা টিকিট। মস্কোভা নদীর পাশে বড় একটি বিয়ার পাবের সামনে দাঁড়িয়ে জনা পাঁচেক সাম্বা সুন্দরী। তাদের গালে আর বুকে এখনও হলুদ-সবুজ ব্রাজিল পতাকার রং। চোখের পানিতে সেগুলো ওঠেনি এখনও। ওদের হাতেও তো লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ঢোকার চারটি টিকিট। পাব থেকে কোনও ইংল্যান্ড বা ফ্রান্স অথবা বেলজিয়াম সমর্থক বেরোলেই টিকিটগুলো নিয়ে গিয়ে ওরা জানতে চাইছেন, ‘কিনবেন?’ বিক্রি হয়ে গেলেই ধরবেন রিয়োর বিমান।
কাজান থেকে মস্কো আসার পাঁচটা বিমানের একটাতেও টিকিট নেই। হাজারে হাজারে আসা তিতের দেশের সমর্থকরা যেতে চাইছেন মস্কোয়। সঙ্গে থাকা টিকিট বিক্রি করতে। ব্রাজিল ফাইনালে উঠবে ধরে নিয়েই সবাই টিকিট কেটেছিলেন। সেমিফাইনাল বা ফাইনালের। এখন আসল দামটাই পাচ্ছেন না। ক্রেতা কোথায়? তবে আসতে শুরু করেছেন কিছু ইংল্যান্ড সমর্থক। তাছাড়া এখানে আসা হ্যারি কেইনের দেশের সমর্থকরাও বিমানের টিকিট বদলে ফাইনালের টিকিট কিনছেন।
শুধু সমর্থকই কেন, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা থেকে আগত সাংবাদিকের সংখ্যাও কমে গেছে রাশিয়ায়। অনেকেই দলের সঙ্গে দেশের বিমানে চেপেছেন অনেকে থাকলেও ম্যাচ কাভারের চাইতে রাশিয়াদর্শনেই কাটাচ্ছেন ব্যস্ত সময়। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচে যেখানে মিডিয়া সেন্টারগুলোতে তাকতে উপচে পড়া ভিড়, সেখানে এখন চেয়ারগুলোও পড়ে থাকে শূন্য দৃষ্টি নিয়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।