পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এদেশে কোন জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছে দলটির শীর্ষ নেতারা। তারা বলেছেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হতে হলে অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে, নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে পুনরায় গঠন করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সেনা বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তবেই নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং এদেশে নির্বাচন হবে। অন্যথায় দেশে কোন নির্বাচন হবে না। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতের প্রতিবাদে এবং তাঁর মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে গতকাল (সোমবার) রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চের সামনে প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন দলটির নেতারা। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৭ ঘণ্টা ঢাকাসহ সারাদেশের সকল জেলা শহরে এই কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। কেন্দ্রীয়ভাবে গুলিস্থানের ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে পেশাজীবী নেতা গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাষ্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ৭ ঘণ্টা ধরে অনশন পালন করা বিএনপি মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের ফলের রস পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান।
অনশন কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে এই অনশন কর্মসূচিতে যে সমস্ত বক্তারা বক্তব্য রেখেছেন তাদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে এসেছে যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এদেশে কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে আজকে সুচিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না, তার ন্যূনতম যে প্রাপ্য সেই প্রাপ্যটুকু তাকে দেয়া হচ্ছে না। এই সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। দেশনেত্রীকে দূরে সরিয়ে রাখার উদ্দেশ্য একটাই। তাকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। উদ্দেশ্য একটাই বিএনপিকে নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা।
সকল রাজনৈতিক ও পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য শুধু নয়, বিএনপি নির্বাচন যাওয়ার জন্য নয়। আজকে এদেশের মুক্তির জন্য, ১৬ কোটি মানুষের মুক্তির জন্য, মানুষের আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবার জন্য, স্বৈরাচার সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
স্থায়ী কমিটির কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার একটাই ষড়যন্ত্র করছে। দেশনেত্রীকে ছাড়া, বিএনপিকে ছাড়া, ২০ দলকে ছাড়া তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির প্রহসন আবার পুনরাবৃত্তি করতে চায়। আমরা বলতে চাই, ২০১৪ সালের সেই ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের জনগণ আরেকবার বাস্তবায়ন হতে দেবে না। এই স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলনের বিকল্প নাই। তাই রাস্তায় আন্দোলন করেই গণতন্ত্রের মাতাকে মুক্ত করতে হবে, মুক্ত দেশনেত্রীকে নিয়েই আমরা নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করে নির্বাচনে যাবো।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, নিম্ন আদালত সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে যার জন্যে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, যত কৌশল করা হোক না কেনো এটা সম্ভবপর হবে না। তার কারণ একদিন না একদিন তাদের কৌশল ও ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়ে যাবে এবং কোনো এক পর্যায়ে গিয়ে তারা দেশনেত্রীকে জামিন না দিয়ে আর পারবে না। আমি আশাবাদী তিনি আমাদের মধ্যে মুক্ত হয়ে ফিরে আসবেন, খুব শিগগিরই আসবেন। সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, যদি আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হয় তার একমাত্র বিকল্প হলো রাজপথ। রাজি আছেন? হাত তো তুলেন সময়মত পাওয়া যায় না। এবার প্রস্তুতি নেন কর্মসূচি দেয়া হবে, সেই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। ইনশাল্লাহ আমরা জয়যুক্ত হবো।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, পৃথিবীর বহু রাষ্ট্র নায়কের এরকম জেল হয়েছে, আবার মুক্ত হয়েছে, জামিনও হয়েছে আবার অনেকে সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্ত হয়েছে। আজকে দেশনেত্রীকে তিলে তিলে হত্যার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বৈরশাসক এরশাদ হাত মিলিয়েছে হাসিনার সঙ্গে। সেও লজ্জ্বা পেয়ে গেছে বাপরে বাপ আমি তো বাইচা গেলাম আমার চেয়ে বড় স্বৈরশাসক বাংলাদেশে এখন হাজির হয়েছে। এটা আমার কথা নয় সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখলাম ছবি আছে খুব লজ্জ্বার সঙ্গে হাসিনাকে বলছেন ম্যাডাম আমি যা পারি নাই, আপনি তা কইরা দেখাই দিলেন। আমারে বাচাইয়া দিছেন।
অনশনে নেতাকর্মীদের ঢল: সকাল ৯টা থেকে বিএনপির অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হলেও। নির্ধারিত সময়ের আগেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা অনশন স্থলে এসে উপস্থিত হতে থাকেন। সেখানে তারা মাদুর, পেপার বিছিয়ে বসে পড়েন। সকাল ৯টায় আনুষ্ঠানিকভাবে অনশন কর্মসূচি শুরু হলে নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বক্তব্য দিতে শুরু করেন। অনশন কর্মসূচি থেকে খালেদা জিয়াকে ‘গণতন্ত্রের মা’ উল্লেখ করে তাঁর অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়। এ ছাড়া অনশন স্থানের পেছনে খালেদা জিয়ার ছবি ও তাঁর মুক্তির দাবি জানিয়ে ব্যানার টাঙানো হয়। সকাল সাড়ে ১১ টায় ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু কলে নেতাকর্মীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। তবে অনেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভেজা অবস্থাতেই অনশন স্থলে বসে থাকেন। কিছু সময় পর বৃষ্টি থেমে গেলে নেতাকর্মীরা আবারও অনশন স্থলে জড়ো হতে থাকেন। এদিকে সময় গড়ানোর সাথে সাথে ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে মহানগর নাট্যমঞ্চে প্রবেশ করতে থাকেন। ১২টার পর নাট্যমঞ্চের এলাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের ভিড়ে ভরে যায়।
এদিকে বিএনপির অনশন কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করতে এসেছিলেন যুক্তফ্রন্টের সদস্য সচিব নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি মহাসচিবসহ নেতৃবৃন্দের পাশে বসে কিছু সময় অবস্থান করেন। জোট নেতাদের মধ্যে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর প্রফেসর মজিবুর রহমান, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিশের মাওলানা সৈয়দ মজিবুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করীম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান খান, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিনিধি সাদা দলের আহবায়ক প্রফেসর ড. আখতার হোসেন খান, যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খান, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, সাধারণ সম্পাদক এম আব্দুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদ শহীদুল ইসলাম।
মহাসচিবের সভাপতিত্বে অনশনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, এজেডএম জাহিদ হোসেন। চেয়াপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, জয়নুল আবদিন ফারুক, কবির মুরাদ, আতাউর রহসান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আশারফউদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, শিরিন সুলতানা, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, আবদুস সালাম আজাদ, আমিরুল ইসলাম আলীম, কাজী আবুল বাশার, আহসানউল্লাহ হাসান, আফরোজা আব্বাস, মোরতাজুল করীম বাদরু, নুরুল ইসলাম নয়ন, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, সাদেক আহমেদ খান, হাফেজ এম এ মালেক, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন, জিয়া পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল্লাহিল মাসুদ, ছাত্রদল নেতা সোহানুর রহমান সোহান, আসাদুজ্জামান আসাদ, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, রাজিব আহসান চৌধুরী পাপ্পু, মিনহাজুল আবেদীন ভূইয়া।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।