পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের রাজনীতিতে দিল্লি বিতর্ক পিছু ছাড়ছেই না। সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে ‘সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ’। অথচ দেশের কিছু বুদ্ধিজীবী ও কিছু রাজনীতিকের ধারণা ‘বাংলাদেশের সকল ক্ষমতার উৎস দিল্লি। দিল্লির সাউথ ব্লকের ছায়া যাদের মাথার ওপর পড়ে তারাই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যায়’। যার কারণে ভোটের রাজনীতিতেও দেশের জনগণের মন জয় করার চেয়ে দিল্লির মন জয় করতে বেশি ঘাম ঝড়াচ্ছেন নেতারা। কবি জীবনানন্দ দাস লিখেছেন ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি/ তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর’। আমাদের নেতানেত্রীর মানসিকতাও যেন ‘দিল্লির সমর্থন পেলেছি/ নির্বাচনে বিজয়ী হতে জনগণের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই আর’।
এটা নির্বাচনের বছর। নির্বাচন ইস্যু উঠলেই দিল্লি এবং ভারত নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। প্রশ্ন হলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যাবে নাকি দিল্লির সাউথ ব্লক ক্যারিকেচা করে রাজনৈতিক দলকে শাসন ক্ষমতায় বসাবে? অবশ্য ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের আগে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং-এর ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক আছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচ টি ইমাম) দিল্লি সফর করেন। তিনি সেখানে থিঙ্কট্যাঙ্ক, নানা কিচিমের বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে বৈঠক করে রাজনৈতিক বক্তব্য দেন। সেই বক্তব্য নিয়ে চলছে বিতর্ক।
দেশের ইসলামী ধারার দল ও বামদলগুলো দিল্লিকে তোয়াক্কা করে না। কিন্তু মধ্যপন্থী বড় দলগুলোর ভারতমুখিতা নতুন কোনো ঘটনা নয়। অনেক আগেই ভারতের বিজেপি সরকারের নীতি নির্ধারকরা জানিয়ে দিয়েছে প্রতিবেশি দেশের নির্বাচন নিয়ে দিল্লি নাক গলাবে না। কিন্তু আমাদের দেশের নেতারা যেন দিল্লি তোষামোদীর প্রতিযোগিতায় নেমে গেছেন। ২০১৭ সালের অক্টোবরে ঢাকা সফর করে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাও মাধব। তাকে আমাদের তথাকথিত থিঙ্কট্যাঙ্ক বুদ্ধিজীবীরা ছবক দেন ‘ভারতের স্বার্থেই দিল্লির উচিত বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সমর্থন করা। বিএনপিকে ভোট দিলে সেভেন সিস্টার্সে আন্দোলন আবার শুরু হবে। ওই সময় বিজেপি নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আবার ক্ষমতায় আসা উচিত’। চলতি বছরের এপিল মাসের প্রথম সপ্তাহে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেসের সম্মেলনে যোগ দেন আওয়ামী লীগ নেত্রী দীপু মনিসহ তিন নেতা। একই মাসের শেষ দিকে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি নিয়ে দিল্লি সফর করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তারা ভারতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। এই দুই সফর নিয়ে ‘মিডিয়ায়’ তেমন বিতর্ক হয়নি। জুন মাসে দিল্লি সফর করেন বিএনপি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ তিনজন। তাদের দিল্লি সফর নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়। প্রশ্ন তোলা হয় বিএনপির নেতারা কোন মুখে দিল্লি যায়? বিএনপির নেতারা জানান, আগামী নির্বাচনে ভারত যাতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের (সুজাতা সিং ভূমিকার) মতো কোনো দলকে সমর্থন না করে’ তারা সেই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন দিল্লির অধিকর্তাদের। এ সময় বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশ বিএনপির নেতাদের দিল্লি দর্শন নিয়ে প্রশ্ন তোলে? ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অনেকেই এমন তর্ক-বিতর্ক করেন যে দিল্লিতে যাওয়ার যেন একমাত্র তাদের অধিকার রয়েছে; অন্য দলের নয়। ওই সব নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের কথা হলো ‘কোন মুখে বিএনপি দিল্লি যায়’। দলদাস কিছু মিডিয়া বিএনপি নেতাদের দিল্লি সফর বিতর্ক জিইয়ে রাখে কয়েক দিন। এই বিতর্ক থামতে না থামতে দিল্লি সফরে গিয়ে দেয়া এইচ টি ইমামের বক্তব্য নিয়ে শুরু হয় নতুন করে বিতর্ক। তিনি দিল্লিতে বিভিন্ন সেমিনারে বক্তৃতা করেন ও মিডিয়াকে বলেন, বিএনপির মতো দলকে ভারত কিছুতেই ভরসা করতে পারে না। বিবিসিসহ ভারতের অনেক মিডিয়ায় এইচ টি ইমামের বক্তব্য ফলাও করে প্রচার করা হয়। তিনি বিবিসি’র শুভজ্যোতি ঘোষকে দেয়া সাক্ষাৎকারে যা বলেছেন তার সংক্ষিপ্তসার হলো- ‘বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে ভারত কিছুতেই হস্তক্ষেপ করবে না। অতীতে যেভাবে আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘ভারতের তাঁবেদার’ বলে আক্রমণ করা হত সেই দিন আর নেই; কারণ দুই দেশের সম্পর্ক এখন সমানে-সমানে। জামায়াতের সঙ্গী বিএনপিকেও ভারত কিছুতেই ভরসা করবে না। বিএনপি এখন জামায়াতের একটা এক্সটেনশন মাত্র; এমন একটি দলকে ভারত কিছুতেই ভরসা করবে না। যত যা-ই বলুন না কেন, বিএনপির ঘাড়ে জামায়াতে ইসলামী এমনভাবে সওয়ার হয়েছে যে তারা আর তা থেকে বেরোতেই পারছে না। এখন তো বিএনপির নিজস্ব কর্মীও নেই, রাস্তাঘাটে যে সব কাজকর্ম তারা করেন- সে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডই হোক বা বিক্ষোভ প্রদর্শন, শিবির ছাড়া তো তাদের এক পা-ও চলে না! এই শিবির হল জামায়াতের ছাত্র ফ্রন্ট প্রশিক্ষিত ক্যাডার বাহিনী। আগে রগ কাটত, এখন গ্রেনেড ছোড়ে বোমা মারে ককটেল বানায়। এ রকম একটা সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে ভারতের সরকারের বা ক্ষমতাসীন দলের (বিজেপি) কিছু করার থাকবে বলে তো আমার মনে হয় না! এ রকম আত্মঘাতী পদক্ষেপ কেউ (নরেন্দ্র মোদী) নেবেন বলে তো আমার মনে হয় না। আরো অনেক কথাই বলেছেন এইচ টি ইমাম। তাঁর এ ধরনের বক্তব্যের জবাবে বিবিসি প্রতিক্রিয়া নেয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের। এইচ টি ইমামের বক্তব্যকে ‘সম্পূর্ণ অবান্তর’ অবিহিত করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ভারত বিএনপিকে পাত্তা দেবে না কিংবা নির্বাচনে বিএনপিকে বিশ্বাস করবে না, এই সব কথা উনি বলার কে? উনি কি ভারত সরকারের বা প্রশাসনের কেউ? যদি এটাই ভারত সরকারের নীতি হয়, তাহলে সেটা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলবে, ইনি সেখানে বলার কে? ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের ঠিক এক মাস আগে ঢাকায় এসে ভারতের তদানীন্তর পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং যেভাবে নির্বাচনে নাক গলিয়েছিলেন- এবারে তার পুনরাবৃত্তি হবে না বলেই মনে করি। এইচ টি ইমামের বেশির ভাগ কথাই আসলে সম্পূর্ণ অবান্তর। বিএনপি একটি মধ্যপন্থী, গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী শক্তি। এই দলের সুনির্দিষ্ট আদর্শ, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আছে। সেখানে বিএনপি আছে কি নেই, অন্য দলের একজন নেতা হয়ে তা উনি বলার কে? প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা হয়ে তার এ মন্তব্য করা আদৌ সমীচীন হয়নি। বিএনপি এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয়। তারা আমাদের এতটাই ভয় পায় যে বিএনপিকে সভা-সমাবেশ অবধি করতে দিতে চায় না। সেখানে তিনি যদি বলেন বিএনপি নেই, তাহলে তা তো সে কথার কোনও ভিত্তিই নেই।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যা বলেছেন তা তুলে ধরা হলো। পাঠক, আজিজুর রহমানের ‘অভিযান’ ছবির গানের কথা মনে আছে? গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা রুনা লায়লার কন্ঠে ‘যার নয়নে যার আগে ভাল/ যার দিলে যার দিল হারালো/ বয়স কালে দিওয়ানা হলে/ লোকের কথায় কি আসে যায় বলো’। দিল্লির কাছে কেউ ‘দিল’ হারিয়েছেন, কেউ ‘দিওয়ানা’ হয়েছেন। কবি বাংলার মুখ দেখায় আর কিছুই দেখতে চান না; অথচ আমাদের নেতারা?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।