পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’ (কামিনী রায়)। গ্লোবালাইজেশনের যুগে এই পংক্তি যুতসই উপমা। পৃথিবীর ছোট বড় উন্নত-অনুন্নত সব দেশই একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। এ জন্যই আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কটা হওয়া চাই বন্ধুত্বপূর্ণ। বিশ্ব রাজনীতির চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’ খুবই তৎপর্যপূর্ণ। দেশে দেশে সম্পর্ক এবং দেশের ভিতরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার সম্পর্ক এক জিনিস নয়। দেশের ভিতরে নেতায় নেতায় কথার যুদ্ধ, সস্তা বাহবা এবং জনপ্রিয়তার জন্য বাগাড়ম্বরপূর্ণ উক্তি চলে; কিন্তুু আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সেটা অচল। এখন তো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক অর্থনৈতিক সম্পর্কে রুপ লাভ করেছে। ‘নেব দেব’ নীতিতে বন্ধুরাষ্ট্র এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশ-সংস্থাগুলোর সঙ্গে শিষ্টাচার রক্ষা অপরিহার্য। প্রবাদে আছে ‘ক-থা’। মুখের কথার কারণে মানুষের ফাঁসি হয়; আবার কথার কারণে ফাঁসির আসামীও বেঁচে যায়’।
ভৌগলিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক কারণে বাংলাদেশ ছোট হলেও মর্যাদার দিক দিয়ে অবস্থান অনেক উপরে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে যে ভূমিকা রাখছে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের পক্ষ্যেও তা সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্বের বহু দেশে বাংলাদেশের শ্রমিকরা কাজ করছে। এ ছাড়াও নানাবিধ কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা ‘গণতন্ত্রের আয়নায়’ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি দেখতে চায়। সে জন্যই এই দেশের গণতন্ত্র, জনগণের ভোটের অধিকার সম্পর্কে বিশ্বসম্প্রদায়ের এতো সজাগদৃষ্টি। কয়েকদিন আগে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন। তাদের এই সফল ছিল হাই প্রোফাইল। আন্তর্জাতিক মহলের দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি এক সঙ্গে কোনো দেশ সফর করেছেন এমন নজীর তেমন নেই বললেই চলে। অ্যান্তোনিও গুতেরেস যা বলে গেছেন তা জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের কথা। আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন দূত রেনজি তিরিংক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে যা বলছেন সেটা ইইউ ভূক্ত ২৮ দেশের মর্মকথা। আবার ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বøুম বার্নিকাটের কথা মানেই ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি-বক্তব্য। প্রায়ই বিদেশী গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি ঢাকা সফরে আসছেন। ঢাকায় কর্মরত বিদেশী (বন্ধু রাষ্ট্র) কূটনীতিকরা প্রায়ই দেশের আর্থ সামজিক উন্নয়ন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলেন এবং সহায়তার চেস্টা করেন। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে সহায়তার প্রস্তাব দেন। কিন্তু কোনো ঘটনা ও বক্তব্যকে কি ওই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তির ‘ব্যাক্তিগত বক্তব্য’ বলার সুযোগ আছে? সউদী আরবের কোনো ধনকুব মুসলিম কোনো দেশে গিয়ে ব্যাক্তিগত দান করা আর কোনো দেশের প্রতিনিধি কথা বলা-অনুদান দেয়া এক জিনিস নয়।
কয়েকদিন আগে ঢাকায় কর্মরত আমেরিকার রাষ্ট্রদূতের একটি বক্তব্য নিয়ে হৈচৈ হলো। মিডিয়ার কল্যানে ওই বক্তব্য হয় টক অব দ্য কান্ট্রি। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী একাধিক মন্ত্রী ও নেতা প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূতের ওই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদ জানান। ‘তাঁর বক্তব্য দেয়া উচিত হয়নি’ এমনকি বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্র-নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে তাকে আমেরিকার নির্বাচনের দিকে তাকানোর’ পরামর্শ দেয়া হয়। আবার ওই বক্তব্যকে কূটনীতিকের নিজস্ব মন্তব্য ‘তকমা’ দেয়া হয়। পরবর্তীতে দেখা গেল ‘এ ধরণের বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া’ হলো। ওই প্রভাবশালী দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিলো, রাষ্ট্রদূত ঢাকায় যা বলেছেন তা ওই দেশের সরকারের বক্তব্য। তাহলে কি বলা যায় প্রভাবশালী মন্ত্রী ও নেতারা বাগাড়ম্বরপূর্ণ উক্তি বিশ্বের মোড়লখ্যাত দেশটির প্রশাসন ভালভাবে নিয়েছে? এ ধরণের কথাবার্তা সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যা হবে আমাদের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।
আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রশাসন যন্ত্র ও পররাষ্ট্রনীতিতে কি দেখি? ওই সব দেশে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে; নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা থাকে। বিদেশী দূতাবাস ও মিশন নিয়ম ও দিকনির্দেশনার বাইরে যায় না। কোনো ইস্যু নিয়ে বিদেশে কর্মরত মিশন প্রধান ও রাষ্ট্রদূত নিজেদের ইচ্ছামতো কোনো কথা বা মন্তব্য করেন না; করতে পারেন না। বাংলাদেশের কিছু কূটনীতিকের ক্ষেত্রে দেখা যায় রাজনৈতিক মনোভঙ্গির কারণে বিদেশী মিশনে কাজ করতে গিয়ে রাষ্ট্র, সরকার ও পছন্দের দলের স্বার্থকে একাকার করে ফেলেন। রাজনৈতিক দল ও ব্যাক্তি বিশেষকে খুশি করতে চাকরির আইন-কানুন ভঙ্গ করে সরকারি কর্মকর্তা দলবাজী করেন। কিছুদিন আগে দিল্লীতে কর্মরত বাংলাদেশের এক কূটনীতিকের ক্ষেত্রে এমন দেখা গেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের এমন কান্ড করার কোনো সুযোগ নেই। তারা সিস্টেমের বাইরে এক চুলও নড়েন না। ফলে ঢাকায় কর্মরত ‘বিদেশী কূটনীতিকের’ বক্তব্য নিয়ে যে বাগড়ম্বরপূর্ণ কথার যুদ্ধ হলো, হৈচৈ হলো তা দেশেই ক্ষতি করেছে। কখন কোন কথা বলতে হবে এবং কেনা কথার প্রেক্ষিতে কেমন বক্তব্য দিতে হয় সে কৌশল কূটনীতিকরা ভাল জানেন। এই কাজটি করে থাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত কূটনীতিকরা। বিশেষ করে প্রভাবশালী দেশ বিক্ষুব্ধ হয় এবং দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হতে পারে এমন মক্তব্য দেয়া উচিত নয়। কিন্তু সস্তা বাহবার জন্য সেটাই করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের এগিয়ে চলা, চলমান উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সাফল্য তাতে জনগণের ভূমিকাই মূখ্য। তবে উন্নয়নে নেপথ্যে উন্নত দেশগুলোর ভূমিকা কম নয়। প্রবাসী শ্রমিকের রেমিটেন্স এবং গার্মেন্টস থেকে রেমিটেন্স অবদানের পিছনে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোর ভূমিকা রয়েছে। দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হতে পারে বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে সে ধরনের বক্তব্য ওই সব বন্ধুরাষ্ট্র সম্পর্কে করা কারোই উচিত নয়। আমেরিকার সম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি, মুসলিম বিশ্বকে সন্ত্রাসী তকমা দেয়ার অপকর্ম, মানবাদিকারসহ নানা কর্মকান্ড নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। সন্ত্রাস বন্ধের নামে সারাবিশ্বে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়েছে। অস্ত্র বিক্রীর জন্য দেশে দেশে যুদ্ধের দামামা বাজিয়েছে। বিশ্ব মানবাধিকার রক্ষার শ্লোগান দিচ্ছে অথচ পর্দার আড়ালে মানবাধিকার লংঘন করছে। কিন্তু প্রভাবশালী দেশটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব অস্বীকার করার উপায় আছে কি?
মধ্যপ্রাচ্যে শ্রম বাজারে ধ্বস। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নেয়া কমিয়ে দিয়েছে। পাটের উৎপাদন অনেক আগেই কমে গেছে। এখন গার্মেন্টস পণ্য এবং প্রভাবশালী দেশগুলোতে শ্রমশক্তি অবলম্বন। তা ছাড়া বিশ্ব রাজনীতিতে দেশ-সংস্থার প্রভাবের বিষয়টিও বিবেচনায় আনা দরকার। অপ্রিয় হলেও সত্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর পৃথিবীতে দেশগুলো এখন সম্পর্কের ক্ষেত্রে আদর্শ-দর্শনের চেয়ে অর্থনীতিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। আমাদের অর্থনীতিতে প্রভাবশালী দেশগুলোর অবদান রয়েছে। কাজেই সস্তা বাহবার জন্য প্রভাবশালী দেশগুলো বিক্ষুব্ধ হয় বা রুষ্ট হয় কারোই এমন বাগড়াম্বরপূর্ণ উক্তি করা উচিত নয়। নেতাদের বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তবে মিডিয়ার কল্যানে সাময়িক বাহবা মেলে কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে দেশের ক্ষতি হয়। ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় কুসুমকুমারী দাশ লিখেছেন, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?’ ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।