Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দাবি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০১৮, ১২:১৩ এএম

কোট সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম নেতা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মুহাম্মদ রাশেদসহ গ্রেফতার গ্রেফতার হওয়ায় সংগঠনের সকলের মুক্তি দাবী করেছে রাশেদের পরিবার। একই সঙ্গে আন্দোলনকারী সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও আহবান জানিয়েছেন তারা।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবী জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- রাশেদের বাবা মো. নবাই বিশ্বাস, মা সালেহা বেগম, স্ত্রী রাবেয়া আলো ও বোন সোনিয়া প্রমুখ।
রাশেদের বাবা নাবাই বিশ্বাস বলেন, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার আদায়ের জন্য তার ছেলে একটি ভালো কাজে গিয়েছিলো। যেখানে রাষ্ট্রবিরোধী কোন কর্মকান্ড ছিলো না। অথচ বিনা অপরাধে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তার ছেলেসহ কয়েকজনকে আটক করে মিথ্যা মামলা দিয়ে রিমান্ডের নামে নির্যাতন করছে। শুধু তাই নয়, ছাত্রলীগের নামে তাদের পরিবারকে নিচ্ছিন্ন করে দেয়ার হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। আমরা গ্রেফতার হওয়া সকলের মুক্তিসহ সকল হুমকি থেকে রেহাই পেতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চাই।
তিনি বলেন, তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদাহ জেলার মোড়াইদাহ গ্রামে। তিনি একজন রাজমিস্ত্রী। স্ত্রী সালেহা অন্যের বাসায় কাজ করেন। নিজেদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে একমাত্র ছেলে রাশেদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লেখা-পড়া করাচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, রাশেদ গ্রেফতার হওয়ার আগের দিন ৩০ জুন ঝিনাইদাহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রানা দুজন ছেলে তার বাড়িতে পাঠান। তারা একটি কাজ আছে বলে রাশেদের বাবার মোবাইল নম্বর চাইতে পাঠান। এক পর্যায়ে রাশেদের বাবা ওই ছেলেদের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে নিজেই রানাকে ফোন করেন। রানা তাকে বলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সোহাগ আপনার সাথে কথা বলতে চান। কিছু সময় পরে সোহাগ পরিচয় দিয়ে একজন তাকে ফোন করে বলেন ‘আপনি কেমন সন্তান জন্ম দিয়েছেন। আপনার ছেলে তো একটা কুলাঙ্গার। তাকে কি গরু-ছাগল দিয়ে জন্ম দিয়েছে’। এরপর তিনি বলেন, ‘কোন বাবাই তার সন্তানকে কুলাঙ্গার হিসেবে জন্ম দেয় না। আমার ছেলেকে লেখা-পড়া করতে পাঠিয়েছি।’ তখন সোহাগ পরিচয়দানকারী ওই ব্যক্তি বলেন, আপনার ছেলেকে ওই পথ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। তা না হলে আপনার পুরো পরিবারকে গুম করে দেওয়া হবে। এরপর তিনি বিভিন্নভাবে গালিগালজ করতে থাকে। এর কিছু সময় পরে ঝিনাইদাহ থেকে ১০/১২টি মটরসাইকেলে করে ২০/২৫ জন তাদের বাড়ি আসেন। তারা রাশেদের বাবার কাধে হাত দিয়ে বলেন, ‘আপনার ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। না হলে এই ঘাড় (কাধ) থাকবে, কিন্তু এখানে মাথা থাকবে না।’ এরপর তারা চলে গেলে মোবাইলে বিষয়টি রাশেদকে জানানো হয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নবাই বিশ্বাস বলেন, স্বাধীনতার সময় তার বয়স ছিলো ৬ মাস। অথচ কেউ কেউ বলছেন, তিনি রাজাকার ছিলেন। নবাই বলেন, তিনি একজন দিনমুজুর রাজমিস্ত্রী, আর তার স্ত্রী (রাশেদের মা) অন্যের বাসায় কাজ করে সংসার চালান। তিনি দাবী করেন, কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। এমনকি তার ছেলেও কোন দলের সাথে জড়িত নয়।
রাশেদের স্ত্রী রাবেয়া আলো বলেন, এই ঘটনার পরদিন তার মিরপুরের বাসার সামনে সাদা পোষাকে পুলিশ ঘোরাঘুরি শুরু করে। দুপুরের দিকে রাশেদ তার স্ত্রীকে ফোন করে খাবার রেডি করতে বলেন। এরপর তিনি বাসায় আসলে সাদা পোষাকে থাকা লম্বা কয়েকজন লোক রাশেদকে ধরার চেষ্টা করে। তাদের দেখে রাশেদ দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তারা রাশেদকে ধরে টেনে-হিচড়ে প্রচন্ড মারধর করতে থাকে। এক পর্যায়ে রাশেদ পুলিশকে বলে, ‘আমি আপনাদের সাথে যাচ্ছি। আমাকে ছেড়ে দেন। আমার স্ত্রী কান্নাকাটি করছে।’ কিন্তু তারা তা শোনেননি। ঘটনার পর সারারাত ডিবি অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়েও রাশেদের সন্ধ্যান পাওয়া যায়নি। পরদিন শাহবাগ থানা পুলিশ আইসিটি মামলায় রাশেদকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করলেও তাকে দেখতে দেয়নি। এরপর কোর্টে নিয়ে গেলে সেখানেও পুলিশ আত্মীয়-স্বজন কাউকে রাশেদের কাছে যেতে দেয়নি। বর্তমানে রাশেদ কোথায় কি অবস্থ্য়া আছে সে ব্যপারে কেউ কোন তথ্য জানেন না বলে দাবী করেন রাবেয়া আলো।
তিনি আরো বলেন, এই ঘটনার পর তারা একটি মানবাধিকার সংস্থার কাছে যান। সেখানকার প্রধান জ্যোর্তিময় বড়–য়াসহ প্রায় ২০ আইনজীবী বিনা পয়সায় সাধারণ ছাত্রদের আইনি সহায়তা দিতে চেয়েছেন। কিন্তু পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার হওয়ার কারো তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে না বলে অভিযোগ করেছেন রাশেদের পরিবার।
রাশেদের মা সালেহা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, অন্যের বাড়িতে কাজ করে একমাত্র ছেলেকে-সেরা বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলাম। অথচ বিনা আপরাধে সেই ছেলের হাতে হাতকড়া পরানো হয়েছে। তিনি তার ছেলেসহ গ্রেফতার হওয়া সকলকে মুক্তি দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন করেন।
রাশেদের বাবার অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ইনকিলাবকে বলেন, ‘রাশেদের বাবার অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যাচার। আমি সরাসরি বা মোবাইলে কখনো রাশেদের বাবার সঙ্গে কথা বলিনি। এমনকি তাদের পরিবারের কারো মোবাাইল নম্বর আমার কাছে নেই।’
সোহাগ আরও বলেন, ‘রাশেদ একজন দেশবিরোধী, রাশেদের বাবাও একজন দেশ বিরোধী। নইতো তিনি আমার নামে এত বড় মিথ্যাচার করতে পারতেন না। আপনারা (সাংবাদিকরা) রাশেদের বাবার কাছ থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে যাচাই করে দেখতে পারেন। সেটি ছাত্রলীগের সোহাগ না অন্য কোন সোহাগ। তখন পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারবেন।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রেফতার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ