পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
থাইল্যান্ডে সপ্তাহ দুয়েক আগে গুহায় আটকে পড়া ফুটবল দলের কিশোরেরা চিঠি পাঠিয়েছে তাদের মা-বাবাকে। চিঠি লিখেছেন তাদের সঙ্গে আটকে পড়া কোচও। ২৫ বছরের কোচ এক্কাপল চান্তাওয়াং এই কিশোরদের অভিভাবকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেছেন। বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, কিশোরদের পাঠানো ছোট ছোট চিরকুটে তারা ফ্রায়েড চিকেনসহ বিভিন্ন খাবারের আবদার জুড়েছে। একটিতে লেখা ছিল, ‘চিন্তা কোরো না...আমরা সবাই সবল আছি।’ আরেকটিতে লেখা ছিল, ‘কোচ আমাদের বেশি বাড়ির কাজ দেয়নি।’
কোচ এক্কাপল চান্তাওয়াং আটকে পড়া কিশোদের অভিভাবকদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘প্রিয় অভিভাবকেরা, আপনাদের সন্তানেরা সবাই ভালো আছে। উদ্ধারকারী দল আমাদের বেশ সহায়তা করছে। আপনাদের কথা দিচ্ছি, আমি তাদের সর্বোচ্চ যতœ নেব। আপনাদের শুভকামনার জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনাদের কাছে অন্তর থেকে ক্ষমা চাইছি।’
এই গুহায় আটকে পড়া কিশোরদের সঙ্গে তাদের পরিবারের যোগাযোগ করিয়ে দিতে সেখানে ফোন লাইন স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। এরপর এই প্রথম পরিবারের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ হলো।
থাইল্যান্ডের দীর্ঘতম গুহার একটি থাম লুয়াং। গত ২৩ জুন বেড়াতে গিয়ে বন্যার কারণে সৃষ্ট প্লাবনে আটকা পড়ে ফুটবল দলটি। এর নয় দিন পর ২ জুলাই তাদের জীবিত থাকার খবর দেয় উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। দেশটিতে এখন বর্ষা মৌসুম চলছে। সাধারণত, মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত বর্ষা চলে। দেশটির নেভি সিল জানিয়েছে, গুহার প্রবেশমুখ থেকে কিশোরেরা চার কিলোমিটার ভেতরে আটকা পড়েছে। তারা যে চিত্র এঁকেছে, তাতে একটি অংশকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হচ্ছে। ওই অংশ বন্যার পানি, মাটি ও ধ্বংসস্তূপের জিনিসে ছেয়ে গেছে। গুহার প্রবেশমুখে পানির গভীরতা ৩৪ সেন্টিমিটারের মতো।
সেনা অঞ্চল-৩-এর ডেপুটি কমান্ডার মেজর জেনারেল চালংচাই চাইয়াকুম বলেছেন, আটকে পড়ারা যেখানে আছে, সেখানে যেতে ছয় ঘণ্টা আর ফিরতে পাঁচ ঘণ্টা লাগে।
তবে সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাইলেন ব্যাংককের দুর্যোগ মোকাবিলাবিষয়ক কর্মকর্তা খাও খিউপাকদি। তিনি বলেন, ‘পানি বের করে ফেলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ আর উদ্ধারকারী দলে থাকা মেজর জেনারেল বাঞ্চা দুরিয়াপান বলেন, কিশোরের দল কথাবার্তা বলছে, খাচ্ছে ও ঘুমাচ্ছে। শক্তি সঞ্চার করছে। তাদের উদ্ধার করা সহজ হবে।
গুহাটি যেখানে অবস্থিত, সেই চিয়াং রাইয়ের গভর্নর নারংসাক ওসোতানাক্রন গত বুধবার পর্যন্ত বলেছেন, তাদের উদ্ধারে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেওয়া হবে না। বরং যত দিন প্রয়োজন, তত দিন প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করা হবে। তবে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস শুনে তিনি সুর বদলেছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি এই উদ্ধার অভিযানকে পানির বিরুদ্ধে লড়াই বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া নিয়েই আমাদের যত ভাবনা। বৃষ্টি শুরুর আগে আমাদের হাতে কত সময় আছে, সে হিসাবই কষছি আমরা।’
বর্তমানে গুহায় অক্সিজেনের পরিমাণ কমে এসেছে। সাধারণত সেখানে ২১ শতাংশ অক্সিজেন থাকে, এখন তা কমে ১৫ শতাংশে চলে এসেছে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গুহায় বাতাস চলাচলের পথ স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে ডুবুরি, চিকিৎসাকর্মী, মনোবিদ ও থাই নেভি সিলের একটি দল আটকে পড়া ১৩ জনের সঙ্গে আছে। তারা প্রয়োজনীয় খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য জিনিস সঙ্গে নিয়ে গেছে। আটকে পড়াদের ডুবসাঁতারের মাধ্যমে, অন্য কোনো মুখ পাওয়া গেলে বা গর্ত খনন করে, নইলে বর্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে উদ্ধারের প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে এখন বর্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার পরিকল্পনাটি বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে সাঁতার না জানা কিশোরদের ডুবসাঁতারের মাধ্যমে উদ্ধার করার কাজটিও ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এদিকে কিশোর ফুটবল দলের সদস্যদের উদ্ধারের জন্য পাহাড়ে শতাধিক চিমনি বসিয়েছে উদ্ধারকর্মীরা। কিন্তু তাদের অবস্থান এখনো জানা যায়নি। উদ্ধারকারী দল নেতা নারংসাক ওসোতানাকন বলেন, কোনো কোনো চিমনি চার শ’ মিটার গভীরে পোঁতা হয়েছে। কিন্তু এখনো তাদের অবস্থান চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।
গত দু’সপ্তাহ ধরে থাইল্যান্ডের একটি গুহায় আটকা পড়ে আছে ১২ জন কিশোর ফুটবলার এবং তাদের কোচ। তাদেরকে কীভাবে উদ্ধার করা যেতে পারে সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা এখন নানা রকমের ধারণা নিয়ে আসছেন। এরকমই এক উদ্ধার অভিযানে গত বৃহস্পতিবার মারা গেছেন থাই নৌ-বাহিনীর সাবেক এক ডুবুরী। তার মতো এরকম আরো কয়েকশ’ বিশেষজ্ঞ ইতোমধ্যেই ওই ট্যাম লুয়াং গুহার কাছে গিয়ে পৌঁছেছেন উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করতে। এই নিখোঁজ ছেলেদের সন্ধান পাওয়ার খবর যখন প্রথম পাওয়া যায় ঠিক তখনই পুরো থাই জাতির মাথার উপর থেকে যেন সরে যায় কালো মেঘ। আটকাপড়া এই বাচ্চাদের প্রতি সংহতি জানাতে সেখানে ছুটে গেছে তাদের ক্লাসের বন্ধুরাও। সেখানে তারা আয়োজন করছে প্রার্থনার। তারা বলছে, ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রাখার কথা। কারণ তারা মনে করে, একমাত্র বিশ্বাসই শুধু পারে একটি পাহাড়কে নড়াতে।
পর্বতের যেখানে গুহা তার কয়েক মিটার দূরে অবস্থান নিয়ে বিশেষজ্ঞরা পরিকল্পনা করছেন কীভাবে তারা এর ভেতরে ঢুকে উদ্ধার কাজ চালাতে পারেন। কিন্তু থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে দিনের পর দিন বৃষ্টির কারণে গুহার ভেতরে তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। ডুবুরি থেকে শুরু করে সৈন্যরা ভাবছেন এই বাচ্চাদের উদ্ধার করার ক্ষেত্রে তারা কী ভূমিকা রাখতে পারেন।
এই খবর সংগ্রহ করতে সেখানে ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছেন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের বহু সাংবাদিক। আছেন থাই নৌবাহিনীর কর্মকর্তারাও। কিশোর ফুটবলাররা যে গুহার ভেতরে বেঁচে আছে এবং ভালো আছে এরকম একটি ভিডিও তারা তাদের ফেসবুক পাতায় পোস্ট করার পর মানুষের মনে কিছুটা হলেও স্বস্তি তৈরি হয়েছে।
২৭ বছর বয়সী এক তরুণ ইওসাটা, যিনি পূর্ব লন্ডনে বেড়ে উঠেছেন, কিন্তু পরে ফিরে গেছেন থাইল্যান্ডে, স্থানীয় পুলিশের জন্যে দোভাষী হিসেবে কাজ করার জন্যে সেখানে ছুটে গেছেন। তিনি বলেন, ‘বাচ্চারা বেঁচে আছে-এটা দেখার পর লোকজনের মানসিক অবস্থাই বদলে গেছে। যারা খুব কঠোর পরিশ্রম করছিলো তাদের মুখে এখন হাসি দেখতে পাচ্ছি। তাদেরকে উদ্ধারে সবাই একসাথে কাজ করছে। এটা একটা দারুণ ব্যাপার।
সংবাদ সম্মেলনে থাই কর্মকর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, এখনই কোন অভিযান চালানো হচ্ছে না। কারণ গুহার ভেতরে প্রচুর পানি। সেখানে মেডিকেল টিমের লোকদের সাথে নিয়ে উদ্ধারকাজের মহড়া চালাচ্ছে সৈন্যরা। কিন্তু এই অভিযান সত্যি সত্যি কখন শুরু হবে সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। সেকারণে বহু স্বেচ্ছাসেবী সেখানে উদ্ধারের জন্যে যারা কাজ করছেন তাদেরকে সহযোগিতা করছেন। এরকমই একজন ব্যাংককে আমেরিকান স্কুলের পরিচালক লেকানো ডিডিয়াসেরিন উদ্ধার-কর্মীদের জন্যে খাবার দাবার নিয়ে গেছেন। তিনি বলছেন, ‘বাচ্চারা বেঁচে আছে - এটা আমার জীবনের একটা শ্রেষ্ঠ খবর। মনে হচ্ছে আমার স্বপ্নটা যেন সত্য হয়েছে। আমার বিশ্বাস তাদেরকে উদ্ধার করা যাবে। কারণ এটা করতে যে ধরনের লোকজন লাগবে সেরকম ডাক্তারসহ সবাই এখানে আছেন’।
গুহার ভেতর থেকে পানি বাইরে পাম্প করে ফেলা হচ্ছে। এই কাজটা করতে হচ্ছে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছে, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে তারা বাচ্চাদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে চায় না। গুহার কাছে জড়ো হওয়া সবাই এখন সেই চূড়ান্ত মুহূর্তটির জন্যে অপেক্ষা করছে যে কখন তাদের প্রার্থনা পূরণ হবে। সূত্র : বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।