বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ওয়ামা খালাকতুল জিন্না ওয়াল ইন্সা ইল্লা লিয়া’বুদুন। অর্থাৎ, আমি মানব ও জিন জাতিকে শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি, এর বাইরে আর কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি। সাধারণত মানুষ ইবাদতের অর্থকে খুবই সীমিত করে তোলে। তারা নির্দিষ্ট ইবাদত বা উপাসনাকেই মানবসৃষ্টির উদ্দেশ্য বলে ধরে নেয়। এরফলে তারা পার্থিব জীবনকে অস্বীকার করে। এদের খÐিত বুঝ তাদের দুনিয়াত্যাগী বৈরাগ্যবাদের দিকে ঠেলে দেয়। যদিও মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলে দিয়েছেন, ওয়ালা তানসা নাসীবাকা মিনাদ দুনিয়া। অর্থ্যাৎ, ইহজীবনে তোমার অংশটুকু তুমি ভুলে যেওনা। তিনি নিজেই মানুষকে এ দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন, রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া কিনা আজাবান্নার। অর্থাৎ, হে মালিক, আপনি আমাদের দুনিয়ার কল্যাণ ও আখিরাতের কল্যাণ দান করুন এবং আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন।
এখানে যা বুঝতে হবে সেটি হল নির্ধারিত ইবাদত তো ইবাদতই। যা অবশ্যই পালন করতে হবে। কিন্তু ঈমানদারের জীবনের বাকি সব কাজও ইবাদতের অন্তর্ভূক্ত যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাসূল সা. এর শেখানো পথে করা হয়। সুন্নত অনুযায়ী ২৪ ঘন্টার প্রতিটি কাজ করা হলে মুসলমানের গোটা জীবনটিই ইবাদতে পরিণত হতে পারে। উদাহরণত বলা যায়, আপনি নামাজ পড়ছেন তাহলে আপনি আল্লাহর ইবাদত করছেন। আপনি রোজা রাখছেন আল্লাহর ইবাদত করছেন। এমনই আপনি জাকাত দিচ্ছেন, হজ-ওমরা করছেন, তিলাওয়াত ও জিকির করছেন, দান সাদাকাহ করছেন আপনি আল্লাহর ইবাদত করছেন। কিন্তু আপনি যখন হালাল জীবিকার জন্য মেধা, শক্তি ও সময় ব্যয় করছেন তখন আপনি কী করছেন? আপনি যখন মানুষ ও মানবতার সেবায় কোন কাজ করছেন, আপনি তখন কী করছেন? ইসলাম বলে, এ সময়ও আপনি মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদতই করছেন।
ঈমান এবং নির্ধারিত ইবাদতগুলো ইসলামের মূলভিত্তি। এসব ছাড়া মানুষ ঈমানদার ও ইবাদত গোযার হতে পারে না। কিন্তু শুধু এগুলোই ইবাদত নয় বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইবাদতের শাখা বিস্তৃত করে রাখা হয়েছে। যেমন, আপনি যখন অন্য কাউকে সাহায্য করছেন তখনও আপনি আল্লাহর ইবাদতই করছেন। অভাবিকে খাবার দিচ্ছেন, বাবা-মার আনুগত্য, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা ও তাদের প্রতি সর্বোচ্চ সদাচরণ যখন করছেন, যখন আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা ও এর পরিচর্যা করছেন, তাদের হক আদায় করছেন, আপনি মানুষের অধিকার আদায় করে দিচ্ছেন, আপনি খারাপ কথাবার্তা পরনিন্দা অশ্লীলতা বাজে কথা থেকে নিজের জবানকে রক্ষা করছেন, পরিবার পরিজনের সাথে ন¤্র আচরণ করছেন, আপনি আপনার ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে রাখছেন, ক্রয়-বিক্রয়ে আপনি উদার ও মহত্বের পরিচয় দিচ্ছেন, আপনি ঘুষ খাচ্ছেন না, একাকী অবস্থায়ও আপনি আল্লাহকে সর্বদ্রষ্টা বিশ্বাস করে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকছেন, আপনি গোনাহর কাজ থেকে নিজের চোখ কান ও সকল অংগকে বাঁচিয়ে রাখছেন, যখন আপনি সকল কাজে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার চর্চা করছেন, আপনি সর্বক্ষেত্রে নীতি আদর্শ, বিনয় ও ভদ্রতার উপর অটল রয়েছেন, সবসময় সত্য কথা বলেছেন, আপনি যখন নিজের শরীর, পোষাক, বাড়ি, কর্মস্থল, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখছেন, আপনি যখন আপনার কর্ম ও জীবিকায় দায়িত্ববান, সৎ ও বিশ্বস্ত থাকছেন, তখনও আপনি মহান ইবাদতেই লেগে আছেন। যে জন্য আল্লাহ আপনাকে সৃষ্টি করেছেন।
এমনিভাবে আপনার বিশ্রাম, ঘুম, ব্যায়াম, ওজু, গোসল, অবসর, বিনোদন, সবই ইবাদত যদি সেসব সুন্নত অনুযায়ী হয়। এমনকি একে অপরের সাথে হাসিমুখে কথা বলাও ইসলামে ইবাদত বলে গণ্য। এসব আচরণ ও পেশাগত ইবাদতের পক্ষে অসংখ্য আয়াত ও হাদীস রয়েছে। ক্ষুদ্র এ লেখায় এসব আনা যাবে না তবে আলোচনায় সব উদ্ধৃতি সন্নিবেশিত করা গেলে এটি একটি নানা বর্ণের ফুলে ফুলে সজ্জিত পুষ্প কাননে পরিণত হত। জীবন যত বড়, ইবাদতের বৃত্তও তত বড়। ইবাদতকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। জীবনের দাবিকে অস্বীকার করে ইসলাম পালন করা যায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।