Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

তিন সিটি ও জাতীয় নির্বাচন খুলনা মডেল হতে পারে

সংবাদ সম্মেলনে সুজন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

খুলনা মডেলে এবং গাজীপুরে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হয়েছে বলে দাবি করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। আসন্ন তিন সিটির ভোট ও জাতীয় নির্বাচনেও একই পদ্ধতি ব্যবহার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংগঠনটি। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার আগে থেকে প্রস্তুুতি নিয়ে প্রভাব খাটিয়ে মারামারি ছাড়া জয়ী হয়েছে এবং সেই পদ্ধতি গাজীপুরে ব্যবহার করে সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেমন জনপ্রতিনিধি পেলাম শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সুজন গাজীপুরের ভোটের এ চিত্র তুলে ধরে। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবীদের মতামতের ভিত্তিতে সুজন জানিয়েছে, খুলনার মতো গাজীপুরেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় প্রধান প্রতিপক্ষকে মাঠছাড়া করা হয়েছে। বিএনপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের দিন সাময়িকভাবে কেন্দ্র দখল করে জালভোট প্রদান, ভোটকেন্দ্রে এবং এর আশেপাশে ভীতিকর ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি এবং ভোট প্রদানে বাধা দানের ঘটনা ঘটেছে। খুলনার মতো গাজীপুরের নির্বাচনেও বহু অনিয়ম ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হয়রানি ও বাড়াবাড়ির অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, যা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন ছিল নির্বিকার। সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেছেন, আসন্ন তিন সিটির ভোট ও জাতীয় নির্বাচনেও একই পদ্ধতি ব্যবহার করা হতে পারে।
সাবেক তত্ত¡বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা হাফিজ বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন জেনুইন নির্বাচন হয়নি। নির্বাচনে প্রভাব সৃষ্টি করতে আগে মারামারি-কাটাকাটি হত, এ নির্বাচনে প্রভাব সৃষ্টি করতে গিয়ে তা হয়নি। তবে সেখানে আগে থেকে প্রশাসনকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল, বিএনপিকে এমনভাবে রাখা হয়েছিল, যে কারণে এমন কোনো পরিস্থিতি করার মত অবস্থা ছিল না। সেখানে (খুলনা) সরকার সাকসেসফুল, সেখানে তারা এক্সপেরিমেন্ট করেছে, এখানে (গাজীপুর) এসে ব্যবহার করা হয়েছে।
আগামী নির্বাচনগুলোতেও একই পদ্ধতি ব্যবহারের আশঙ্কা প্রকাশ করে সুজন সভাপতি বলেন, এখন ভয় হচ্ছে, বাকি তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও এমন করবে জাতীয় নির্বাচনেও হতে পারে। এম হাফিজ উদ্দিন মনে করেন, নির্বাচন কমিশন সাহসের সাথে দায়িত্ব পালন করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা। এর জন্য যা যা করার তা তাদের করতে হবে। তাদের আইন-বিধি করার ক্ষমতা দেওয়া আছে। সেগুলো তারা ব্যবহার করতে পারে। নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে না। আমরা বলেছিলাম, জাতীয় নির্বাচনের সময় সংসদ বাতিল করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের জবাব, সেটা নাকি তাদের আওতাভুক্ত না। তারা তো দায়িত্ব পালন করল না, তারা ব্যর্থ হচ্ছে। নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে সংসদ বাতিলের দাবি জানিয়ে এম হাফিজ উদ্দিন খান ইসির উদ্দেশে বলেন, সরকার কী করবে সেটা তো পরের কথা, আগে তো পার্লামেন্ট বাতিলের কথা আপনাদের বলতে হবে।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যে রকম নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন দায়বদ্ধ এবং আমরা যে রকম নির্বাচনের আশা করি, সেই রকম নির্বাচন গাজীপুরে হয়নি, খুলনাতেও হয়নি। তিনি বলেন, এর জন্য আমরা কতগুলো স্পষ্ট সুপারিশ করেছিলাম। এখন বলটা নির্বাচন কমিশনের হাতে, নির্বাচন কমিশন যদি বলটা সঠিকভাবে করে, তাহলে আগামী দিনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পাব।
সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়, নির্বাচনের আগেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা এলাকা ছাড়া করা হয়। মাঠ ফাঁকা হওয়ায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রকটভাবে নৈতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়। এ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হয়েছে। তিনি বলেন,নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার না করার বিষয়ে হাই কোর্টের আদেশ এবং ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার না করতে ইসি নির্দেশনা জারি করলেও অনেককে গ্রেপ্তারের অভিযোগ উঠে, এমনকি নির্বাচনের দিনেও। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় উচ্চ শিক্ষিতদের নির্বাচিত হওয়ার হার কিছুটা বেশি, যা ইতিবাচক। তবে অন্যান্য নির্বাচনের মতো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নব-নির্বাচিত ৭১ জন জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ৪৭ জনই ব্যবসায়ী। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সুজনের লিখিত পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। এসময় সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হামিদা হোসেন উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ