Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শীর্ষ বাজার এখন জার্মানি

পোশাক রফতানিতে বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশ

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৬ এএম

রফতানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি নিয়েই অর্থবছর শেষ করেছে বাংলাদেশ। সদ্য শেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ (৩৬ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে ৩০ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে। সার্বিক রফতানি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে পাঁচ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়েছে। তবে তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই দশমিক ২২ শতাংশ কম। মূলত তৈরি পোশাক রফতানির উপর ভর করেই এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মোট রফতানির ৮৩ দশমিক পাঁচ শতাংশই এসেছে এই খাত থেকে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় নয় শতাংশ; লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে দেড় শতাংশের বেশি। তৈরি পোশাক রফতানিতে বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো থেকে। এরমধ্যে একক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে ইইউর দেশ জার্মানি। তবে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে শীর্ষ রফতানির বাজার হয়ে উঠছে জার্মানি।
জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এ সময় দেশটিতে রফতানি করা হয়েছে ৫৮৪ কোটি ৬৬ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পণ্য, অর্থাৎ মোট রফতানির ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। একই সময়ে জার্মানি থেকে এসেছে মোট আয়ের ১৫ দশমিক ৭২ শতাংশ। এ হিসেবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি আয়ের উৎস হিসেবে জার্মানির চেয়ে এগিয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, একক প্রধান বাজার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি অবস্থান করছে জার্মানি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১০ মাসে রফতানি আয় হয়েছে তিন হাজার ৪০ কোটি ৬৪ লাখ ১০ হাজার ডলার। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ৪৯২ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার, অর্থাৎ মোট আয়ের ১৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। একই সময়ে জার্মানি থেকে এসেছে ৪৯১ কোটি ৮০ লাখ ছয় হাজার ডলার বা মোট রফতানির ১৬ দশমিক এক শতাংশ। একই অবস্থা বজায় রয়েছে গত ১১ মাসের রফতানি আয়েও। এ সময়ে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ অর্থাৎ ৫৪৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৭ হাজার ১০ ডলার আয় হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। একই সময়ে জার্মানি থেকে এসেছে ৫৪১ কোটি ৮৮ লাখ ৬১ হাজার ২৮২ ডলার বা মোট রফতানির ১৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
এছাড়া বাংলাদেশের রফতানি আয়ের অন্য বাজারগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, জাপান, চীন, বেলজিয়াম, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও রাশিয়া। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট রফতানি আয়ে এ দেশগুলোর অবদান রয়েছে যথাক্রমে ১০ দশমিক ২৫, ৫ দশমিক ৪৩, ৫ দশমিক ৮১, ৪ দশমিক ২০, ৩ দশমিক ১০, ৩, ২ দশমিক ৯১, ২ দশমিক ৭৩, ২ দশমিক ৬৪, ১ দশমিক ৮১, ১ দশমিক ৮৯, ১ দশমিক ৯৩ ও ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
প্রধান প্রধান পণ্যসামগ্রী রফতানির পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আটটি পণ্য থেকে আয় হয়েছে মোট রফতানি আয়ের ৯৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এ সময় প্রধান রফতানি পণ্য ওভেন পোশাক, নিটওয়্যার, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ও প্রকৌশল দ্রব্যাদি থেকে আয় হয়েছে তিন হাজার ২৯১ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
বর্তমানে তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। প্রথম অবস্থানে রয়েছে চীন। দেশ দুটির রফতানি ব্যবধান ১১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
টাকার বিপরীতে ডলারের দরবৃদ্ধি রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে অবদান রাখছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে চার শতাংশের বেশি। ছয় মাসে বেড়েছে তিন শতাংশ। পোশাক রপ্তানি বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, কারখানাগুলোর উন্নয়নে মালিকরা অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কষ্টও করেছেন। ৮০ শতাংশের বেশি কারখানা উন্নত কর্মপরিবেশের (কমপ্লায়েন্স) আওতায় চলে এসেছে। এতে বায়াররাও খুশি।
ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পোশাক রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাবের ঝুঁকি দেখছেন কি না-এ প্রশ্নের জবাবে ফারুক হাসান বলেন, না, তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। আমরা ইতোমধ্যে বায়ারদের বুঝিয়েছি যে, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে, তা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। তাতে তারা আশ্বস্ত হয়েছেন। আগের মতোই পোশাকের অর্ডার দিচ্ছেন।
গতকাল বুধবার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রফতানি আয়ের হালনাগাদে দেখা যায়, গেলো ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন দেশে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ ডলার আয় করেছে। এটা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে পাঁচ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই দশমিক ২২ শতাংশ কম। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তৈরি পোশাক রফতানি থেকে তিন হাজার ৬১ কোটি ৪৭ (৩০ দশমিক ৬১ বিলিয়ন) ডলারের আয় হয়েছে, যা মোট রফতানি ৮৩ দশমিক পাঁচ শতাংশ। এর মধ্যে নিটওয়্যার খাতের পণ্য রফতানিতে এক হাজার ৫১৯ কোটি ডলার এবং উভেন পোশাক রফতানিতে এক হাজার ৫৪৩ কোটি ডলার আয় হয়েছে। নিট খাতে রফতানিতে বেড়েছে ১০ দশমিক চার শতাংশ। আর উভেনে বেড়েছে সাত দশমিক ১৮ শতাংশ।
অন্যান্য খাতে রফতানিতে গত অর্থবছরে কৃষি পণ্য রফতানি ২২ শতাংশ বাড়লেও চা রফতানি কমেছে ৩৮ শতাংশ। শাকসবজিতে রফতানি কমেছে তিহন দশমিক ৭৬ শতাংশ। অন্য কৃষি পণ্যের মধ্যে তামাক রফতানি বেড়েছে ২১ শতাংশ। শুকনো খাদ্য রফতানি বেড়েছে ৮৪ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি ছয় দশমিক ৫৬ শতাংশ বেড়েছে। ওষুধ রফতানি বেড়েছে ১৬ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল পণ্য রফতানি বেড়েছে ১০ শতাংশ।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে হিমায়িত খাদ্য রফতানি কমেছে তিন দশমিক ৪২ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি ১২ শতাংশ কমেছে। প্লাস্টিক পণ্য রফতানি কমেছে ১৬ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রফতানি আয়ে মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল তিন হাজার ৭৫০ কোটি (৩৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন) ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ পণ্য রফতানি থেকে তিন হাজার ৪৬৫ কোটি ৫৯ লাখ (৩৪ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করে, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে এক দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক তিন শতাংশ।
রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মূর্শেদী বলেন, রফতানি খাতকে টেকসই করতে বৈচিত্র্যকরণের বিকল্প নেই। আর এজন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। অবকাঠামো থেকে শুরু করে দক্ষ কর্মী সবক্ষেত্রেই সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এছাড়া রফতানি খাতকে আরো সুসংহত করতে নীতি ও নগদ প্রণোদনা বাড়াতে হবে। সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে পোশাক খাতের নির্ভরশীলতা কাটিয়ে বহুমুখী শিল্পায়ন নিশ্চিত করাই আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ বলেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পোশাক

২৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ