Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কওমী স্বীকৃতি আইন আলেমদের অন্ধকারে রেখেই পাস হচ্ছে?

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

দীর্ঘ বিরতির পর আবারও আলোচনায় উঠেছে কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাকমিল (দাওরা) কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্সের সমমান দিতে প্রস্তাবিত আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে- গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশের পর স্বীকৃতি বিষয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। গত ৩০ জুন কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রওনক মাহমুদ (মাদরাসা) গণমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে আইনের খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার তথ্যপ্রদান করেন। আইনের খসড়াটি দ্রæততম সময়ে মন্ত্রী পরিষদে পাঠানো হবে বলেও দাবি করেন তিনি। সরকারের এ বিবৃতি কওমি শিক্ষা সনদের বাস্তবায়নের ব্যাপারে আশার আলো দেখা দিলেও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে কওমি শিক্ষা ধারার নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ থেকে অভিভাবক ও সাধারণ ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে। কারণ, হাইয়াতুল উলয়া তথা আলেম-উলামাকে এক প্রকার অন্ধকারে রেখেই চূড়ান্ত করা হয়েছে কওমি শিক্ষা সনদের এই আইনের খসড়া। চূড়ান্ত আইনে কি আছে এবং কবে নাগাদ তা সংসদে উঠবে তা জানেন না ৫ বোর্ড ও বেফাকসহ হাইয়াতুল উলয়ার প্রতিনিধিত্বকারী আলেমগণ। বিশেষ করে কওমী ঘরানার মধ্যে আধুনিক শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিত ও শিক্ষানীতি, পাঠ্যক্রম, কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ কওমী আলেমগণও এ বিষয়ে অবহিত নন। এমনকি খসড়া আইন চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টিও সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কাওকে জানান নি বলে দাবি করেছেন তারা। গতকাল একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে জানা যায়, অনলাইন পত্রিকাটি এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে জাতীয় দীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ-এর মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ আলী নতুন কিছু জানেন না বলে দাবি করেন এবং বেফাকের সহকারী মহাসচিব তিনি মুফতি নুরুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য আমার জানা নেই। মুফতি নুরুল আমিনকে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আপনি তার সঙ্গে কথা বলুন। মুফতি নুরুল আমিন কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়ন তরান্বিতকরণ এবং সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির অন্যতম সদস্য।
খসড়া আইনে কোন কোন বিষয় রাখা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তারাও আমাদের কিছু জানান নি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। কিন্তু তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইনের খসড়া চূড়ান্ত করার আগেই আমাদের দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু গণমাধ্যমে এসেছে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে অথচ আমরা তা দেখি নি। আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। তবে যেহেতু তারা কথা দিয়েছেন, আমাদের না দেখিয়ে এবং মতামত না নিয়ে আইন চূড়ান্ত করবে না তাই আশা করি চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে আমরা দেখার এবং মতামত দেয়ার সুযোগ পাবো।’- এমনটিই বলেন মুফতি নুরুল আমিন।
বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুসও ‘চূড়ান্ত খসড়া আইন’ বিষয়ে কিছু জানেন না এবং সরকার তাদের আনুষ্ঠিকভাবে কিছু জানান নি বলে স্বীকার করেন। তবে সরকারের সঙ্গে লিয়াজোঁ কমিটির নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি । অন্যদিকে হাইয়াতুল উলয়াকে মতামত প্রদানের সুযোগ না দিয়ে খসড়া আইন চূড়ান্ত করায় শঙ্কা প্রকাশ করেন সিলেট আজাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম, সিলেট-এর প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক। তিনি বলেন, ‘যেহেতু পূর্ব প্রতিশ্রæত অঙ্গীকার অনুযায়ী খসড়া আইন চূড়ান্ত করার পূর্বে আমাদের মতামত নেয়া হয় নি তার আমাদের মনে শঙ্কা থেকে যাওয়া অযৌক্তিক নয়।’ তিনি মনে করেন, কওমি মাদরাসার স্বার্থ রক্ষার জন্য হাইয়াতুল উলয়ার অন্তর্ভূক্ত ৬ বোর্ডের একযোগে কাজ করা উচিৎ। সম্মিলিত প্রচেষ্টা না থাকলে কওমি মাদারিসের স্বার্থ ক্ষুণœ হতে পারে। মাওলানা এনামুল হক চূড়ান্ত খসড়া আইনে কি আছে তা জানতে এবং এ বিষয়ে মতামত প্রদানের সুযোগ তৈরি করতে হাইয়াতুল উলয়ার উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের নিকট একটি বৈঠক আহ্বানের দাবি জানান। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে কোনো শিথিলতা দেখালে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে কওমি শিক্ষাব্যবস্থা। শঙ্কা ও দুশ্চিন্তা প্রকাশ করলেও নেতৃবৃন্দের সবাই মনে করেন, আন্তরিক হলে সরকার কওমী বোর্ড সমূহের সাথে যোগাযোগ রেখে, কওমী আলেমদের মধ্যে কারিকুলাম বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নিয়ে এবং স্বীকৃতির খসড়া আইন অবশ্যই কওমী আলেমদের দেখিয়ে সংশোধনের সুযোগ দিয়েও বর্তমান মেয়াদেই সংসদে কওমি শিক্ষাসনদের স্বীকৃতি আইন পাশ করা সম্ভব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কওমী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ