Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে পিছিয়ে দেশ

বিআইবিএমের গবেষণা প্রতিবেদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

 বিশ্বব্যাপী ইসলামিক বন্ড ‘সুকুক’
জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে নেই
বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ইসলামিক বন্ড ‘সুকুক’ খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু আটটি পূর্ণ ইসলামিক ব্যাংক এবং ১৭টি ব্যাংকের ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো থাকলেও সুকুক এখনো চালু হয়নি। তবে ভিন্ন নামে দেশে ইসলামিক বন্ড চালু থাকলেও তাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না গ্রাহকরা।
বিশ্বে ইসলামিক বন্ড সুকুক সবচেয়ে জনপ্রিয় সৌদি আরবে। দেশটি ইসলামিক বন্ড সুকুকের মোট শেয়ারের প্রায় ৩৯ শতাংশ তাদের দখলে। দ্বিতীয় অবস্থানে মালয়েশিয়া। দেশটির উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে সুকুক বন্ড। ২০১৮ সালের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের ইসলামিক বন্ড সুকুকের প্রায় ৩৩ শতাংশ মালয়েশিয়ার শেয়ার। এরপরে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, কাতার, ওমান, তুরস্ক, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, হংকং, নাইজেরিয়া, ব্রুনাই, জর্ডান। বাংলাদেশের অবস্থান ১৪ নম্বরে। মাত্র দশমিক শূণ্য পাঁচ শতাংশ ইসলামিক বন্ডের শেয়ার আছে দেশটির। আবার বৃহৎ মুসলিম দেশ হওয়া স্বত্তেও ইসলামিক ব্যাকিংয়ের অধিকাংশ পরিমাপকে পিছনের সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘প্রডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন অব ইসলামিক ব্যাংকস : প্রসপেক্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আলমগীর। গবেষণা দলে আরও ছিলেন বিআইবিএমের সহকারি অধ্যাপক ড. মোঃ মহব্বত হোসেন, বিআইবিএমের প্রভাষক মোঃ আব্দুল হালিম এবং ইসলামিক ব্যাংক ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ একাডেমির (আইবিটিআরএ) পরিচালক (গবেষণা) ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. মোঃ মিজানুর রহমান।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি প্রফেসর এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুব-উল-আলম, এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোঃ হায়দার আলী মিঞা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি প্রফেসর ইয়াছিন আলি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। তিনি গ্রাহকদের ইসলামিক ব্যাংকিং সেবার মান আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নতুন নতুন ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা নিয়ে গ্রাহকদের সেবা করার ওপর জোর দেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের প্রফেসর এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী। তিনি সেমিনারের বিষয়টির ওপর সূচনা বক্তব্য দেন। ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিং এখন বাংলাদেশের মূল ধারার ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে ৮ টি ইসলামিক ব্যাংক গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে। একই সঙ্গে সাধারণ ব্যাংকিংয়ের ১৭ টি উইন্ডো ইসলামিক ব্যাংকিং সংক্রান্ত সেবা প্রদান করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের প্রসারে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে যাতে আগামী দিনে টেকসই আর্থিক ব্যবস্থাপনা তৈরি হয়।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বব্যাপী সুকুক বন্ড খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়েছে। এ প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল বিভিন্ন দেশ ঘুরে কিভাবে চালু করলে এ বন্ডটি জনপ্রিয় হবে তা খতিয়ে দেখছে। তিনি ইসলামিক ব্যাংকগুলোকে নতুন উদ্যোক্ততা সৃষ্টি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ করার ওপর জোর দেন।
প্রফেসর হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং খাতের মোট শেয়ারের ২২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে ইসলামী ব্যাংকং গুলো। তবে এ বড় শেয়ারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পর্যাপ্ত প্রডাক্ট নেই। ছোট ছোট ঋণ দেয়ার জন্য সেই ধরণের বহুমুখী প্রডাক্ট তৈরির ওপর জোর দেন। এতে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের ঝুঁকি কমবে।
মোঃ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকি কমাতে প্রডাক্টের বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন। বড় ধরণের ঋণের সাথে ছোট ছোট ঋণ দিয়ে ব্যাংকের ঝুঁকি কমানোর ওপর তিনি জোরারোপ করেন। তিনি বলেন, তারল্য ব্যবস্থাপনার জন্য সুকুকের প্রবর্তন জরুরী।
প্রফেসর ইয়াছিন আলি বলেন, প্রচলিত ব্যাংকের সঙ্গে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হবে। এজন্য সেবায় বৈচিত্র্যতা আনয়ন করতে হবে। তিনি ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন।
মোঃ মাহবুব-উল-আলম বলেন, প্রচলিত ব্যাংকগুলোর চেয়ে ইসলামিক ব্যাংকের প্রডাক্ট অনেক বেশি। এগুলো আরও বাড়ানোর সুযোগও রয়েছে। এসব প্রডাক্ট বৈচিত্র্যের মাধ্যমে খেলাপী ঋণের ঝুঁকি কমবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ড. মোঃ হায়দার আলী মিঞা বলেন, মালয়েশিয়ার চেয়ে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়ার কথা বলা হলেও তা বাস্তব সম্মত না। কারণ মালেয়েশিয়ার ইসলামিক ব্যাংকিং খাত বাংলাদেশের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা। বাংলাদেশের অনেক ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা মালয়েশিয়ার ভিন্নতা আছে, যা গ্রাহকরা ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছে। তা সত্তে¡ও বাংলাদেশের ইসলামিক ব্যাংকিং প্রদানকৃত সেবা সমূহ সাধারণ গ্রাহকের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেন, ইসলামিক ব্যাকিং খাতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন নতুন ইসলামিক পণ্য তৈরি করতে হবে। যা গ্রাহকদের কাছে জনপ্রিয় করতে পারলে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি কমে যাবে। তিনি সাধারণ ব্যাংকিং এবং ইসলামিক ব্যাংকিংকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে বিবেচনা করার পরামর্শ প্রদান করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলামিক

৪ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ