Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশ্ন : মহিমান্বিত রহমতের বৃষ্টিঝরা রাত কোনটি?

| প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

উত্তর : আল্লাহ্ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে দান করেছেন রমযান দয়াদরবশ হয়ে। এ মাসেই নাজিল হয়েছিল আল- কুরআন, যা হেদায়াত ফুরকান রহমত নূর ও শেফা। আর যা নাজিল করা হয়েছিল এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মহামূল্যবান রজনীতে,যে রাতে হাজার মাসের চেয়েও অধিক কল্যান ও বরকতের কোষাগার লুটিয়ে দেয়া হয়েছে। যাকে বলা হয় লাইলাতুলকদর।
লাইলাতুল কদর কি?আমি ইহা (এ কুরআন) নাযিল করেছি এ রাত (লাইলাতুল কদর) সম্পর্কে তুমি কি জান? সে মহিমান্বিত রাত হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। প্রত্যেক কাজে সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ (অর্থাৎ জিব্রাঈল (আ:) নাজিল হন তাদের অনুমতিক্রমে। সকাল না হওয়া পর্যন্ত এ রাত্রি পুরোপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার।” (সূরা কদর)
লাইলাতুল অর্থ রাত। আর কদরের অর্থ দুইটি-১ম ভাগ্য তাকদীর নির্ধারন করা, সময় নিদিষ্ট করা, সিদ্ধান্ত করা এটি এমন একটি রাত যে রাতে আল্লাহ্ তাকদিরের ফয়সালা জারি করার জন্য তা ফেরেশতাদের হাতে তুলে দেন। এই রাতেই আল্লাহ্ প্রত্যেক বস্তুর সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করেন তার সময় নির্দিষ্ট করেন এবং হুকুম নাযিল করেন ও প্রত্যেক বস্তুর ভাগ্য নির্ধারণ করেন। এ রাতেই নির্ধারিত হয় আগামী ১ বছররের রিযিক, হায়াত, মৃত্যু সহ সকল কিছুর ফয়সালা।
আমরা এ কুরআনকে এক বরকতময় ও মর্যাদা সম্পূর্ন রাতে নাজিল করেছি। কারণ আমরা লোকদের সর্তক করতে চেয়েছিলাম। এ রাতে বিজ্ঞ ও হেকমতপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করা হয়।” (সূরা দুখান ৩-৪)
ইহা অতীব উচ্চমান, মর্যাদা ও সম্মানের রাত্রি।
এ রাত মর্যাদা ও মূল্যের দিক থেকে, এ রাতে সংগঠিত ঘটনার দিক থেকে, এ রাতে বণ্টনকৃত এবং সংগৃহীত সব ভান্ডারের দিক থেকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন বলেছেন-এ রাতের সৎ কাজ হাজার মাসের সৎ কাজের চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতে কিয়াম করবে তাকে সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়ার সু-সংবাদ দেয়া হয়েছে। অন্যান্য রাতের মতো এ রাতেও সেই নিদিষ্ট সময়টি আছে যখন দোয়া কবুল করে নেয়া হয়। এ রাতে ইহকাল ও পরকালের যে কোন কল্যান প্রার্থনা করা হয় তা প্রদান করা হয়।
কদরের রাত কেন এবং কোনটি?
প্রকৃত পক্ষে লাইলাতুল কদর উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য একটি মহামূল্যাবান নেয়ামত। পূর্ববর্তী আম্বিয়া কেরাম গনের উম্মত গন দীর্ঘ আয়ু পাওয়ার কারণে স্বভাবতই আল্লাহর ইবাদত বেশি বেশি করতে পারতেন। পক্ষান্তরে উম্মাতে মুহাম্মাদী স্বল্প আয়ু পাওয়া সত্তে¡ও যাতে ইবাদত বন্দেগীর দ্বারা আল্লাহর নৈকন্য লাভে তাদেরকে ছাড়িয়ে যেতে পারে সেজন্য মহান প্রভু দয়াপরবমা হয়ে এ রজনী আমাদের উপহার দিয়েছেন।কদরের রাত নির্ধারণ নিয়ে প্রায় ৪০টি মতের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায় রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোর রাত গুলোর মধ্যেই রয়েছে কদর।হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত- হযরত উবাইদা ইবনে সামেত (রা:) বর্ণনা করেছেন রাসূল (সা.) বলেছেন রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোর রাত গুলোর যেমন-২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ বা শেষ রাতের মধ্যে রয়েছে কদরের রাত)” (মুসনাদে আহমদ)হযরত আয়েশা (রা:) বলেন নবী (সা:) বলেন- আমাকে শবেকদর দেখানো হয়েছে তারাপর আমি তা ভুলে গিয়েছি বা আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব তোমরা রমজানের শেষ দশদিনের বিজোর রাত গুলোতে লাইলাতুল কদর সন্ধান কর।” (বুখারী)
এ রাতকে গোপনীয় রাখার রহস্য হল- আল্লাহ্ দেখতে চান এ রাতের বরকত ফজিলত ও কল্যাণ লাভের জন্য কে কতটা প্রচেষ্টা চালায়। আল্লাহ্ তায়ালার উদ্দেশ্য হলো মহামূল্যবান এ রাতের অনুসন্ধানে বান্দাগন সাধনা করুক। এর ফলে যে সুবিধা গুলো হয়েছে-
- এ কারণে আজকেই শবেকদর কিনা ভাবতে ভাবতে অনেক গুলো রাত ইবাদত করার সুযোগ হবে।
- তা না থাকলে এ দিনটি ছুটে গেলে পরবর্তী রাত গুলোতে মন ভরে ইবাদতের মাধ্যমে সে ক্ষতি পুরনের মানসিকতা থাকতো না।
- যতগুলো রাত এভাবে ইবাদতে কাটাবে প্রত্যেকটারই স্বতন্ত্র প্রতিদান মিলবে।
মহিমান্বিত রজনীর নির্দাশনা সমূহঃআবু মুনযির (রা:) ও অন্য সাহাবাগণের প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেছেন যে, এই রাতের পরবর্তী সকালে সূর্য আলোক রশ্মিহীন অবস্থায় উদিত হয়।” (মুসলিম)এ রাতের আরো কিছু নিদর্শন-১. কদরের রাত তিমিরাচ্ছন্ন হবে না।২. নাতিশীতোষ্ণ হবে।৩. মৃদু বায়ু প্রবাহিত হবে।৪. উক্ত রাতে মুমিনগণ ইবাদত করে অন্যান্য রাত অপেক্ষা অধিক তৃপ্তি পাবে। ৫. ঐ রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে।৬. হয়তোবা আল্লাহ্ তার কোন ইমানদার বান্দাকে তা স্বপ্নে দেখাবেন।
এ রাতের ফজিলতঃ আবু হুবায়বা (রা:) হতে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেছেন- যে ব্যাক্তি কদরের রাতে ইমানের সাথে এবং আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিদান লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদতের জন্য দাড়ালো তার পেছনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (বুখারী ও মুসলিম)
এ রাতে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত সারারাত শুধু আল্লাহর রহমত, কল্যাণ ও শান্তিতে পরিপূর্ণ থাকে। ফিতনা, দুষ্কৃতি ও অনিচ্ছাকারীতার প্রভাব তখন ছিটেফোঁটাও থাকে না।
উত্তর দিচ্ছেন : এম, এইচ, খান।



 

Show all comments
  • ৯ জুলাই, ২০১৮, ১০:১০ এএম says : 0
    এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেনnice
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রহমত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ