Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দয়া ও অনুগ্রহ করার শুভ ফল

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০১৮, ৬:০৪ পিএম | আপডেট : ১২:১০ এএম, ৪ জুলাই, ২০১৮

ইসলামী জীবন ব্যবস্থার একটি অন্যতম গুণ ও বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দুর্বল, অসহায়, সম্বলহীন, অনাথ, এতীম, গরীব, মিসকীন ও আশ্রয়হীনলোকদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহের হাত সম্প্রসরিত করা। দুনিয়ার জীবনে যে সকল মুসলামন এই শ্রেণীর পথহারা ও নিরাশ্রয় ব্যক্তিদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহের দুয়ার খোলা রাখবে।
মহান রাব্বুল আলামীন তাদেরকে সমৃদ্ধি দানে বিভ‚তি করবেন এবং দুনিয়া ও আখেরাতে তাদেরকে বিপদ-আপদ হতে দূরে রাখবেন ও জান্নাতের অফুরন্ত ও অগণিত নেয়ামত দ্বারা তাদেরকে ভাগ্যবান রূপে সুশোভিত করবেন। এতীম অসহায় ও মিসকীনদের প্রতি দয়া ও অুগ্রহের হাত সম্প্রাসরিত করা জান্নাতী ও সফলতা লাভকারী লোকদের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ইরশাদ করেছেন, ‘এই শ্রেণীর লোকেরা দুনিয়ার জীবনে খাদ্যদ্রব্যের প্রতি নিজেদের প্রয়োজন ও আবশ্যকতা থাকা সত্তে¡ও মিসকীন, এতীম ও বন্দীদেরকে আহার প্রদান করেন।’ -সূরা আদ দাহর: আয়াত ৮। এতে সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শন, শান্তি ও নিরাপত্তা লাভের মোক্ষম উপায়। আমাদের প্রিয় নবী সা. স্বীয় যবানে পাে ঘোষণা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিন বান্দাহর জাগতিক দুঃখ-কষ্ট বিদূরীত করবে, আল্লাহ পাক তার কিয়ামতের দিনের দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। এবং যে কোনো বিপন্ন ও সঙ্কটাপন্ন ব্যক্তির সঙ্কট ও দূরবস্থার নিরসন করবে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তার দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় সঙ্কটনের নিরসন করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ, ত্রæটি-বিচ্যুতি গোপন করবে, আল্লাহ পাক তার দোষ-ত্রæটি দুনিয়া ও আখেরাতে গোপন ও প্রচ্ছন্ন রাখবেন। আল্লাহ পাক ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দাহর প্রতি সাহায্যদানে মুক্তহস্ত থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দাহ স্বীয় ভ্রাতার সাহায্যে নিরত থাকেন। -মিশকাতুল মাসাবিহ: পৃ ৩১। এই হাদীসে দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শণকারীকে চারটি বিশেষ দান লাভের খোশখবরী দেয়া হয়েছে এবং এতে এই ইঙ্গিত ও প্রচ্ছন্ন রয়েছে যে, দুর্বল ও অসহায় ব্যক্তিদেরকে সাহায্য করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং জীবন চলার পথে শান্তি স্বস্তি ও নিরাপত্তার জোয়ার বইতে থাকে।
এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তোমাদের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে, তাকে আশ্রয় প্রদান করবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে তোমাদের কাছে সাহায্য চাইবে, তাকে সাহায্য করবে। আর যে ব্যক্তি তোমার কল্যাণ সাধন করবে তার প্রতিদান তুমি যথারীতি প্রদান করবে। তবে, এতে যদি সক্ষম না হও তাহলে তার জন্য নেক দোয়া করবে। -আবু দাউদ: হাদীস নং ১৬৭; নাসাঈ; হাদীস নং ৫৬৭; বাইহাকী: খন্ড ৪, পৃ. ১৯৯। অপর এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার রাজী-খুশী চায়, তবে সে যেন আমার উম্মতের দুর্বল ও অসহায় লোকদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করে। কেননা, দুর্বল ও অসহায় লোকদের কারণেই সাহায্য ও রিযক দেয়া হয়ে থাকে। -আবু দাউদ: খন্ড৭, পৃ. ১৮২; জামে তিরমিজী: খন্ড ৫, পৃ. ২৯১। একই অর্থ ও মর্মজ্ঞাপক হাদীস হযরত মুসআব ইবনে সায়াদ রা. হতে ও বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমার পিতা সায়াদ মনে করলেন যে, দুর্বল ও অসহায় লোকদের ওপর তার অনেক অনুগ্রহ রয়েচে। রাসূলুল্লাহ সা. তাকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের প্রতি সাহায্য বর্ষণ করা হয়েছে কেবলমাত্র দুর্বল লোকদের কারণে। আর তাদের কারণেই তোমরা রিযিক ও সম্পদ লাভে কৃতার্থ হয়েছো। -ওমদাতুল কারী, শরহে বুখারী: খন্ড ১৪, পৃ. ১৭৯। মোল্লা আলী কারী রহ. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, তোমরা দুর্বল অসহায়, গরীব লোকদের প্রতি সুন্দর বিনম্র আচরণ প্রদর্শণ করা এবং তাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করে আমার সন্তষ্টি অর্জন করার প্রতি যত্নবান হও। কেননা, এরই মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের পক্ষ হতে সাহায্যের স্রোতধারা নেমে আসে এবং প্রয়োজনীয় সম্পদ অর্জিত হয়। -মিরকাতুল মাফাতিহ, খন্ড ৯, পৃ. ৮৪।
উপর্যুক্ত হাদীসগুলোর অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে অতি সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, দুর্বল ও অসহায় লোকদের প্রতি সাহায্য ও অনুগ্রহ প্রদর্শন তিনভাবে সম্পন্ন করা যায়। যথা, ব্যক্তিগতভাবে, সামাজিকভাবে এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। এতে করে ক্ষুদ্র পরিসর হতে শুরু করে বৃহত্তর পরিসর পর্যন্ত দুর্বল ও অসহায়দের জীবন ও জগতের যাবতীয় অবাব-অনটন দূরীভ‚ত হবে এবং পরিবার, সমাজ ও দেশজুড়ে প্রবাহিত হতে থাকবে শান্তি সমৃদ্ধির কোমল বাতাস। এমনটি সকলেরই কাম্য হওয়া উচিত।



 

Show all comments
  • নিঝুম ৩ জুলাই, ২০১৮, ৩:০৭ এএম says : 0
    সুন্দর লেখাটির জন্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • মাসুদ ৩ জুলাই, ২০১৮, ৩:০৮ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই কাজগুলো করার তৌফিক দান করুক
    Total Reply(0) Reply
  • নাসির ৩ জুলাই, ২০১৮, ৩:২৩ পিএম says : 0
    দুর্বল ও অসহায় লোকদের প্রতি সাহায্য ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করলে একটা মানষিক শান্তি পাওয়া যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • তামান্না ৩ জুলাই, ২০১৮, ৩:২৯ পিএম says : 0
    দুর্বল ও অসহায় ব্যক্তিদেরকে সাহায্য করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং জীবন চলার পথে শান্তি স্বস্তি ও নিরাপত্তার জোয়ার বইতে থাকে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন