Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে গুতেরেস ও কিম

উখিয়া (কক্সবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০১৮, ৬:০৪ পিএম

কক্সবাজারের উখিয়ার কতুপালংয়ের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম।
গতকাল সকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পর কুতুপালংয়ের ট্রানজিট পয়েন্টের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলছেন তারা। শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশা নিজের চোখে দেখা ও নিজের কানে শোনার পর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গারা বিচার চায়। নিরাপদে ফিরে যেতে চায় রাখাইনের নিজ বাড়িতে। শরণার্থীদের জুলুম নির্যাতনের বর্ণনা শুনে আমার হৃদয় ভেঙ্গে গেছে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টট জিম ইয়ং কিম বলেছেন, রোহিঙ্গা ছেলেমেয়ে নারী শিশুদের অসহায়ত্ব দেখে আমাকে নিজেকেই একজন রোহিঙ্গা মনে হচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে গুতেরেস যান কক্সবাজার সৈকতের কলাতলীতে সাইমন বিচ রিসোর্টে। সেখানে আন্তোনিও গুতেরেস ও জিম ইয়ং কিমের সামনে রোহিঙ্গা সংকট এবং সমস্যার সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সকাল ১০টায় কক্সবাজারের কলাতলী থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে শরণার্থীশিবির পরিদর্শনে যান জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট। সেখানে তারা কুতুপালং আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), ব্র্যাক এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, নারী ও শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া লম্বাশিয়া ও মধুরছড়ায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসরত রোহিঙ্গাবসতি ঘুরে দেখেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কুতুপালং ট্রানজিট রোহিঙ্গা ক্যাম্প পৌঁছার পর ট্রানজিট ক্যাম্পের এক্সটেনশন-৪, নিবন্ধিত সি বøক ও ডি-৫ বøকের বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এসময় ইউএনএফপিএ-এর নারী কেন্দ্রে ১০-১৫ জন নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা বলেন। নারীরা তাদের ধর্ষিত হওয়ার মর্মান্তিক কাহিনীর বর্ণনা দেন। তারা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার প্রাইমারি স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। বিকেলে তিনি কক্সবাজার শহরে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও এনজিও কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস টুইট করে বলেছেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে হত্যা আর ধর্ষণের আমি যে বিবরণ আমি শুনেছি সেটা অকল্পনীয়।
জাতিসংঘের মহাসচিব সড়ক পথে উখিয়ার কুতুপালংস্থ টিভিস্টেশন কেন্দ্রে পৌঁছিলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার রোহিঙ্গা ছুটে আসেন। রোহিঙ্গাদের অবস্থান দেখে জাতিসংঘের মহাসচিব গাড়ি থেকে নেমে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপ করেন এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কথা শুনেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কয়েকজন বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী আমাদের অত্যাচার, নির্যাতন ও জুলুম করেছে। যার কারণে প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি। এখন এই অত্যাচার, জুলুম ও নির্যাতনের বিচার ও নাগরিকত্ব নিয়ে মিয়ানমারে ফিরতে চাই। মৌলভী মোঃ ফরিদ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিচার দাবি করেন। শুধু মৌলভী ফরিদ নয়, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার রোহিঙ্গার মুখে একই দাবি, ‘নির্যাতনের বিচার চাই, নাগরিকত্ব নিয়ে মিয়ানমারে ফিরতে চাই। একজন শিক্ষিত রোহিঙ্গা মৌলভী সাংবাদিকদের জানান, আমরা জাতিসংঘের মহাসচিবকে অভিযোগ করে বলেছি, আমরা দেশহীন মানুষ। যুগের পর যুগ ধরে মিয়ানমারে বসবাস করতাম। কিন্তু মিয়ানমার সেনা বাহিনীর নির্যাতনে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি। এখন নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই, নাগরিকত্ব চাই। এটাই আমাদের একমাত্র দাবি।
রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখে সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, গত ১১ মাস ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমারের চালানো নিপীড়নের কথা শুনছিলাম। নিজে সরাসরি রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমারের নিপীড়নের কথা শুনলাম। রোহিঙ্গাদের শরীরে এখনো মিয়ানমারের সেনাদের চালানো নির্যাতনের ভয়াবহ চিহ্ন আছে। রোহিঙ্গারা তাদের উপর চালানো নির্যাতনের যেই বর্ননা দিয়েছে তাতে আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। সব অধিকার দিয়েই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে চান তারা। এই জন্য বিশ্বস¤প্রদায়কে আরও জোরালো ভূমি রাখার আহŸান জানান তিনি। গুতেরেস আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের বিশাল জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যেই মানবতা দেখিয়েছে, তা বিশ্বে নজিরবিহীন ঘটনা। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, রোহিঙ্গাদের কষ্ট আর তাদের অসহায়ত্ব দেখে নিজেকেই একজন রোহিঙ্গা মনে করছেন। নিজেকে রোহিঙ্গা মনে করেই তিনি রোহিঙ্গাদের কষ্ট অনুভব করছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের সব ধরনের সহায়তা দেয়ার জন্য বিশ্ব ব্যাংক সব সময় প্রস্তুত। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে অঙ্গীকার করেন কিম। ##



 

Show all comments
  • Zowadul Karim Khan ৩ জুলাই, ২০১৮, ২:৫৩ এএম says : 0
    ইন্টারন্যাশনাল হোমরাচোমড়া ব্যক্তিবর্গের গন্তব্য এখন বাংলাদেশ। একা অথবা দল বেঁধে তাঁরা আসেন, পরদিন ভোরে চলে যান কক্সবাজার। রোহিঙ্গা দেখেন। আমাদের সরকার তাঁদের কাছে মিনতি করেন যাতে তাঁরা মিয়ানমার এর উপর চাপ প্রয়োগ করেন রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে। তাঁরাও বলেন তাঁরা চাপ দিচ্ছেন, কঠিন চাপ, যাতে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়। অতঃপর নিজেরা চলে যান, কিন্তু রোহিঙ্গারা পড়ে থাকে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Manir ৩ জুলাই, ২০১৮, ২:৫৪ এএম says : 0
    এরা বাংলাদেশে আসে রোহিঙ্গাদের দেখে তারপর সাংবাদিকদের সামনে দুটি কথা বলে চলে যায়, কিন্তু যেই মায়ানমারের কারনে এই অবস্থা তাদের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারেনি,পারেনি রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশে ফিরিয়ে নিতে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ