বাংলা সন ও নববর্ষ
বাংলাদেশের একটি নিজস্ব সন আছে, যা ‘বাংলা সন’ হিসেবে অভিহিত। এই সনের প্রথম মাস বৈশাখের
দাঁড়িয়ে আছি
দাঁড়িয়ে আছি থাকতে হয় দাঁড়িয়ে
নইলে চিনবে কি করে দাঁড় কাক আর দাঁড়িপাল্লার শিরদাঁড়ার ফারাক
কবিতা থাক কবিতার খাতায় পাতায় মুখের পাতায়
শব্দ হোক সাইকেল গাড়ির
দু’পাঘোর সকালেই পৌঁছে দেবে মধুমিতার বাড়ি।
ছন্দ যদি হয় ইস্টিশনে আমি হবে অমিত্রাক্ষর
দাঁড়ানোর বালাই নেই; প্রেম দেবেনা মিত্রাক্ষর
মধুমিতা যদি মূক হয় আমি রাজি বারবার
দু’একটা ক্যামেলিকা বুকে চলেই যাব
সাত সাগরের পাড় যদি মধুমিতা ছড়া হয় আমি তবে ঝর্ণা
ঝরঝর চোখে শ্রাবণ নামিয়ে চলুক অন্ত্যমিল আর না
রো কে য়া ই স লা ম
যাপিত জীবন
পুরুষের পুষ্ঠ আর নারীর বক্ষ হতে
অবতীর্ণ এক মহাযুদ্ধ ক্ষেত্রে
অবুঝ মহদোর সহদোরারাই প্রতিপক্ষ
শক্তির পরীক্ষা শুধু বেঁচে থাকার জন্য অদৃশ্য মায়ালোকে
সেই থেকে সংগ্রামের কাল শুরু
সুতীব্র বেদনায় মাতৃ জরায়ু ছিঁড়ে
গ্রহান্তর থেকে অচেনা পৃথিবী পৃষ্ঠে
নির্ধারিত পরিক্রমায় মানুষ জীবন একান্ত অকাম্য
দীর্ঘ পথে কতশত অজানা বন্দর পেরিয়ে
অনায়াম পৌঁছে যায় ছিকানাহীন দীপপুঞ্জে
প্রতিদিনের গঞ্জে ভিন্ন বাণিজ্য
দেউলিয়া বণিক কর অঠিক্যে হারায় বসতভিটা
রেয়াত মেলেনা সুদ-আসল মিলে ছোমানত সর্ব শক্তিমান
তাহলে এক যাপনে মানুষ কি খোঁজে কাকে খোঁজে
কেনই বা বার বার অন্ধকারে তার অন্যেশন
পৃথিবীর পথে প্রান্তরে সমুদ্রে অরণ্যে
নিজের সাথে যুদ্ধ দুঃসহ প্রতীক্ষা
মহানদের পরিসমাপ্তি কি অন্য জীবন আরেক গ্রহে?
শি উ ল ম ন জু র
দরজার ওপাশে
কী যে বলো তুমি...। বুকের ভিতর বাজে মমতার সিম্ফনি। চোখ ঠিকই জ্বলজ্বল করে ওঠে মোলায়েম পাথরের বন্ধনে। মনের ভিতর জেগে ওঠে ছন্দে ছন্দে প্রবহমান নদী। কী যে বলো তুমি ...। শর্ষে ফুলের ঘ্রাণে প্রাণ ভরে যায়, কখনো মেঠো পথের দূর্বায়। দরজার ওপাশে ঝড় বোশেখের ডাক শুনি...।
ফা হি ম ফি রো জ
নরম চিঁড়া
শুষ্ক অন্ন। যেখানে জীবন নেই। বালুর স্বভাব ...
যা তরল, তা সে অনায়াসে
লুফে নেয়। আমি তাই
নরম চিঁড়ার মধ্যে
খুঁজি সৃষ্টিশীল চাঁদ।
চৈত্র : ২০১৫
আ মি র আ স হা ব
বৈশাখী বাতাস
আমাদের সময়ে আমরা অভ্যাসবশতই সন্ধ্যা দেখি
দেখি বোশেখের শীলাপাতে অকেজো সময়।
আসলে ভোরের আগেই ভোর হয়
সন্ধ্যার আগেই নামে রাত
যখন ভোরের বিপরীত রাত এসে যায়
তখন সম্পর্কগুলো একটি ঝড়ে অপেক্ষা করে
স্বপ্নরা দোলতে থাকে নাগর দোলায়।
ভালোবাসা বৈশাখী বাতাস
পাতায় পতাকা আঁকা,
সন্ধ্যার আগেই ভোর দেখার আপ্রাণ চেষ্টায়
অসম আসমান আজন্ম এঁকে যায় লাল-নীল সীমানা।
(০৯.০৪.২০১৬)
সা য়ী দ আ বু ব ক র
ঘুমাতে ভয় লাগে
ঘুমাতে ভয় লাগে, কেবলি মনে হয় এ ঘুম ভাঙবে না পাখির ডাক শুনে
পাখির ডাক শুনে উঠবে জেগে ফুল, হালের বলদেরা, লক্ষ্মী চাষিবউ;
কেবল ভাঙবে না আমারই ঘুম বুঝি, যখন ফুলনদী ফুলেল ফাল্গুনে
ছুটবে যেন ঘোড়া ছলাৎ ছলছল এবং মৌমাছি বেড়াবে খুঁজে মউ।
যে-চোখ দেখলো না শিশিরভেজা ঘাস, রৌদ্রভেজা জল, সুবাসভেজা ফুলÑ
ব্যর্থ সেই চোখ! যে-কান শুনলো না ঘুঘুর মিহি সুর ও দোয়েলের শিশÑ
ব্যর্থ সেই কান! ব্যর্থ সে-হৃদয়, গেলো না ডুবে যার কূল ও উপকূল
রূপের উচ্ছ্বাসেÑ বিফল সে-জীবন, কেমন পানসে ও কেমন নিরামিষ!
ঘুমাতে ভয় লাগে; আমি এ জনপদে থাকবো জেগে শুধু, যেভাবে জাগে চাঁদ;
যেভাবে জেগে থাকে নদীর বুকে ঢেউ, দিনের বুকে রোদ, মাটির বুকে ঘাস,
থাকবো জেগে আমি সেভাবে এদেশের সবুজ বুক জুড়ে; মেটে না দেখে সাধ
রূপসী এই দেশ, নাকফুলের মতো ধানের খেত আর নিখুঁত নীলাকাশ।
মা হ মু দ কা মা ল
গাঙে নাই পানি
পিন্দনের শাড়ি দিলা পাছা পেড়ে শাড়ি
এই শাড়ি পিন্দিছিলো আমার শাশুড়ি
শাড়ি দিলা দিলা না তো মাটির কলস
আমার হোরির কাঁখ আছিলো না কখনো অলস।
শাড়ি পিন্দা গাঙে যাই গাঙ ন্যাংটা হয়া
চকচকা বালু নিয়া এক ঠায় গাঙ রইছে বয়।
পাছা পেড়ে শাড়ি আছে ঠিলা নাই কাঁখে
বৃষ্টি নাই ধুলা ঝড় ধূমল বৈশাখে
খাঁ-খাঁ করে মাঠ-ঘাট পানি নাই গাঙে
মাটির কলস তাই মাটিতেই ভাঙে।
চুলায় আগুন জ্বলে চাল ভর্তি কোলা
কেমুন মরদ তুমি কোলে নাই পোলা।
শু দ্ধে ন্দু চ ক্র ব তী
আরোগ্য
দু হাজার কুড়ির দিকে চেয়ে আমি অঙ্গীকারবদ্ধ হই আজ
দেশকে পোলিও মুক্ত করতে হবে
দেশকে অন্ধত্ব মুক্ত করতে হবে
দেশকে ম্যালেরিয়া মুক্ত করতে হবে
দেশকে কালাজ্বর মুক্ত করতে হবেÑ
আমার প্রদেশ, ঘটিবাটি
আমার চন্দ্রাদি, মুলাদি, কুসুম মালতি
আরোগ্যে আরোগ্যে যেন কেটে যাওয়া বন্ধ্যাত্ব পে-ারি গ্রামে
কাছিম পাখনা হয়ে শুক্রাণু পৌঁছোল, নিষিদ্ধ ইন ভিভোÑ
দু হাজার কুড়ির দিকে চেয়ে আমি...
ঘরের চারপাশে শুধু কারবোলিক গন্ধ ছড়াই
তুলসীতলায় একটা সোকপিট, স্থাপন করিÑ
তারপর
বাসা বাঁধি মশারি আড়ালে...
আ শু তো ষ ভৌ মি ক
পূর্ণিমাজল
চন্দ্রালো ফুটছে চন্দ্রালো অঙ্গারকালো রাত্রির গতরে
ফুটছে নদী ফুটছে ঢেউ মরুভূমি-বালুচরে
মরচে পড়া হৃদয়গৃহে মনকাড়া হাসি হাসে নবজাতকের প্রাণ!
খেলার মাঠের মতো খেলা করে বাতাসের বুকে সাম্যের সবুজ ঘ্রাণ!
সবিতার ঠোঁটে রোদ্দুর ফোটে ভোর খোলে জানালা
কৃষ্ণকায় নিশুতিতে ইটভাঙা-শব্দের মতো কারা ভাঙে কারা
সুরভরা বেহালা?
রাশি রাশি হাসি নিয়ে প্রহরেরা দ্রুতলয়ে ছুটে চলে
সেইখানে, যেখানে কালো কালো দুখগুলো সাঁতার খেলে পূর্ণিমাজলে!
অমার দোলায় অমা কই? নাচে শশী বন!
আ ল মু জা হি দী
আত্মা ও চাঁদ
আকাশের চাঁদটাকে মনে হয়
আমার আত্মা
আর সমুদ্রটা? আত্মার প্রতিবিম্বন
যেখানে সহ¯্র
স্পন্দন ছড়িয়ে পড়ে
তরঙ্গ বিভঙ্গে
আকাশের চাঁদখানা
সহ¯্র ভগ্নাংশে
খ--বিখ- করে
আমাকে এবং আমার
আত্মাকে।
জা হা না রা আ র জু
স্পর্ধিত শব্দাবলী
না আমার তেমন কিছু সম্বল নেই-
ক্ষমতা নেই সুদৃঢ় পদক্ষেপে ওই প্রশস্ত রাজপথে হেঁটে যাবার-
না- আমার কথা বলার সজ্জিত কোন মঞ্চও নেই,
হাততালি দেবার ভক্তবৃন্দ নেই-নন্দিত পুষ্পস্তবকে আচ্ছাদিত হব না কখনো,
আমার নেই শ্বেত মর্মর খচিত রাজপ্রাসাদ
নেই হীরা-মণি-মানিক্যের ছড়াছড়িÑ
আঙ্গুলি-নির্দেশে ছুটে আসবে না কোন সেপাই শাস্ত্রী
অথবা লোক-লস্কর ক্ষোভ নেই একটুক তাতে,
আমার যা আছে অফুরন্ত সে ভা-ার
আমার বুকের ওঠা নামায় ধমনীর শিরায় শিরায়
আছে কিছু শব্দাবলী, রিম ঝিম রক্তদোলায়
সৃজনের নূপুর হয়ে বাজে প্রতিক্ষণ-
প্রতিদিনের রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে যার ক্ষয় নেই,
সে শব্দাবলীর কুসুম সম্ভারে আমি
এক চির বসন্তের বাগান গড়ে নিতে পারি সেখানে নিত্য ফুল শাখাতে
দোল খায় গানের পাখি হলুদ, নীলÑ
সোনালি পাখায় চৌদিকে রঙ্গিন প্রজাপতিরা ওড়ে নীল ময়ূরীর পাখায়
শাওনের দোলা, আকাশের সাদা ভেলায় মুক্ত বলাকার সারি
আমার সে শব্দমালা নিয়ে আসে হেমন্তী সোনা ঝরা কৃষাণের
স্বপ্ন-সফল মাঠ অভুক্ত শিশুর জঠরে অফুরন্ত ক্ষুধায়
সাদা ভাত পৃথিবীর সব দুঃখ মুছে দিয়ে নিয়ে আসে এক সোনালি সূর্যের সকাল।
এবং চাঁদের প্লাবনে ঢেউ-ভাঙ্গা রূপালী আকাশ।
আমার শব্দাবলী মেঘের মিনার ছুঁয়ে ছুঁয়ে উড়ে যায় অনন্ত কালের
যাত্রায় নির্ভীক জানায় উড্ডীন-
আমার লাগে না কোন নাভোযান অথবা ছাড়পত্র,
কোন কাঁটাতারের শাণিত শাসন নেই আমার সীমানায়-
আমার শব্দাবলী গড়ে নেয় যেমন খুশি হিরণ¥য়
একক পৃথিবী একান্ত আমার।
আমার শব্দাবলীর পতাকা জানে না নতজানু হোতে,
জানে না কোন শৃঙ্খলিত সোনার খাঁচায় আবদ্ধ হোতে,
বিপুল সমুদ্র ঢেউ-ঝড়-জালোচ্ছ্বাস পারে না মুছে দিতে আমার এ
মহাভা-ার, হাজার বছরের রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে থেকে যায় অম্লান
আমার বুকের ওঠা নামায় এবং ধমনীর শিরায় শিরায়
প্রতি মুহূর্তে জন্ম নেয় সম্পাধিত শব্দাবলী, হীরা-মণি-মানিক্যের
চেয়েও যা আমার কাছে দামী- এ মহাভা-ার একান্ত আমার
যার বিলোপ নেই, যার ক্ষয় নেইÑ এই আমার অহংকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।