Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আস্থা সঙ্কটে ইসি

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৬ এএম

খুলনার পর গাজীপুরে সিটি নির্বাচনে প্রধান দুটি দলের অসম প্রতিযোগিতা হয়েছে। ছিল না লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এবং পুলিশ ও প্রশাসন ক্ষমতাসীনদের হয়ে কাজ করেছে। আর এমন অভিমত নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকদের। তারা মনে করছেন প্রশ্নবিদ্ধ খুলনা পর গাজীপুরেও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠায় আস্থার সংকটে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই দুই সিটিতে নতুন রূপে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হয়েছে। এ ধরনে নির্বাচন ইসির প্রতি সাধারণ মানুষের অস্থাহীনতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রæপ (ইডবিøউজি) বলেছে, পুলিশ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে প্রায় ৪৭ শতাংশ কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন ক্ষমতাসীনদের হয়ে কাজ করার যে নতুন রূপ তা চলতে থাকলে নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হবে। নির্বাচনের প্রতি দেশের মানুষের আর কোন আগ্রহ থাকবে না। আর তাহলে গণতন্ত্র বিকাশের পথ একেবারেই রুদ্ধ হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, খুলনার পরে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নতুন রূপ দেখা গেছে। এ ধরনে কার্যক্রম ইসির প্রতি জনগণের আস্থা অনেকটা শূন্যের কোটায় নামিয়ে দিয়েছে। রাজমাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি নির্বাচন ওই দু’টি সিটির আদলে হলে নির্বাচনের প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকবে না।
তিনি বলেন, পুলিশ ও প্রশাসন প্রকাশ্যে সরকারের পক্ষে কাজ করেছে। এটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যদি এমন অবস্থা অপরাপর নির্বাচনে অব্যাহত থাকে তাহলে ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে নির্বাচনে বিএনপিকে অবশ্যই মাঠে থাকতে হবে এবং এ চুরিগুলো ধরে দিতে হবে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, খুলনার পরে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রধান দুটি দলের অসম প্রতিযোগিতা হয়েছে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না। পুলিশ ও প্রশাসন ক্ষমতাসীনদের হয়ে কাজ করেছে। ভোটের লড়াইয়ে মাঠে বিএনপির নেতাকর্মীকে দেখা যাচ্ছে না। মাঠ ছেড়ে রাজধানীর নয়া পল্টনে সংবাদ সম্মেলন করলে হবে না। আগে ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে হবে। তারপর চোর ধরতে রাস্তায় পাহারা দিতে হবে। এ দুটি কাজের একটিও করেনি বিএনপি
অপরদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ গাজীপুর নির্বাচনে কোন অনিয়ম হয়েছে তা মানতে নারাজ। তারা বলছে, গাজীপুরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। কোথাও কোন অনিয়ম বিশৃঙ্খলা হয়নি। কোন মারামারির ঘটনা ঘটেনি। এমন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিরোধী দল ঢালাওভাবে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, গাজীপুরে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। নৌকার প্রার্থীর দ্বিগুণ ভোটে জয়লাভ অব্যাহত উন্নয়নের প্রতি জনগণের অকুন্ঠ সমর্থন।
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, গাজীপুরে কোনো নির্বাচন হয়নি। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন যে সম্ভব নয় খুলনা এবং গাজীপুরের তা প্রমাণ হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আগেও বলেছি এটা একটা তল্পি বাহক ও আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানকে সংবিধানে যে অধিকার ও ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এই ক্ষমতা, শক্তি বা সাহস বর্তমান কমিশনের নেই।
বিশ্লেষকদের মতে, গাজীপুরের আগে খুলনা সিটি নির্বাচনেও প্রায় একই চিত্র দেখা গিয়েছিল। গত ২৬ জুন গাজীপুরে যা ঘটেছে তার সবাই খুলনার কার্বন কপি। যা হয়েছে তার সবই ঘটেছিল খুলনায়। এভাবে জাতীয় নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস আগে সিটি নির্বাচনগুলোর মাধ্যমে অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে উঠছে। এদিকে খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের খবরে উদ্বেগ জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ