Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন অর্থবছর হবে সমৃদ্ধির পুঁজিবাজার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অশিদারিত্বে চীনা দুইটি কোম্পানিকে যুক্ত করে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। লেনদেন কিছুটা কমলেও ও বাজার মূলধন বৃদ্ধিতে নতুন রেকর্ড গড়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষ করলো দেশের পুঁজিবাজার। একই সঙ্গে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছর হবে সমৃদ্ধির বাজার এমনটিই আশা করছেন বাজার সংশ্লিষ্ট ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, সমাপ্ত বছরে ডিএসই’র বাজার মূলধন অর্থবছর হিসেবে নতুন এক রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ডিএসই বাজার মূলধন আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪৬.৩৫ বিলিয়ন টাকা বা ১.২২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮৪৭.৩৫ বিলিয়ন টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজার মূলধন সর্বোচ্চ ৪,২৮৫.০৯ বিলিয়ন টাকায় উন্নিত হয় এবং সর্বনিম্ন ছিল ৩,৭৬৮.২৩ বিলিয়ন টাকা।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার অত্যন্ত সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর। যে কোন ধরনের কর্মকান্ডই পুঁজিবাজারকে মারাত্মক প্রভাবিত করে, আর সেই সাথে প্রভাবিত হয় দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ বিনিয়োগকারী। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার একটি অগ্রসরমান ও সম্ভাবনাময় খাত। এই সম্ভাবনাময় খাতকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে সরকার পুঁজিবাজারে নীতি সহায়তা দেওয়ার উ্যদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট কাটাতে নগদ জমা সংরক্ষনের হার কমানো, সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার ঘোষণা এবং ব্যাংকের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ঘোষণাসহ ইতিবাচক বিভিন্ন পদক্ষেপে বাজার স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসে। তবে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস বাজার গতিশীল অবস্থা থাকলেও অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে (জানুয়ারী-জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা, ব্যাংকের তারল্য সংকট, প্রাক নির্বাচন পরিস্থিতি বিভিন্ন কারণে বাজার চিএ কিছুটা পাল্টে যেতে থাকে। লেনদেন ও সুচক কমতে থাকে।
বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের অর্জন সম্পর্কে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান বলেন, দীর্ঘ কর্মকান্ডের পর বিশ্বের অন্যতম স্টক এক্সচেঞ্জ চীনের সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম ডিএসই’র কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় ডিএসই এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এতে ডিএসইর কৌশল ও কারীগরি সহায়তার ক্ষেএে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আগের বছরের তুলনায় লেনদেন ও সূচক সামান্য কমলেও বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর ভিত পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশী শক্তিশালী ও মজবুত হয়েছে। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি ও নতুন পণ্য বাজারে যুক্ত করে দেশের পুঁজিবাজারকে বৈচিএময় বিনিয়োগের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলে দেশী বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করাই ডিএসই’র এখন প্রধান লক্ষ্য।
এদিকে ডিএসইর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৭-১৮ অর্থবছর পুঁজিবাজারের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি বছর। এই বছর ১৪ মে ডিএসই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে আন্তর্জাতিক অজ্ঞনে ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেছে। পুঁজিবাজারে স্বল্প মূলধনের প্রতিষ্ঠানসমূহের অর্থায়ন ও তালিকাভুক্তির জন্য স্মল ক্যাপ বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ইতিমধ্যে মধ্যে জনমত যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। খুব শীঘ্রই স্মল ক্যাপ বোর্ড নামে আলাদা বাজার সৃষ্টি হবে। এতে বাজারে সিকিউরিটিজের বৈচিত্র্য বাড়বে যেখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীগণ বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবে এবং বাজারে তারল্য বাড়বে।
ওটিসি মাকের্টের জন্য নতুন বাজার কাঠামো তৈরি ও আলাদা রেগুলেশন অনুযায়ী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ওভার দি কাউন্টার বুলেটিন বোর্ড) রেগুলেশন, ২০১৭ নামে খসড়া তৈরি করে বিএসইসি’র কাছে জমা দিয়েছে। ডিএসই মোবাইল অ্যাপে বেশ কিছু সিকিউরিটি ফিচার সংযোজন করা হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে শেয়ার লেনদেনের মোট পরিমান মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারকারীরা দেখতে পাবেন। ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পণ্যের বৈচিত্রতা আনয়নে নতুন প্রোডাক্ট এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড খুব শীঘ্রই চালু হবে।
বাজারের চিত্র সম্পর্কে জানানো হয়, শিল্প উদ্যোক্তারা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজার থেকে ২টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ মোট ১১টি সিকিউরিটিজ প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও’র মাধ্যমে মোট ৫৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। এ সময়ে ২টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ মোট ৯টি সিকিউরিটিজ ৬৭৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়। ডিএসইতে মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ১,৫৯০,৮৫২ মিলিয়ন টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ২১৪,৩৭০ মিলিয়ন টাকা বা ১১.৮৮ শতাংশ কম। তবে অর্থবছর অনুযায়ী পুঁজিবাজারের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ লেনদেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৪৬ কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয় ৬,৪৬৬ মিলিয়ন টাকা। অপরদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৩৯ কার্যদিবসে মোট লেনদেনের পরিমান ছিল ১,৮০৫,২২২ মিলিয়ন টাকা এবং গড়ে লেনদেনের পরিমান ছিল ৭,৫৫৩ মিলিয়ন টাকা। ডিএসইএক্স আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৫০.৫৯ পয়েন্ট বা ৪.৪৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শেষ দিনে ৫৪০৫.৪৬ পয়েন্টে দাঁড়ায়।
সূচক সামান্য কমলেও ডিএসই’র বাজার মূলধন অর্থবছর হিসেবে নতুন এক রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ডিএসই বাজার মূলধন আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪৬.৩৫ বিলিয়ন টাকা বা ১.২২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮৪৭.৩৫ বিলিয়ন টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজার মূলধন সর্বোচ্চ ৪,২৮৫.০৯ বিলিয়ন টাকায় উন্নিত হয় এবং সর্বনিম্ন ছিল ৩,৭৬৮.২৩ বিলিয়ন টাকা।
গেল অর্থবছরে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১৭,২৯২ মিলিয়ন টাকা। গত অর্থবছরের চেয়ে ১৭,১৯৮ মিলিয়ন টাকা বা ১৭.১৮ শতাংশ বেশী লেনদেন করে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছে। যা মোট লেনদেনের ৭.৩৭ শতাংশ। ডিএসই-মোবাইল অ্যাপে লেনদেন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শেষে দাঁড়ায় ৩১,২৭০ জনে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মোবাইলের মধ্যমে মোট ৪২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫৭ টি আদেশ প্রেরণ করে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুঁজিবাজার

২৪ নভেম্বর, ২০২২
১০ নভেম্বর, ২০২২
১১ অক্টোবর, ২০২২
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ