পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দূষণে বিষিয়ে গিয়ে রুই কাতলা মৃগেল মা-মাছসহ হরেক প্রজাতির মাছ ও জীববৈচিত্র্য মারা যাওয়ায় হালদা নদীর সঙ্কট নিয়ে বিভিন্ন মহলের মাতামাতি এবং দৌঁড়ঝাঁপ দেখা গেছে। কিন্তু নজিরবিহীন এই বিপর্যয়ের পরও হালদা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়সারা ভাব এখনো কাটেনি। এশিয়ার একমাত্র মিঠাপানির বড় মাছের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্রকে দূষণের হুমকি থেকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসছে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগ ও সংস্থাগুলোর মধ্যে নেই কোন সমন্বয়। নদী ও প্রাণিবিজ্ঞানীদের অভিমত, বিষাক্ত বর্জ্য ও আবর্জনার যাবতীয় উৎস বন্ধ না হলে হালদায় দূষণ অব্যাহত থাকবেই।
তারা জানান, বিষাক্ত বর্জ্য ও পচ-গলা আবর্জনা থেকে পানিতে মারাত্মক হারে দূষণের কারণেই হালদা নদীতে মাছ মরেছে। সাম্প্রতিক পাহাড়ি ঢলে হালদায় বন্যার পানিতে প্রায় ১০দিন হাটহাজারীসহ হালদা নদীর আশপাশের এলাকা ডুবে থাকার পর বানের পানি নেমে গেলে দূষণ ছড়িয়ে পড়ে । বানের সময় চরম বির্পযয়ের মুখে পড়ে হালদা। এ নদীতে ৯৩ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এরমধ্যে আছে ১০ থেকে ১২ প্রজাতির মা-মাছ। রুই, কাতাল, মৃগেল, কালিবাউশসহ কার্পজাতীয় মা-মাছ হালদা নদীতে প্রতি মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়ায় ও প্রাকৃতিক পরিবেশে ডিম ছাড়ে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. গাজী সৈয়দ মোহাম্মদ আসমত বলেন, নদীর আশপাশের বিভিন্ন কল-কারখানা দীর্ঘদিন ধরে পানিকে দূষিত করছে। হালদায় বর্জ্যের বিষাক্ত পানি দীর্ঘদিন জমে থাকার কারণে নদীর মিঠাপানিকে মারাক্তক দূষিত করেছে। হালদাকে দূষণ থেকে রক্ষা করতে হলে আগে বিভিন্ন কল-কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি কল-কারখানাগুলোতে বর্জ্য নিস্কাষণের ব্যবস্থা করে ইটিপির আওতায় আনতে হবে।
হালদা পাড়ের বাসিন্দারা জানান, এ নদী দূষণের জন্য দায়ী হাটহাজারীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন কল-কারখানার বর্জ্যের বিষাক্ত পানি হালদায় প্রবেশ করছে। এ কারণে চরম বির্পযয়ের মুখে রয়েছে হালদা। নামেমাত্র একটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও আরো বহু কল-কারখানা রয়েছে যেগুলো হালদায় দূষণের জন্য দায়ী। গড়দুয়ারার মৎস্য চাষী ও ডিম সংগ্রহকারী মোঃ কামাল ও ওসমানগণি বলেন, বর্তমানে হালদা নদী চরম বির্পযয়ের মুখে। এখনই যদি হালদাকে রক্ষা করা না যায় তাহলে একদিন হালদার মা-মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। মাছ মরে যাওয়ার কারণে আগামী মৌসুমে নদীতে মা-মাছ ডিম ছাড়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।
হাটহাজারী উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আজাহারুল ইসলাম বলেন, হালদার অবস্থা স্বাভাবিক হতে চলেছে। আমরা সার্বক্ষণিক নদীর বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি এবং হালদা দূষণের জন্য দায়ী কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমাদের কর্তৃপক্ষকে লিখিত সুপারিশ করেছি।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার উননেছা শিউলী বলেন, মিল-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও ময়লা-আর্বজনা হালদা নদীতে প্রবেশ না করার মতো আমরা কয়েক দিনের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে দ্রæত অভিযান পরিচালনা করবো। এ অভিযানে যদি কোন মিল-কারখানার বর্জ্য হালদায় প্রবেশ করছে এমন তথ্য বা সরেজমিনে দেখা যায় তাহলে সেই কারখানার বিরুদ্ধে তৎক্ষাণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হালদাকে ‘জাতীয় নদী’ ঘোষণার দাবি
চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম চট্টগ্রামের হালদা নদীকে ‘জাতীয় নদী’ ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমানের কাছে প্রেরিত এক পত্রের মাধ্যমে তিনি এ আবেদন জানান। পত্রে চেম্বার সভাপতি বলেন, দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে স্মরণাতীত কাল থেকে চট্টগ্রামের হালদা নদীর গুরুত্ব অপরিসীম।
তিনি বলেন, রুই, কাতলা, মৃগেল ইত্যাদি ইন্ডিয়ান কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক এ উৎস শত শত বছর ধরে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আমিষের যোগান দিয়ে আসছে। কয়েক হাজার মৎস্যজীবী হালদা থেকে ডিম ও পোনা সংগ্রহ করে তা বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। এ পোনা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে বাঙালির মাছ-ভাতের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য লালনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। হালদার কল্যাণে শত শত কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ উৎপাদিত হয়। জাতীয় অর্থনীতিতে বছরে হালদার প্রত্যক্ষ অবদান প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা এবং পরোক্ষ অবদান প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করে থাকে।
চেম্বার সভাপতি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশের ঐতিহ্য সংরক্ষণে অনেক প্রকল্প ও কার্যক্রম ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছে যা প্রশংসনীয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে হালদা নদীকে রক্ষা করা জাতীয় স্বার্থে অত্যন্ত জরুরী। দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর আমিষ সরবরাহের উৎসস্থল নির্বিঘœ রাখার প্রয়োজনে হালদা নদী রক্ষায় এ নদীকে ‘জাতীয় নদী’ হিসেবে ঘোষণা করা এখন সময়ের দাবী উল্লেখ করে চেম্বার সভাপতি অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও ঐতিহ্য বিবেচনাপূর্বক পরিবেশ দূষণ, দখল ইত্যাদি অপ্রত্যাশিত ও নেতিবাচক প্রভাব থেকে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র ‘হালদা নদীকে’ রক্ষার জন্য আবেদন জানান
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।