Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাঙলাভাষী মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক হতে পারে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৮, ৭:৪৪ পিএম

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে চার জাতিসংঘ বিশেষ র‌্যাপোটিয়ার আসামে হালনাগাদের প্রক্রিয়ায় থাকা জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধন (এনআরসি) নিয়ে ওই রাজ্যের বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ ও শঙ্কা বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। ১১ জুন লেখা চিঠিটিতে বলা হয়, মুসলিম ও বাঙালি বংশোদ্ভূতদের প্রতি বিশেষভাবে বৈরী আসামের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কৌশলের আশ্রয় নিয়ে অনেক প্রকৃত ভারতীয় নাগরিককে হালনাগাদ করা এনআরসি থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। ওই চার কর্মকর্তা জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনার হিসেবে কাজ করেন। তারা সংখ্যালঘু ইস্যু, বর্ণবাদ, বর্ণবাদগত বৈষম্য, অসহিষ্ণুতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করেন। অনলাইন প্রকাশিত চিঠিটিতে তারা ৬০ দিনের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে জবাব চেয়েছেন। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনায় ওই হালনাগাদের কাজ চলছে। ৩০ জুন চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশ করার কথা। তবে আসামের বর্তমান বন্যার কারণে তা বিলম্বিত হতে পারে। তবে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। আসামে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকদের শনাক্ত করার ব্যাপারে ব্যাপক আমলাতান্ত্রিক নীতি প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে চিঠিটিতে উল্লেখ করা হয়েছ। এতে আরো বলা হয়, চূড়ান্ত এনআরসি থেকে কাদের বাদ দেওয়া হবে তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতি প্রকাশ করা হয়নি। বলা হচ্ছে, যাদের নাম তালিকায় থাকবে না, তাদেরকে বিদেশী হিসেবে শনাক্ত করে নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে। তারপর তাদেরকে বিদেশী হিসেবে আদালতে গিয়ে নিজেদের নাগরিকত্বের বিষয়টি প্রমাণ করতে হবে। এদিকে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে। চিঠিতে গত ডিসেম্বরে স্থানীয় এক মন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরা হয়। ওই মন্ত্রী বলেছেন, ‘অবৈধ বাংলাদেশীদের’ বহিষ্কার করার জন্যই তালিকাটি হালনাগাদ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যাদের নাম তালিকায় দেখা যাবে না, তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে। গৌহাটি হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ২ মে যে আদেশ দিয়েছেন, তা নিয়েও চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এই রায় অনুযায়ী আসাম সীমান্ত পুলিশকে আদালত নির্দেশ দিয়েছে যাদেরকে বিদেশী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে তাদের স্বজনদের ব্যাপারে খোঁজ নিতে এবং তাদেরকে ‘ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে’ পাঠাতে। গত মে মাসে এনআরসির রাজ্য সন্বয়কারী দুটি নির্দেশ ইস্যু করে ‘বিদেশী ঘোষিত’দের স্বজনদের ট্রাইব্যুনালে পাঠাতে বলেছে। এই নির্দেশ বাস্তবায়নের আগে তদন্তের কোনো কথা বলা হয়নি। অর্থাৎ শুমারি কর্তৃপক্ষ কাউকে বিদেশী ঘোষণা করলে তার স্বজনরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাবে। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি ‘স্থগিত’ থাকবে। চিঠিতে বলা হয়েছে, এতে করে ভুলক্রমে ২০ লাখ নাম নাগরিকত্ব তালিকা থেকে বাদ পড়ে যেতে পারে। এ ধরনের ব্যবস্থা ২০১৩ সালে গৌহাটি হাইকোর্টের রায়ের পরিপন্থী। ওই রায়ে সুষ্ঠু ও যথাযথ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। চিঠিতে বলা হয়, আদালতের নির্দেশ ও এর ব্যাখ্যা নিয়ে অনেক লোকের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এতে বলা হয়, ১৯৮৫ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪,৬৮,৯৩৪ জনের ব্যাপারে তদন্ত শেষে ৮০,১৯৪ জনকে বিদেশী ঘোষণা করা হয়। আর ২০১৭ সালেই এই সংখ্যাটি দাঁড়ায় ১৩,৪৩৪। এতে বোঝা যাচ্ছে, বিদেশী হিসেবে ঘোষণার জন্য রাজ্য কর্তৃপক্ষের চাপ রয়েছে। এতে বলা হয়, নতুন সরকার আসার পর বেশি হারে লোকজনকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে। বিজেপির ওই সরকার ক্ষমতায় আসে ২০১৬ সালে। চিঠিতে কেন্দ্রীয় সরকারের নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, ২০১৬ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। এতে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে যাওয়া ছয় স¤প্রদায়ের সদস্যদের নাগরিকত্ব প্রদান করার কথা বলা হয়েছে। এই ছয়টি স¤প্রদায়ই অমুসলিম। প্রস্তাবিত সংশোধনীটি বাঙালি মুসলিমদেরকে ভারতীয় নাগরিকত্ব থেকে বাদ দিয়ে অন্যায়ভাবে বহিষ্কারের আশঙ্কা প্রকাশ করে। চিঠিতে বলা হয়, আসামের বাঙালি মুসলিমরা তাদের জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু মর্যাদার কারণে নাগরিকত্ব মর্যাদা লাভের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছে, এনআরসির ফলে এই বৈষম্য আরো বাড়বে। চিঠিতে স্বরাজকে আশ্বাস দিতে বলা হয় যে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়াটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রতি ভারতের বাধ্যবাধকতার আলোকে হবে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে ব্যাপক সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাঙালি মুসলিমদেরকে কেন নাগরিকত্ব বিল থেকে বাদ রাখা হয়েছে সে প্রশ্নটিও জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ