Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কেমন ছিল আসিফের জেলজীবন

বিনোদন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০১৮, ১০:১০ পিএম

মামলায় জামিন না পেয়ে বেশ কয়েক দিন জেলে কাটিয়েছেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী আসিফ আকবর। এ কয়দিন জেলে তার সময় কীভাবে কেটেছে সে অভিজ্ঞতার বর্ণনা তিনি নিজেই দিয়েছেন তার ফেসবুক একাউন্টে। তার স্বল্পকালীন জেলজীবন সম্পর্কে তিনি লিখেছেন।
আমার কয়েদী নাম্বার ২৫০২৭। কারাগারের উঁচু প্রাচীরগুলো ভয় জাগানিয়া। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঢুকলাম কারা হাসপাতালের কেবিনে । একজন মুরুব্বীর নেতৃত্বে মাগরিবের নামাজের জামাত চলছে। বাইরে ঝোলানো ভয়ানক তালা, ঢুকতে হলো চার দেয়াল আর লোহার গরাদ বেষ্টিত কক্ষটিতে। মনে হচ্ছিলো- বাবা মা হারিয়ে ফেলা অনাথ আশ্রমে আশ্রয় পাওয়া এক এতিম আমি। শত সহস্র অনুসন্ধিৎসু চোখের আড়ালে নিজেকে লুকানো অসম্ভব। চোখ ভিজে আসতে চাইছে। দৃঢ়তা আর সততার ট্যাবলেট খাওয়া সিদ্ধান্ত, নাহ্, পানি বের হতে দেয়া যাবে না, শুধু রক্তই বেরুতে পারে। ব্যাগটা রেখে গোসলে গেলাম। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তাড়াহুড়োয় আনা হয়নি, এগিয়ে এলো আরেক কয়েদী প্লাস রাইটার শাওন। তার অধীনেই চলে এই অবরুদ্ধ কক্ষটি। সবাই তাকাচ্ছে আমার দিকে, আমি কুঁকড়ে আছি নতুন পরিচয় হজমের আতঙ্কে। কবে আসবে রূপকথার ফিনিক্স পাখীটা ! আর কতদিন গল্প শুনে যেতে হবে! আমিই তো ফিনিক্স, আজন্ম এক যোদ্ধা, আমার অদম্য অগ্রযাত্রা থামবে শুধু মৃত্যুতেই। মুহূর্তেই ঝেড়ে ফেললাম অতীত, মুখে নিয়ে আসলাম বিজয়ীর হাসি। সবার সাথে হাত আর বুক মেলানো শুরু করলাম। কিছু কয়েদী এগিয়ে এলেন, আর কিছু আছেন অবজারভেশনে। এর মধ্যে খুনে চোখ, অসহায় চোখ, ভালবাসার চোখ, সন্দেহের চোখ, করুণার চোখ, নেশার চোখ, বন্ধুত্বের চোখ সবই আছে। নানান চোখের নানান ভাষা, ওগুলো পরেও পড়া যাবে। সারাদিন কিছু খাইনি, আগে একটু খেয়ে নেই, অনেক ক্ষুধা পেয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠতে চাই না, দিন বড় হয়, ঝামেলাও বড় হয়। দুপুরের আগে আমাকে দেখতে আসলেন আগে থেকেই কারাবন্দি ভাই ব্রাদাররা, তাদের পেয়ে ভালো লাগলো। তারপর অফিস কলে চলে আসলাম, ঢাকা থেকে আমার বস শওকত আলী ইমন ভাই এসেছেন, প্রথম ভিজিটর, সঙ্গে স্বপ্ন প্রধান ভাই আর গীতিকার দ্বীপ। আলাপের ফাঁকে ইমন ভাই সমস্যা সমাধানে জোর দিচ্ছিলেন। উনার পরিকল্পনা শেয়ার করলেন। তারপর আসলো রণ-রুদ্র (দুই ছেলে) আর বেগম (বেগম সালমা আসিফ)। তাদের সঙ্গেও সময় কাটালাম, ছেলেদের মানসিকতা দৃঢ়। বেগমকে শুধু বলে দিলাম কোনও ডিলে যাওয়া যাবে না। কাউকে ঘুষ দেয়ার জন্য আমার পরিশ্রমের রোজগার না। প্রয়োজনে আমি আরো জেলে থাকবো, কারও কাছে মাথা নত করার সুযোগ নেই। সততাই আমার শক্তি, আইনী প্রক্রিয়ায়ই নিজেকে অভিযোগের খড়গমুক্ত করবো। ফিরে এলাম কেবিনে, জমে গেলো আড্ডা। সন্ধ্যায় ইফতারী আর রাতে খাবার একসাথে করলাম সবাই। একসাথে বাংলাদেশের খেলা দেখলাম, তুমুল আড্ডা শুরু হলো। একে একে সবাই নিজেদের পরিচয় এবং এখানে আসার বিবরণ দেয়া শুরু করল। ছোট্ট সবুজ (ছদ্মনাম) কীভাবে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হয়ে উঠলো। রাজনৈতিক গডফাদার, পরিবারের অসহায়ত্ব, নিজেদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে কথা বলতে বলতে মানুষগলো শিশু হয়ে গেলেন। তাদের কথা বার্তা হাসি ঠাট্টা, আবার ছোটবাচ্চা, মা স্ত্রীর জন্য হাহাকারের অনুভ‚তি আমাকে মুগ্ধ করেই যাচ্ছে। এরা আসলেই অপরাধী নয়, সমাজ এবং সিস্টেম তাদের অপরাধী বানিয়েছে। তৃতীয় দিন সেলে সেলে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমি যেদিন গ্রেফতার হই, ঐদিন আমার বিদেশী বন্ধু আর বড় ভাইরা একসাথেই সেহরী করার কথা। তৃতীয় দিন আসলেন মালয়েশিয়ার আনিস ভাই আর কুমিল্লার জসিম ভাই। তারা এসে পিসি (প্রিজনারস ক্যাফেটেরিয়া) তে টাকা জমা দিলেন। অন্যান্য আনুষ্ঠিকতা শিখে গেলাম। প্রয়োজনীয় জিনিস আনতে লিস্ট বানিয়ে দিলাম। সাক্ষাৎ শেষে কারা কেবিনের পথে যেতে হাজারো কয়েদীর ভীড়ে পড়ে আমার সঙ্গে থাকায় শাওন হারিয়ে গেলো। কয়েদিদের উচ্ছ¡াস শ্লোগান আর বিরক্তিকর সেলফিমুক্ত পরিবেশে কেবিনে ফিরলাম। এখন আর খারাপ লাগছে না, মনে হচ্ছিল এই কারাগারের অনেক পুরনো বাসিন্দা আমি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জেলজীবন
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ