গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রফিকুল ইসলাম সেলিম : কিশোরদের কিসের আড্ডা? কি নিয়ে আড্ডা? চট্টগ্রাম নগরীর সড়ক মোড়, অলিগলি, খোলা চত্বরে কিশোর আর উঠতি যুবকদের জটলা আর আড্ডা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ বলছে এসব আড্ডায় নেই খোশ গল্প, সাহিত্য-সংস্কৃতি কিংবা কোন সৃষ্টিশীলতার কথা। এসব আড্ডাস্থলে আছে বখাটেপনা, অনৈতিক বিষয় নিয়ে রস আলোচনা। আড্ডার আড়ালে চলে রক্ত ঝরানোর পরিকল্পনা। প্রতিশোধের আগুন জ্বালানোর বারুদের জোগান দেয় এসব আড্ডা।
কিশোরদের এমন আড্ডাকে ঘিরে নগরীতে একাধিক সংঘাত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এমন আড্ডা থেকে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই হয়েছে অনেকবার। হয়েছে মারামারি, খুনোখুনি। মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন, স্কুল কলেজগামী ছাত্রীদের ইভটিজিংয়ের উৎস এসব আড্ডা। এখান থেকে গড়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং। যারা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। আর এই অপকর্মের মূলে রয়েছে একশ্রেণির বড়ভাই। তারা মূলত এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে এসব উঠতি যুবক ও কিশোরদের বিপদগামী করছে।
নিজের দলভারী করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর পথে ঠেলে দিচ্ছে প্রতিভাবান ও সম্ভাবনাময় অনেক কিশোর তরুনকে। এদের আড্ডাস্থল সাধারণ মানুষ আর পথচারীদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিষ্ট নগরবাসী, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা অভিভাবকদের মধ্যে। কখন কার সন্তান এসব আড্ডায় জড়িয়ে যায়। অথবা বাসা ফেরার পথে কার মেয়ে ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। তবে দেরিতে হলেও এসব আড্ডাবাজদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে পুলিশ। ইতোমধ্যে পুলিশ ঘোষণা দিয়েছে সন্ধার কোন এলাকায় কিশোরদের এমন আড্ডায় দেখলে তাকে আটক করা হবে। গত দুই দিনে নগরীর চেরাগীর মোড়সহ কয়েকটি এলাকায় অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ।
নগরীর শতাধিক স্পটে এমন আড্ডা বসছে। কিশোর আর উঠতি যুবকরা এসব আড্ডায় শামিল হচ্ছে। নগরীর চেরাগী পাহাড়, জামাল খান মোড়, স্টেডিয়াম এলাকা, নেভাল এভিনিউ, সিআরবি সাত রাস্তা, অভয়মিত্র ঘাট, জিইসি মোড়, চকবাজারের গুলজার মোড়, প্যারেড কর্নার, প্রবর্তক মোড় ছাড়াও বিভিন্ন মার্কেট, বিপনী কেন্দ্রের সামনে, আবাসিক এলাকার গেইট কিংবা কোন সড়কে, পার্ক ও পর্যটন কেন্দ্রের প্রবেশ পথে, স্কুল কলেজের সামনে প্রতিদিন বিকালে জড়ো হচ্ছে কিশোর যুবকরা। তাদের জটলা আর আড্ডা চলছে গভীর রাত পর্যন্ত। নগরীর অলিগলিতে গড়ে উঠা মিনি চাইনিজের দোকান ও আশপাশেও চলছে কিশোর-কিশোরী আর তরুন-তরুনীদের আড্ডা।
স্কুল কলেজের ক্লাশ ফাকি দিয়ে একশ্রেণির শিক্ষার্থী এসব রেঁস্তেরায় সময় কাটাচ্ছে বন্ধু, বান্ধবীদের নিয়ে। নানা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে তারা। বখাটেদের আড্ডা চলতে থাকে স্কুল কলেজ কোচিং সেন্টারের সামনে, কখনো আবার পাড়ায় পাড়ায় গলি উপ-গলিতে। পুলিশ বলছে নগরীর বিভিন্ন এলাকার রাজনৈতিক দলের ক্যাডার মাস্তান ও নেতারা এসব কিশোর তরুনদের দলে ভেড়াতে আড্ডার নামে আসর বসানোর ব্যবস্থা করছে। তারা কিশোর তরুনদের উম্মাদনাকে পূঁজি করে তাদের দলভারি করছে। তাদের হাতে অস্ত্র মাদক তুলে দিচ্ছে। প্রতিপক্ষের উপর লেলিয়ে দিচ্ছে। তারা খুনের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
নগরীর জামালখানে কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণি এক ছাত্রকে এমন একটি গ্রæপ বড় ভাইয়ের নির্দেশে প্রকাশ্যে রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করে। এমন অপর একটি গ্রæপের সদস্যরা নগরীর ষোলশহর ২ নং গেইট এলাকায় চেকপোস্টে এক পুলিশ সদস্যকে গুলি করে। সম্প্রতি নগরীতে ইংরেজী মাধ্যমের ছাত্রী তাসফিয়া আমীন খুনের ঘটনাও জড়িত এমন একটি কিশোর গ্যাং। ঈদের পরদিন রাতে নগরীর হালিশহরে এক কিশোরকে হত্যা করার ঘটনায় পুলিশ দশ কিশোরকে আটক করে। তারা স্বীকার করেছে পাড়া কেন্দ্রিক আড্ডা থেকেই তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এখন তারা প্রতিপক্ষকে হুমকি-ধমকি দেওয়ার পাশাপাশি ছিনতাই, দস্যুতার মতো অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে। নগরীর চট্টেশ্বরী রোডের একটি মিনি চাইনিজে এক তরুনী তার প্রেমিকের হাতে ছোরা তুলে দিচ্ছে, কিছুক্ষণ পর ওই যুবক ঝাপিয়ে পড়ছে অপর এক যুবকের উপর। ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত ওই যুবক তরুনীর সাবেক প্রেমিক। সিসিটিভিতে ধরা ওই ফুটেজ এখন ফেইসবুকে ভাইরাল। পুলিশ বলছে নগরীতে আরও কয়েকটি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনায় এসব উঠতি কিশোর যুবকরা জড়িত। সরকারী দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের বিরোধে নগরীতে যে কয়টি খুনের ঘটনা ঘটে তাতেও অংশ নেয় এসব কিশোর যুবকেরা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম বলেন, কিশোরদের যে আড্ডা তা কোন সৃজনশীল আড্ডা নয়। আমরা এটা নিশ্চিত হয়েই অভিযান শুরু করেছি। তবে এমন অপরাধ পুলিশের একার পক্ষে দমন করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের ও এগিয়ে আসতে হবে। উঠতি বয়সী সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, সময় অনুযায়ী বাসায় ফিরছে কিনা তা দেখা অভিভাবকের যেমন দায়িত্ব তেমনি নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে কিনা তাও শিক্ষকদের দেখতে হবে।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, নগরীতে শতাধিক আড্ডাস্থল চিহ্নিত করা হয়েছে। কোতোয়ালী থানা এলাকায় সবচেয়ে বেশি ৩২টি স্পট চিহ্নিত হয়েছে। এসব এলাকায় অভিযান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেককে আটক করে মুচলেকা নিয়ে তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, অভিযান চলবে। বাইকস্টার হিসাবে পরিচিতদের বিরুদ্ধেও অভিযান শুরু হয়েছে। নগরীর চেরাগীর মোড়, জামালখান, সিআরবি, দিদার মার্কেট এলাকায় গতকালও অভিযান চলে। ওসি জানান, সন্ধার পর ঘুরাফেরা করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা প্রথম অবস্থায় তাদের আটক করে থানায় এনে অভিভাবকের জিম্মায় দিচ্ছি এবং ডাটাবেইজে তাদের তথ্যাবলী সংযুক্ত করছি। যাতে দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।