পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন, ইয়াছিন রানা ও মোঃ দেলোয়ার হোসেন গাজীপুর থেকে ফিরে : গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোটের আর বাকী মাত্র তিন দিন। এই সময়ে যে কোন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা থাকে তুঙ্গে। প্রার্থী-সমর্থক ও ভোটাররা নির্বাচন নিয়ে তর্ক-বিতর্ক লিপ্ত থাকেন। সর্বত্রই বিরাজ করে নির্বাচনী উত্তেজনা। ভোটারদের মাঝে বিরাজ করে ভোটের আমেজে। কিন্তু গাজীপুরে যেন তার ভিন্ন চিত্র। কেবল বড় দুই দলের প্রার্থী এবং কিছু কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে প্রচারণা। বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান সরকার ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটছেন; কাউন্সিলর প্রার্থীরাও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। জয় পেতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন তারা। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে জনমত তৈরি করতে ঢাকা থেকে গাজীপুরে গিয়ে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। একাদশ সংসদ নির্বাচন কাছাকাছি হওয়ায় গাজীপুর নিয়ে উত্তপ্ত জাতীয় রাজনীতি। জয়-পরাজয় দুটিতেই রাজনীতি রয়েছে উভয় দলের। তবে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে যতটা উত্তেজনা কাজ করছে তার ছিটে ফোটাও নেই ভোটারদের মাঝে। নির্বাচন নিয়ে যেন তাদের কোন আগ্রহই নেই। গতকাল শুক্রবার মহানগরের বেশিরভাগ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ছুটির দিন হলেও জমেনি প্রচারণা। এলাকাগুলোতে রাস্তার উপরে লম্বালম্বি করে মেয়র-কাউন্সিলরদের পোস্টার সাটানো। ভোটারদের কাছে নির্বাচনের অবস্থা, প্রার্থীদের কাকে সম্ভাব্য বিজয়ী মনে করছে, কেমন নির্বাচন হবে? জানতে চাইলে সকলের নিরস উত্তর- এই নির্বাচন নিয়ে আপনারা (গণমাধ্যম) যতটা ভাবছেন আমরা এর কিছুই ভাবছি না। প্রথম দফায় নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়া এবং খুলনায় নতুন মডেলের নির্বাচন হওয়ার কারণেই তাদের এই অনিহা তৈরি হয়েছে বলে জানান ভোটারদের কেউ কেউ। তাদের মন্তব্য, ‘নির্বাচনের তারিখ পেছানোর আগে সবার মাঝে একটা উত্তেজনা ছিল কিন্তু এখন তেমন কিছুই নেই। তবে ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে তারা ভোট দেবেন বলে জানান।
চেরাগআলী এলাকায় রফিকুল ইসলামের চায়ের দোকানে কয়েকজনের সাথে আলাপকালে তারা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রথম দফায় স্থগিত হওয়ার আগে ভোটারদের মধ্যে যে আগ্রহ ও জমজমাট প্রচার-প্রচারণা ছিল এখন সেটা আর নেই। তারা বলেন, ওই সময় ভোটের হাওয়া বিএনপির প্রার্থীর পক্ষেই ছিল। কিন্তু খুলনায় নির্বাচন দেখার পর সবাই এখন হতাশ। ভোটাররা ভোট দিতে পারবে কিনা তা নিয়েই সংশয়ে আছে। নেত্রকোণা থেকে টঙ্গীতে এসে ভোটার হওয়া করিমুল ইসলাম বলেন, ভোট নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন উত্তেজনা কাজ করছে না। ভোট আর কি হবে? আওয়ামী লীগ তো এমনিতেই জিতে যাবে। বিএনপির প্রার্থীরা তো প্রচারণা চালাতেই পারছে না। গাজীপুর চৌরাস্তার ডাব দোকানদার রহমত আলীর কাছে ভোটের খোঁজখবর জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারাই তো দেখছেন, চৌরাস্তার অবস্থা দেখে কি মনে হয় চার দিন (এখন তিন দিন) পরে এখানে ভোট হবে! অন্য সময়ে ভোটের আগে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করে। প্রচার-প্রচারণা থাকে তুঙ্গে। ভোটারদের মধ্যেও ভোট নিয়ে থাকে বাড়তি আগ্রহ। কিন্তু এখন এর কিছু দেখা যাচ্ছে না। আগ্রহ না থাকার কারণ কি জানতে চাইলে রহমত বলেন, ভোট কি দিতে পারবো? তবে সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি এই সিটিতে বিজয়ী হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
চান্দনা এলাকার ব্যবসায়ী শামীম জানান, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একতরফা প্রচার চালাচ্ছে। বিএনপির তেমন প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ওই এলাকায় কোন দলের প্রার্থী ভোট বেশি পাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাজীপুর শহরের ছেলে হিসেবে জাহাঙ্গীর আলমই বেশি ভোট পাবেন। কারণ তাকে এলাকায় যে কোন প্রয়োজনেই কাছে পাওয়া যায়। তার পাশেই বসে পঞ্চাশোর্ধ্ব আমিরুল ইসলাম কোন রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়, ব্যক্তিকে ভোট দিতে চান। তিনি বলেন, হাসান সরকারের বাড়ী টঙ্গীতে আর এলাকার মানুষ হিসেবে গতবার আমরা আব্দুল মান্নানকে ভোট দিয়েছিলাম, এবার জাহাঙ্গীর আলমকে দিব।
ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ না থাকলেও দুই দলের প্রার্থী দৌড়ঝাঁপ করছেন সবখানেই। অভিযোগও করছেন পাল্টাপাল্টি। প্রশাসনকে ব্যবহার করে সরকারি দল আওয়ামী লীগ সুবিধা নিচ্ছে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচন নিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট না করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি প্রার্থীর প্রতি।
বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার সকালে প্রচারণাকালে প্রতিদিনই প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে। নেতা-কর্মীকে ধর পাকড়, ভয় দেখানো, ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে হুমকি ধমকি দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপির এই প্রার্থী বলেন, পুরো পরিস্থিতিই এখন পক্ষপাতদুষ্ট। এ অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে ভোট সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। ভোটে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতের ক্ষেত্র (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নষ্ট হবে। প্রশাসন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে অভিযোগ করে হাসান সরকার বলেন, আপনারা (প্রশাসন) নিরপেক্ষ থাকুন। আপানারা চেষ্টা করলে ভোট সুষ্ঠু হবে। তা না হলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব। জীবনের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। এ পর্যায়ে এসে ভোট চুরির বিরুদ্ধে যা করা দরকার করব। নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যা আন্দোলন করা দরকার করব। গাজীপুরের ভোটাররা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারলে ধানের শীষ বিজয়ী হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে, ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে এসে নিজেদের ভোট নিজেরা প্রয়োগ করতে পারলে আমরা বিজয়ী হবো। তবে কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, ভোট চুরির চেষ্টা করা হলে জনগণই তা রুখে দেবে বলেও সতর্ক করে দেন হাসান সরকার। জুমার নামাজ আদায়ের আগে জয়দেবপুরের পর গাজীপুর সদরের কয়েকটি এলাকায় তিনি প্রচার চালান। টিঅ্যান্ডটি রোডের এক মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করেন তিনি। নামাজের পরপর মসজিদে উপস্থিত মুসল্লিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে ভোট চান।
এদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় একটি মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করেন। তিনিও নামাজ শেষে মুসল্লিদের কাছে ভোট চান। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় আছে। বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁরা হেরে যাওয়ার ভয়ে আছেন। মানুষ তাঁদের সঙ্গে নেই বুঝেই এমন অভিযোগ করছেন। সব প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ দেখছি। আমরা সবাইকে প্রচার চালাতেই ব্যস্ত দেখতে পাচ্ছি। বিএনপি প্রার্থীর উদ্দেশে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখানে এর আগে আপনাদের (বিএনপি) দলের প্রার্থী মেয়র ছিলেন। তিনি কোনো উন্নয়ন করেননি। আপনি বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা। অপপ্রচার না চালিয়ে জনগণের কাছে গিয়ে বোঝান আপনি কী করতে চান। অপপ্রচার চালিয়ে গাজীপুরে ভোটের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করবেন না।
শুক্রবার সকাল থেকেই প্রার্থীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও তাদের সাথে প্রচারণায় অংশ নেন। হাসান সরকারের সাথে প্রচারণা ছিলেন বিএনিপর স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রধান সমন্বয় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন। বিচ্ছিন্নভাবে প্রচার চালিয়েছেন বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, ফরহাদ হালিম ডোনার, আবুল খায়ের ভূইয়া, ডা. এ জেড এম জাহিদ, শওকত মাহমুদ, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ইমরান সালেহ প্রিন্স, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীসহ অনেকেই। অন্যদিকে জাহাঙ্গীর আলমের সাথে অংশ নেন খুলনার নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেইন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে পৃথকভাবে গাজীপুর শহরে প্রচারণা চালান।
এদিকে বিএনপি অভিযোগ জানিয়েছে, গত বুধবার দিবাগত রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ১০-১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। দলটির পক্ষ থেকে নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হচ্ছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।