পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার মাধ্যমে চীন থেকে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আনতে চায় বাংলাদেশ। চীনের লক্ষ্য বাংলাদেশে পণ্য রফতানি বাড়ানো। এ অবস্থায় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ হলে বাংলাদেশ-চীন কতটুকু লাভবান হবে সে বিষয়ে দুই দেশের যৌথ সমীক্ষা যাচাই গ্রæপের দু’দিনব্যাপী বৈঠক গতকাল বুধবার শুরু হয়েছে বেইজিংয়ে। সূত্র জানায়, দুই দেশের মধ্যে এফটিএ-বিষয়ক প্রথম এই বৈঠকে ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। বাংলাদেশের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এ বৈঠকে অংশ নিচ্ছে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম।
সূত্র আরো জানায়, দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে চীন থেকে বাংলাদেশ বছরে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করে। বিপরীতে বাংলাদেশ চীনে রফতানি করে বছরে মাত্র এব বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এছাড়া এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টের (এপিটিএ) আওতায় ২০১০ সাল থেকে চীনের বাজারে চার হাজার ৮৮৬টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে দেশটির পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব দেয়া হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৬ সালের অক্টোবরে ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে এফটিএ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি যৌথ সমীক্ষা যাচাই গ্রæপ গঠনে সমঝোতা স্মারক সই হয়। সে অনুযায়ী দুই দেশ গ্রæপ গঠন করে। এ গ্রæপ দুই দেশের এফটিএ’র সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কাজ করছে।
এফটিএ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের অবকাঠামো ও সার্ভিস খাতে বিনিয়োগ চাওয়া হবে। বরাবরই পণ্য রফতানিতে চীনের বড় বাজার বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে চুক্তি হলেও পণ্য রফতানি করে চীনের বাজার ধরা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই এফটিএ’র আওতায় চীনের বিনিয়োগ আনাই মূল লক্ষ্য বাংলাদেশের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
জানা গেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে প্রায় কয়েক বছর আগে চীন থেকে প্রথম এফটিএ করার বিষয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়। শুরুতে চীনের এই প্রস্তাব নিয়ে সরকারী-বেসরকারীখাত তেমন আগ্রহ না দেখালেও এখন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হচ্ছে। যদিও ব্যবসায়ী মহলে এফটিএ করার বিষয়ে বিরোধিতা রয়েছে। তাদের মতে, এ ধরনের চুক্তি হলে চীনা পণ্য শুল্কমুক্তভাবে ঢুকে স্থানীয় শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। দেশীয় শিল্প বিকাশের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। আর তাই চীনের সঙ্গে এফটিএ করার আগে এ নিয়ে উচ্চমানের সমীক্ষা প্রয়োজন। এ ছাড়া স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণ করতে হবে।
উদ্যোক্তাদের মতে, এখনও প্রায় ৪০ শতাংশ পণ্যে উচ্চ শুল্ক দিয়ে দেশটির বাজারে প্রবেশ করতে হয়। বড় বাজার চীনে সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলে রফতানি বাড়বে বর্তমানের কয়েকগুণ। এরপরও ভয় আছে, দেশের আমদানিকৃত পণ্যের বেশিরভাগ পণ্যসামগ্রী চীনে তৈরি হয়ে থাকে। এ অবস্থায় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা হলে চীনা পণ্যের বাজার সয়লাব হয়ে যাবে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ হেলাল উদ্দীন ইনকিলাবকে বলেন, এটা আমাদের জন্য অবশ্যই ভাল হবে। এক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ ও সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে চীনের কাছে দাবি করতে হবে। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে এফটিএ করার আগে দু দেশের যৌথ সমীক্ষা প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, আমাদের বাজার কোন ঝুঁকির মুখে পড়বে কী না সেটার চুলচেরা বিশ্লেষণ হওয়া উচিত। হেলাল উদ্দীন বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজার চীনা পণ্যের দখলে। অন্যদিকে, দেশে দেশীয় শিল্পের বিকাশ হচ্ছে। নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে। দেশের গার্মেন্টস, প্লাস্টিক, চামড়া, ওষুধ ও পাটজাতপণ্যখাত দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় চীনের সঙ্গে এফটিএ করার আগে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতামত গ্রহণ করতে হবে।
এদিকে, সম্প্রতি ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ সইয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তার মতে, এফটিএ হলে বাণিজ্য বৈষম্য কমবে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব অনেক পুরনো। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২৭টি উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে চীনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে, কর্ণফুলী টানেল উন্নয়ন, পয়ঃনিষ্কাশন ট্রিটমেন্ট প্লান্ট উন্নয়ন, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নসহ একাধিক খাতে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক সামনের দিকে আরও এগিয়ে নিতে চায় চীন। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে ঢাকার পাশে থাকবে বেইজিং।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ-চীন আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বর্তমানে ৮৪০ কোটি ডলার। চীনে রফতানি তালিকায় উল্লেখযোগ্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, চা, চামড়া, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষি পণ্য প্রভৃতি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, এশিয়া প্যাসিফিক বাণিজ্য চুক্তির (এপিটিএ) আওতায় ২০১০ সাল থেকে চীনের বাজারে চার হাজার ৮৮৬টি পণ্যেও শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এফটিএ করার ক্ষেত্রে বেইজিংয়ের যুক্তি হলো, এফটিএ’র মধ্য দিয়ে ঢাকায় চীনের বিনিয়োগ বাড়বে। সেই সঙ্গে ঢাকার রফতানিও হবে বহুমুখী।
বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ও সচিব জহির উদ্দিন আহমেদ এনডিসি ইনকিলাবকে বলেন, যৌথ সমীক্ষা ও চুক্তি এক জিনিস নয়। এ ধরনের চুক্তি করার আগে বহু পক্ষের মতামত গ্রহণ ও সমীক্ষা প্রয়োজন হয়। আলোচনা চলছে, চলবে। এ নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। সরকার কাজ করছে। আরও ২/১ বছর সময় লাগবে। পরবর্তী বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, চীনের চাহিদা আছে। কিন্তু দেশের স্বার্থ সবার আগে। বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য কিংবা শিল্পগ্রস্ত হয় এমন কোন বিষয় আছে কী না সেটা যাচাই করা হবে। একই সঙ্গে কোন কোন খাতে বিনিয়োগ হবে, কীভাবে সেটা হবে তারও বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
সূত্রগুলো আরো বলছে, এফটিএ চুক্তি নিয়ে তাড়াহুড়া করতে চায় না ঢাকা। কেননা বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঢাকা বেইজিং থেকে বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করলেও রফতানি করে মাত্র ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। তাই এমন সিদ্ধান্তই সরকার নিবে যাতে আমরা লাভবান হই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।