Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নেপাল ও চীন একত্রে কাজ করবে

| প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি বলেছেন, অভিন্ন উন্নয়ন, স্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য পারস্পরিক আস্থা, বন্ধুত্ব ও সমঝোতা এবং ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার চেতনা নিয়ে বেইজিং ও কাঠমান্ডু ভবিষ্যতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবে। গত মঙ্গলবার বেইজিংয়ে নেপাল দূতাবাসের দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে ওলি আরো বলেন, নেপাল-চীন বন্ধুত্ব ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতায় নবযুগের সূচনা হিসেবে একটি আন্তঃসীমান্ত রেলওয়ে অবকাঠামো চুক্তি এগিয়ে নিতে নেপাল ও চীন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, ‘রেলওয়ে ছাড়াও দুই দেশ সড়ক, বিমান, যোগাযোগ ও জ্বালানির একটি বহুমাত্রিক কানেকটিভিটি উন্নয়নের জন্য কাজ করবে।’
২০১৬ সালে মার্চে তার আগের সফরের কথা স্মরণ করে নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলেন, অঞ্চল ও সড়ক উদ্যোগের আওতায় নেপাল ও চীন উন্নয়নের অংশীদার হতে রাজি হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, প্রাচীন সিল্ক রোডের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে সমৃদ্ধ ব্যবসা ও বাণিজ্য থেকে নেপাল ও চীন ব্যাপক উপকৃত হয়েছে। দুই দেশ আবারো দক্ষিণাঞ্চলীয় সিল্করোড পুনরুজ্জীবিত এবং পরস্পরের সুফলের জন্য তাদের অর্থনীতির আরো উন্নয়ন ঘটাবে।
নেপাল ও চীনের সম্পর্কটি সভ্যতার ইতিহাস দ্বারা গ্রন্থিত উল্লেখ করে ওলি বলেন, এই ভূমিতেই শাক্যমুনি ও কনফুসিয়াসের জন্ম। দুই দেশের মধ্যে গভীর আস্থা ও বোঝাপড়ার সম্পদ নিয়েই তিনি আবারো চীন সফরে এসেছেন। ওলি বলেন, ‘সহিষ্ণুতিা, দয়া, সংযম ও সংহতি আমাদের অভিন্ন ঐতিহ্য। অনুষ্ঠানে নেপালের প্রধানমন্ত্রী নেপাল দূতাবাসের অফিসিয়াল উইচ্যাট একাউন্ট এবং নেপালে পর্যটন ও বিনিয়োগের সুবিধা তুলে ধরে একটি বিশেষ প্রকাশনা উদ্বোধন করেন।
নেপাল-চীন সম্পর্ক গতিশীল করা ও ভারতীয় প্রভাবের বিরুদ্ধে ভারসাম্য তৈরিই ওলির সফরের লক্ষ্য
স্থলবেষ্টিত নেপাল চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের অধীনে সীমান্ত দিয়ে রেল সংযোগ স্থাপন, অবকাঠামো উন্নয়ন, বাণিজ্য ও পর্যটন কর্পোরেশনের প্রসারের ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহী। প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি এ কথা বলেছেন।
১৯ থেকে ২৪ জুন চীন সফরে রয়েছেন ওলি। সফরে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে বেশ কিছু প্রকল্প ছাড়াও ভারত-নেপাল-চীন ইকোনমিক করিডোর নির্মাণে চীনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুণরায় নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো চীন সফরে যাওয়ার আগে ওলি বলেছিলেন, দুই বছর আগে চীনের সাথে বিআরআই নিয়ে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেটা বাস্তবায়নের ব্যাপারে তার সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
২০১৩ সালে বিআরআই প্রকল্পের পরিকল্পনা প্রকাশ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, মধ্য এশিয়া, উপসাগরীয় অঞ্চল, আফ্রিকা এবং ইউরোপের মধ্যে স্থল এবং সমুদ্রপথে সংযোগ স্থাপনই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। তবে নেপালের আরেক বড় প্রতিবেশী ভারত বিআরআই প্রকল্পের স্বীকৃতি দেয়নি কারণ এই প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ৫০ বিলিয়ন ডলারের চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উপর দিয়ে গেছে। ভারত বলেছে, যে প্রকল্পটি তাদের আঞ্চলিক অখÐতা এবং সার্বভৌমত্বের শর্ত লঙ্ঘন করেছে, সেটাকে তারা স্বীকৃতি দিতে পারে না।
ওলি অবশ্য আশা করছেন চীন-নেপাল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আবার গতি ফিরে পাবে। কারণ কয়েকটি অবকাঠামো প্রকল্প নিয়ে চীনের সাথে নেপালের মতভেদ রয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, ওয়েস্ট সেটি পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের শর্ত নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। চীন অভিযোগ করেছে সেখানে ‘কাজের উপযুক্ত পরিবেশ’ নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী ওলি পরে মতভেদের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পটির সক্ষমতা কমিয়ে আনা হতে পারে যাতে করে নির্মাণ খরচ কমিয়ে আনা যায়। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে যুবরাজ ঘিমাইরের এক রিপোর্টে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
নেপালে ১৫টি প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে চীন। এর মধ্যে রয়েছে চারটি পানিবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট, পোখারায় দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণসহ আরও ১৪টি অন্যান্য প্রকল্প। হংকং-ভিত্তিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট স¤প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে।
জ্বালানি মন্ত্রী বার্শামান পুনকে উদ্ধৃত করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ওলি ৪০০ কিলোভোল্টের ক্রস-বর্ডার সরবরাহ লাইন স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা করবেন। এই সরবরাহ লাইনের ৮০০ কিলোমিটার নির্মিত হবে চীনের ভেতরে আর নেপালের ভেতরের ৮০ কিলোমিটার চলে যাবে রাজধানী কাঠমাÐু পর্যন্ত। বেইজিংয়ে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সাথে বৈঠক করবেন ওলি। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে বেশ কিছু অবকাঠামো প্রকল্প নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে।
ওলি বলেন, “ট্রান্স-হিমালয়ান বহুমুখী পরিবহন নেটওয়ার্ক নিয়ে আমাদের দুই দেশের দৃষ্টিভঙ্গি একই। বিস্তৃত ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে চীনের সাথে ক্রস-বর্ডার রেল সংযোগ, সড়ক, সরবরাহ লাইন এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে চাই আমরা যাতে দুই পক্ষই এখানে লাভবান হয়”।
এক-চীন নীতির প্রতি নেপালের দীর্ঘদিনের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে ওলি বলেন, “চীন আমাদের কাছের প্রতিবেশী। আমাদের দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী ও গভীর বন্ধুত্বের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে আমাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে”।
তিব্বতের কেরুংয়ের সাথে কাঠমাÐুর রেল সংযোগ স্থাপনের জন্য সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করবে নেপাল। রেলওয়ে স্থাপনের ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে এবং চার বছরের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিব্বতী শরণার্থীদের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী ওলি বলেন, নেপালের ভূখÐ কোনভাবেই চীনবিরোধী কর্মকাÐের জন্য ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। চীন তিব্বতী শরণার্থীদের বিচ্ছিন্নতাবাদী মনে করে এবং তিব্বত স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলকে তারা অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে বলে তাদের ধারণা। ওলি বলেন, “চীন সবসময় নেপালের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখÐতা এবং স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা করেছে। নেপালের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় তারা উল্লেখযোগ্য সহায়তা দিচ্ছে”।
ওলির চীন সফরকে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা হিসেবেও দেখা হচ্ছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গত ফেব্রæয়ারিতে প্রথমে তিনি ভারত সফর করেছেন। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ