পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : দুই বছর আগে ২০১৬ সালে চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এক বছর যেতে না যেতেই এ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পেভমেন্টে (পিচ ঢালাইয়ে) ফাটল এবং পটহোল (গর্ত) দেখা দিয়েছে। আবার যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত আট লেনের মহাসড়কের অনেক অংশেও পেভমেন্টে ফাটল দেখা দিয়েছে। পিচ ঢালাই উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন মহাসড়কও উদ্বোধন করা হয় ২০১৬ সালে। দুই বছরের আগেই এ মহাসড়কেও বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। কিছু অংশ যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি মহাসড়ক ছাড়াও চট্টগ্রামের আরাকান-বহদ্দারহাট, কুষ্টিয়া থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, গৌরনদী- গোপালগঞ্জ-খুলনা, পাগলা-জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ-আউশকান্দি, ঢাকা-বরিশালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণের বছরখানেকের মধ্যেই খানাখন্দ ও ভাঙাচোরা দেখা দেয়। এভাবে প্রতি বছর ভাঙাচোরা মেরামত করতে করতে আসে ঈদ, আসে বর্ষা। সময়ের স্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হয়। কয়েকদিনের মধ্যে তা আবার নষ্ট হয়ে যায়। সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কজুড়ে চলছে মেরামত-সংস্কার খেলা। অথচ সঠিক পরিকল্পনার অভাবে স্থায়ী কিছু হচ্ছে না। যে কারনে দুর্ভোগও পিছু ছাড়ছে না। এ প্রসঙ্গে এলজিইডি’র সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শহীদুল হাসান ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের দেশে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে দর ধরা হয় সর্বোচ্চ কিন্তু কাজের মান হয় সর্বনি¤œ। এটাই মূল সমস্যা। তিনি বলেন, সাধারণত সড়ক-মহাসড়কের স্ট্রাকচার ডিজাইন করা হয় ১৫ থেকে ২০ বছরের জন্য। এরপর এর সারফেস থাকে প্রথমে ৫ বছর, পরের বার তিন বছর। এর মধ্যে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষন করা হলে সেই সড়ক অনেক দিন টিকতে বাধ্য। কিন্তু সঠিকভাবে তা করা হচ্ছে না বলেই একটার পর একটা ভেঙে একাকার হয়ে যাচ্ছে। এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী বলেন, সড়ক-মহাসড়ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য ওভার ট্রাফিক, ওভার লোডকে দায়ী করা হয়। আমি মনে করি এগুলো কোনো কারন হতে পারে না। কোয়ালিটি মেইনটেইন করে কাজ করলে একটা সড়ক কমপক্ষে ১৫ বছর টিকবে।
জানা গেছে, জাতীয় মহাসড়কের পেভমেন্টের আয়ুষ্কাল ধরা হয় ২০ বছর। যান চলাচলে বার্ষিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রোড পেভমেন্ট ডিজাইন গাইড-২০০৫-অনুযায়ী এ আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। আর আঞ্চলিক মহাসড়কের পেভমেন্টের এ আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা হয়েছে যান চলাচলের ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হিসাবে। যদিও এক বছরেই আয়ুষ্কাল হারাচ্ছে নতুন নির্মিত জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক। ঢাকা-চট্টগ্রাম, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন মহাসড়ক তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। চার দফা প্রকল্পের মেয়াদ ও তিন দফা ব্যয় বাড়ানোর পর সর্বশেষ ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কের নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে উচ্চ দর নির্ধারণ করা হলেও কাজের মান হয় সর্বনি¤œ। নি¤œমানের বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে। সড়ক নির্মাণের যে ‘কিউরিং পিরিয়ড’ থাকে, তাও মানা হচ্ছে না। তার উপর সড়ক-মহাসড়কে চলছে সক্ষমতার অতিরিক্ত ভারী যানবাহন। যান চলাচলের অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধিও সড়ক-মহাসড়কের পেভমেন্টের আয়ুষ্কাল কমিয়ে দিচ্ছে।
এক বছর যেতে না যেতেই ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর সওজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মহাসড়কটির নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারে কিছু ত্রæটি ছিল। চার লেন প্রকল্পটিতে নকশা অনুযায়ী ৫০/৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে। এর সঙ্গে সিলেট থেকে আনা পাথরের সংমিশ্রণ খুব একটা টেকসই ছিল না। এতে বিটুমিন উঠে গিয়ে কিছু অংশের সড়ক খানাখন্দে ভরে গেছে। অথচ রাবারাইজড বিটুমিন বা পলিমার ব্যবহার করলে মহাসড়কটির পেভমেন্টের আয়ুষ্কাল আরও বেশি স্থায়ী হতো। এ প্রসঙ্গে সওজের একজন কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক নির্মাণে বিটুমিন জটিলতা সৃষ্টি করেছিল। এজন্য বুয়েটের মাধ্যমে বিটুমিন-পাথর সংমিশ্রণ পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায়, সিলেটের তামাবিল দিয়ে আসা ভারতের পাথরের বিটুমিন ধারণ ক্ষমতা কম। এতে দ্রæত বিটুমিন উঠে গিয়ে সড়ক নষ্ট হয়ে যায়। পরে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে আসা পাথর-বিটুমিন মিশ্রণ পরীক্ষা করা হয়। সেটি টেকসই হওয়ায় পরে সোনামসজিদ দিয়ে আসা পাথরই চার লেনে ব্যবহার করা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক প্রতিবেদনেও সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে নি¤œমানের বিটুমিনের ব্যবহারের বিষয়টি উঠে এসেছে। দুদকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিটুমিন। সড়ক- মহাসড়কে ৬০/৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও তা অমান্য করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করছে ৮০/১০০ গ্রেডের বিটুমিন। নিম্নমানের এ বিটুমিন ব্যবহারের কারণে গরমের সময় তা গলতে শুরু করে। এ কারণে সড়কে গর্ত ও ফাটল দেখা দেয়, পেভমেন্টও উঠে যায়। পেভমেন্টের আয়ুষ্কালের জন্য কিউরিং পিরিয়ডও গুরুত্বপূর্ণ। পেভমেন্ট নির্মাণের পর কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা কিউরিং পিরিয়ড রাখতে হয়। কিন্তু বিকল্প সড়ক না থাকায় তার আগেই যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় পেভমেন্ট। এতে করে সড়ক-মহাসড়ক টেকসই হচ্ছে না।
এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শহীদুল হাসান জানান, স্বাধীনতার পর দেশে যতোগুলো সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে তার মধ্যে ইউনিক ছিল ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। ৯০ দশকের শেষের দিকে ড্যানিশ কনস্ট্রাকশন কোম্পানী এই মহাসড়কটি নির্মাণ করে। তাদের কাজের কোয়ালিট এবং সুপারভিশন ছিল খুবই মানসম্মত। যে কারনে এই মহাসড়কটি টেকসই হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা-মাওয়া চার লেন মহাসড়কটির নির্মাণ ব্যয় বেশি হলেও এর কাজের মান খুবই ভালো হচ্ছে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী এই মহাসড়ক নির্মাণ কাজের তত্বাবধান করছে বলেই কাজের মান ভালো হচ্ছে।
এদিকে, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা (এইচডিএম) সর্বশেষ প্রতিবেদনে নির্মাণের দুই বছরেই বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মিত চার লেনের মহাসড়ক ভাঙনের কারণ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। সওজের এইচডিএম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক-মহাসড়কের প্রায় ২৭ শতাংশ এখনও ভাঙাচোরা, যাতায়াত অনুপযোগী। মহাসড়কের ৫৭ ভাগ ভালো হলেও সারা দেশে দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়কের অবস্থাই খারাপ, চলাচলের অযোগ্য। এসব সড়ক-মহাসড়ক সংস্কার ও পুনর্নিমাণ করতে হবে। ঈদের আগে ওই সব সড়ক-মহাসড়ক মেরামত করা হয়েছে বলে সওজের দাবি। ইতোমধ্যে মেরামতের অনেক অংশ আবার নষ্ট হয়ে গেছে। সওজের একজন প্রকৌশলী জানান, সড়কের স্থায়িত্ব রক্ষায় ২০১২ সালে এক্সেল লোড নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার। এ নীতিমালা অনুযায়ী, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের পণ্য পরিবহনের সর্বোচ্চ সীমা ২০ টন। আর প্রাইম মুভার, ট্রেইলারের পণ্য বহন ক্ষমতা ৩৩ টন। দেশে চলাচলরত দুই এক্সেলের ট্রাকের ক্ষেত্রে সামনের চাকায় লোড হবে সাড়ে পাঁচ টন ও পেছনের চাকায় ১০ টন। অর্থাৎ ছয় চাকার ট্রাকের সর্বোচ্চ ওজন বহন ক্ষমতা সাড়ে ১৫ টন। এর অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন করলে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। তার পরেও অতিরিক্ত পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ হচ্ছে না, যা সড়কের আয়ুষ্কাল কমিয়ে দিচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।