Inqilab Logo

শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দুদকে চাকরি ও পদোন্নতি নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক

| প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মালেক মল্লিক : দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পদোন্নতির নীতিমালার বিষয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে চরম বিতর্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা নতুন ওই পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত আইন ও বিধি সম্মত হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে পদোন্নতি না দিয়ে একতরফাভাবে প্রেষণের মাধ্যমে জনপ্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে কর্মকর্তা এনে কমিশনের উচ্চ পদগুলো পূরণ করার বিষয়েও।
সহকারি পরিচালক, উপ-পরিচালক, পরিচালক ও মহা-পরিচালক পদে দুদকের নিজস্ব কর্মকর্তাদের পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ অনেকাংশে হ্রাস পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধা, সিনিয়রটি, সততা ও দক্ষতাকে প্রাধান্য দিয়ে আংশিক পরীক্ষা প্রথা প্রবর্তন করেছে। পূর্ববর্তী কমিশন ২০১৫ সালে পরিচালক, উপ-পরিচালক এবং সহকারি পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়। এই পদোন্নতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছিল।
দুদক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল দুদকের সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিনের সই করা আদেশে দুদক কর্মচারি চাকরি বিধিমালা ২০০৮ এরবিধি ৬ (৩) অনুযায়ী পরীক্ষা পদ্ধতি ও সিলেবাসের বিষয়ে বলা হয়েছে। যদিও পদোন্নতির ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন ও সিনিয়রটি বিষয়টিও আমলে নেয়া হবে। যা অনুকরণীয় উদ্যোগ বলে মনে করছে কমিশন। চাকরি বিধিমালার ৬ এর উপধারা-৩ অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তির চাকরির বৃত্তান্ত সন্তোষজনক না হয়, তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক আয়োজিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হন এবং চাকরিতে স্থায়ী না হন তাহা হলে তিনি কোনো পদে পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।
ওই আদেশের (২) এ বর্ণিত শর্ত সমূহের বিষয়ে পদোন্নতি প্রত্যাশীদের দাবি চাকরি বিধিমালায় সিনিয়রটি ও পদোন্নতির বিধিসহ অন্যান্য বিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। কেননা চাকরি বিধির ১৬ ধারা অনুযায়ী কমিশন কর্তৃক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সিনিয়রটি তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর পদোন্নতির উদ্দেশ্যে গৃহীত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিবার নতুন মেধা তালিকার ভিত্তিতে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত তাদের পারষ্পরিক সিনিয়রটি ক্ষুন্ন করে পুরো পদোন্নতি প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করতে পারে। পদোন্নতির জন্য এরকম পরীক্ষা গ্রহণ এবং সিনিয়রটি বাইরে পরীক্ষার ভিত্তিতে মেধা তালিকা তৈরি এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে পদোন্নতি দেয়ার নজির দেশের অন্য কোনো সার্ভিসে নেই বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
পরীক্ষা বাতিলে ইতোমধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কমিশনের কাছে আবেদন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তাদের দাবি, চাকরি বিধিমালায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া বলতে কমিশন বিভিন্ন সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য যেসব প্রশিক্ষণ ওকর্মশালার আয়োজন করে সেসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়াকে বোঝানো হয়েছে। বিধিমালার ৬ বিধির কোথাও পদোন্নতির পূর্বশর্ত হিসেবে বাধ্যতামূলক কোনো পরীক্ষার বিষয় উল্লেখ নেই। এদিকে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি মনে করেন, সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে সম্পূর্ণ নৈর্ব্যক্তিক প্রক্রিয়ায় প্রতিটি সৎ, দক্ষ এবং মেধাবী কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদান করা উচিত।
সূত্রে জানা যায়, দুদকের অফিস আদেশে কর্মচারি বিধিমালার বিধি ৬ (৩) অনুযায়ী পরিচালক, উপ-পরিচালক ও সহকারি সিস্টেম এনালিস্ট, সহকারি পরিচালক, উপ-সহকারি পরিচালক, কোর্ট পরিদর্শক, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর, উচ্চমান সহকারি, সাঁট মূদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, কোর্ট সহকারিসহ ১৭ পদের কর্মকর্তা-কর্মচারি পরীক্ষার সিলেবাস ও মান বণ্টন বিষয়ে বলা হয়েছে।
সিলেবাসে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪; দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭; দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭; মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন; সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২; দন্ডবিধি, ১৮৬০ সহ বিভিন্ন আইন ও বিধি সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ৪০, বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন ৩০ এবং সিনিয়রটি ৩০ শতাংশ নম্বর বরাদ্দ করা হয়েছে। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারি ৩ বার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও উত্তীর্ণ হতে না পারলে তিনি আর পরীক্ষার জন্য যোগ্য হবেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, কর্মচারি বিধিতে পরীক্ষা নিওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা যথাযথ হয়নি। কারণ, চাকরিবিধি ৬ (৩) পদোন্নতি না পাওয়ার অযোগ্য তার কথা বলা হয়েছে। ওই ধারায় চাকরির বৃত্তান্ত সন্তোষজনক না হওয়া, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া এবং চাকরিতে স্থায়ী না হওয়ার বিষয়টি বলা হয়েছে। সেখানে কোথাও পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুদক

২৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৪ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ