পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : আন্তজার্তিক বিশে^র সঙ্গে অসম বাণিজ্যের কবলে পড়েছে বাংলাদেশ। আমদানির চাপে সাড়ে ১৫ বিলিয়ন ডলারের বড় বাণিজ্য ঘাটতি। এই অংক অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে রফতানির তুলনায় আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ ১৫শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা প্রায় দ্বিগুণ। এত বড় বাণিজ্য ঘাটতি এর আগে কখনও হয়নি। দেশের চলতি হিসাবে এ সময়ে ঘাটতি ৮৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ঘাটতির রেকর্ড।
সাধারণভাবে কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রফতানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়।
আমদানি ব্যয় অনেক বেশি হারে বৃদ্ধিকে লেনদেনের ভারসাম্যের দুর্বল অবস্থার কারণ মনে করা হলেও আমদানি আসলেই এত হচ্ছে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে গবেষণা সংস্থা সিপিডি। সংস্থাটি আমদানি বিশেষত মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির আড়ালে টাকা পাচার হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে চার হাজার ৫৩৫ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে রফতানি থেকে আয় হয়েছে তিন হাজার এক কোটি ডলার। এ হিসাবে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৩৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ঘাটতি বেড়েছে সেবা বাণিজ্যেও। জুলাই-এপ্রিল সময়ে সেবা বাণিজ্যে মোট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৭০ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ৩০৩ কোটি ছিল। সেবা খাতের বাণিজ্যে মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই হিসাবে ২৩০ কোটি ৩০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। তবে বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশি সহায়তা ছাড়ের পরিমাণ বাড়ায় অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে সরকারের আর্থিক হিসাবে ভালো উদ্বৃত্ত তৈরি হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে যেখানে ৩৩২ কোটি ৭০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল, এবার তা ৬৮৯ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ২৩৭ কোটি ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) দেশে এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ২৫৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এ হিসাবে এই দশ মাসে এফডিআই কমেছে সাত দশমিক ৩৫ শতাংশ। এই সময়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাবদ দেশে এসেছে ৩৯৩ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৮৬ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। বিদেশের সঙ্গে লেনদেনের এ অবস্থাকে অর্থনীতির এ মুহূর্তের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। আমদানি বৃদ্ধি রফতানির তুলনায় অনেক বেশি হারে হওয়ায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চলতি হিসাবের ওপর চাপ রয়েছে। এ চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ইতিমধ্যে ডলারের তুলনায় টাকা অনেক দুর্বল হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে মূল্যম্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার: আমদানির চাপে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যেও বড় ধরনের ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের দশ মাসে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮৫১ কোটি ডলারে। এই ঘাটতি গত অর্থবছরের একই সময়ের প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে লেনদেন ভারসাম্যে ১৭৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার ঘাটতি ছিল। জুনে অর্থবছর শেষে তা ১৪৮ কোটি ডলারে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে লেনদেন ভারসাম্যে এত বড় ঘাটতি আগে কখনো হয়নি। তবে সরকারের আর্থিক হিসাবে বড় উদ্বৃত্ত থাকায় এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার মত কিছু দেখছেন না গবেষণা সংস্থা সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি মনে করছেন, লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে আমদানি বাড়তে থাকার কারণে। তবে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত অর্থ থাকায় বড় কোনো ঝুঁকির আশঙ্কা নেই।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, আমদানি যেটা বাড়ছে সেটা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেলসহ বড় প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানির জন্য বাড়ছে। এ সব আমদানির বিল ফরেন এইড যেটা আসছে সেটা থেকেই পরিশোধ করা হচ্ছে। সে কারণে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট এবং ওভারওল পেমেন্টে (সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্য) ঘাটতি দেখা দিলেও ফাইনানশিয়াল অ্যাকাউন্টে (আর্থিক হিসাবে) উদ্বৃত্ত রয়েছে বলে জানান মোস্তাফিজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।