বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আজ ২৬ রমজান। অদ্য দিবাগত রাতটি ২৭ রমজানের বেজোড় রাত। এ রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং এ রাতে ইবাদত বন্দেগী অধিক হারে আদায় করা সকল মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। কুরআনুল কারীমে মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন : ‘নিশ্চয়ই আমি এটি লাইলাতুল কদরে নাজিল করেছি। তোমাকে কি জানাব লাইলাতুল কদর কি? লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।
সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিব্রাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সেই রাত ফজরের সূচনা পর্যন্ত’। (সূরা আল কদর : ১-৫)। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, লাইলাতুল কদরে যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে কিয়াম করবে, তাঁর পূর্বের সকল পাপ মোচন করা হবে। (সহীহ বুখারী : হাদীস নং-১৮০২; সহীহ মুসলিম : হাদীস নং ৭৬০)। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা: লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বলেছেন : লাইলাতুল কদর সাতাশ অথবা উনত্রিশ রাত, সে রাতে পৃথিবীতে ফেরেশতাদের সংখ্যা কঙ্করের চাইতে অধিক হয়। (মোসনাদে আহমাদ : খ--২, পৃষ্ঠা ৫১৯; তায়ালিমি : হাদীস নং-২৫৪৫, ইবনে সুযাইমাহ : হাদীস নং-২১৯৪)।
মির ইবনে হুবাইশ (রা:) বলেন, আমি উবাই ইবনে কা’বকে জিজ্ঞাসা করে বলি, তোমার ভাই ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন, যে ব্যক্তি সারা বছর রাতে কিয়াস করবে, সে লাইলাতুল কদর লাভ করবে। তিনি বললেন, আল্লাহ তাঁর ওপর রহম করুন। তাঁর উদ্দেশ্য হলো মানুষ যেন অলস না হয়। অন্যথায় তিনি ভালো করে জানেন যে, লাইলাতুল কদর রমজানের বিশেষ করে শেষ দশকে বরং সাতাশে। অতঃপর তিনি শপথ করে বলেন, এতে সন্দেহ নেই লাইলাতুল কদর সাতাশের রাতে। আমি বললাম, আপনি তা কিভাবে বলেন, হে আবদুর রহমান? তিনি বললেন, নিদর্শন দেখে অথবা রাসূলের বাতলানো আলামত দেখে। সেদিন সূর্য উদিত হবে যে, তার কিরণ থাকবে না। (সহীহ মুসলিম : হাদীস নং-৭৬২, সুনানে আবু দাউদ : হাদীস নং-১৩৭৮; জামে তিরমিজি : হাদীস নং-৩৩৫১; মোসনাদে আহমাদ; খ--৫৪, পৃষ্ঠা-১৩০)।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের এক বর্ণনায় আছে : সেদিন সকালে সূর্য উদিত হবে, যেন তা গামলা, যার কোনো আলো নেই। (মোসনাদে আহমাদ : খ--৫, পৃষ্ঠা-১৩০)।
তিরমিজির এক বর্ণনায় আছে, উবাই বলেছেন, আল্লাহর শপথ! আল্লাহর শপথ! আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ নিশ্চিত জানে যে, লাইলাতুল কদর রমজানে এবং তা সাতাশে। কিন্তু তিনি তোমাদেরকে সংবাদ দিতে চাননি, যেন তোমরা অলস হয়ে বসে না থাক। (জামে তিরমিজি : হাদীস নং-৭৯৩)।
আমীরে মুয়াবিয়া (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূলূল্লাহ সা: বলেছেন, লাইলাতুল কদর হচ্ছে সাতাশের রাত। (আবু দাউদ : হাদীস নং- ১৩৮৬., ইবনে হিব্বান : হাদীস নং-৩৬৮০)।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা:-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর নবী! আমি খুব বৃদ্ধ ও অসুস্থ লোক। আমার দ্বারা দাঁড়িয়ে থাকা খুবই কঠিন। সুতরাং আজকে আমাকে এমন এক রাতের কথা বলুন যেন সে রাতে আল্লাহ আমাকে লাইলাতুল কদর দান করেন। তিনি বললেন, তোমার উচিত সাতাশকে আঁকড়ে ধরা। (আহমাদ : খ--১, পৃষ্ঠা-২৪০; বায়হাকী : খ--৪, পৃষ্ঠা-৩১২; তাবরানী ফিল কাবীর : হাদীস নং-১১৮৩৬; মাজমাউজ যাওয়ায়েদ খ--৩, পৃষ্ঠা ১৭৬)।
আলেমদের বিশুদ্ধ শর্ত হচ্ছে এই যে, লাইলাতুল কদর পরিবর্তনশীল। তবে সাতাশের রাত অধিক সম্ভাবনাময়। যেমন হযরত উবাই ইবনে কা’ব শপথ করে বলেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।