Inqilab Logo

রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

এবারও বেহাল সড়কে ঈদযাত্রা

নূরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে আসছে সপ্তাহ থেকে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করবে মানুষ। অন্যান্য বছরের মতো এবারও সড়ক-মহাসড়কে খানাখন্দ ও তীব্র যানজটসহ নানা ভোগান্তির মধ্যেই লোকজনকে ঘরে ফিরতে হবে। সারাদেশে দুই ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার। এর মধ্যে এক হাজার ৭৩ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খারাপ। খুব খারাপ অবস্থার সড়কের সংখ্যাও আগের বছরগুলোর তুলনায় বেড়েছে। আগামী ৮ জুন অর্থাৎ ২২ রমজানের মধ্যে জরুরীভিত্তিতে সড়ক-মহাসড়ক মেরামতের নির্দেম দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের দাবি, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় এক হাজার কিলোমিটার সড়ক মেরামতের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে ৮ জুনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এদিকে, মন্ত্রীর নির্দেশের পর যানবাহন চলাচল অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে রাতদিন বেহাল সড়কের সংস্কার কাজ চলছে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা না যেতেই সড়ক আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। এর কারন প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে। সে সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অসহনীয় দীর্ঘ যানজট ঘরমুখো যাত্রীদের দিকে চোখ রাঙ্গাচ্ছে। রমজানের আগেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজটে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের পাশপাশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আগামী ১৩ জুন পবিত্র শবে কদরে সরকারি ছুটি রয়েছে। পরদিন বৃহস্পতিবার অনেকেই একদিনের ছুটি নিয়ে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ির পথে রাজধানী ছাড়বে। তবে ১২ জুন মঙ্গলবার থেকেই কার্যত রাজধানী ফাঁকা হয়ে যাবে। সড়কের বেহাল দশা ও দীর্ঘ যানজটের কারনে সড়ক পথের চেয়ে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামবে ট্রেনে। ট্রেনের টিকিটের জন্য হাজার হাজার মানুষের দীর্ঘ সারি সেই ঢলেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। রমজানের আগেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি প্রতিদিনকার চিত্র ছিল। দেশের প্রধান চারটি মমহাসড়কের কমপক্ষে ৫০টি স্পটে যাত্রীদের যানজটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার পদুয়ার বাজার ও দাউদকান্দি টোল প্লাজাসহ প্রায় ১৩টি স্পট, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টঙ্গী, গাজীপুর, এলেঙ্গাসহ কমপক্ষে ১১টি স্পট, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা, গাউসিয়া, রুপগঞ্জসহ কমপক্ষে ৭টি স্পট, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ৮টি স্পট, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গাবতলী, আমিনবাজার, সাভারসহ কমপক্ষে ৫টি স্পটে যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের কাঁচপুর ব্রিজ থেকেই যানজট শুরু হয়। কাঁচপুর ব্রিজ এলাকার উভয় দিকে যানজটের নেপথ্যে রয়েছে ট্রাফিক বিভাগের চরম অব্যবস্থাপনা, সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল, লেগুনা, বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানের অবৈধ পার্কিং ও চাঁদাবাজি। এসব কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন সকালে শুরু হয়ে গভীররাত পর্যন্ত ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট লেগেই থাকে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ অংশ থেকে শুরু হয় যানজট। বিশেষ করে যানজটের কারনে ঢাকা থেকে নরসিংদীর শিবপুরের ইটাখোলা মোড় পর্যন্ত মাত্র ৫২ কিলোমিটার এলাকা অতিক্রম করতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু নরসিংদী সড়ক হয়ে চলাচলকারী যানবাহন কাঁচপুর ব্রিজ ব্যবহার করায় কাঁচপুর এলাকায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভুলতায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নীচ থেকে সেতু পর্যন্ত পুরো সড়কে অসংখ্য ছোট-বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে বৃষ্টির কারনে কাঁদামাটি, ইটের খোয়া উঠে দিন দিন গর্তগুলো বড় হচ্ছে। বিধ্বস্ত এই সড়কটি একেবারেই ব্যবহারের অযোগ্য হওয়ায় কাঁচপুর ব্রিজের উভয় দিকে যানজট স্থায়ী হয়ে গেছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) হিসাবে সারাদেশে ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৮১৩ কিলোমিটারের ৯৬টি জাতীয় মহাসড়ক রয়েছে। চার হাজার ২৪৭ কিলোমিটারের ১২৬টি আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ১৩ হাজার ২৪২ কিলোমিটারের ৬৫৪টি জেলা মহাসড়ক রয়েছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা (এইচডিএম) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে কিছু কিছু অংশে পেভমেন্টে (পিচ ঢালাইয়ে) ফাটল এবং পটহোল (গর্ত) দেখা দিয়েছে। আবার রাজধানী থেকে বের হতেই নতুন নির্মিত যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর আট লেনের মহাসড়কের কিছু অংশে পেভমেন্টে ফাটল দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, চার লেনের জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কেরও বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। কিছু অংশ এরই মধ্যে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। জায়গায় জায়গায় পেভমেন্টে ফাটল ও পটহোল দেখা দিয়েছে। মহাসড়কের ১০৭ থেকে ১১১ কিলোমিটার অংশ দুর্বল ও খারাপ। ১০১ থেকে ১০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত চার কিলোমিটারের অবস্থা খারাপ ও খুব খারাপ।
সওজের এইচডিএম প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সড়ক-মহাসড়কের প্রায় ২৭ শতাংশ এখনও ভাঙাচোরা, যাতায়াত অনুপযোগী। মহাসড়কের ৫৭ ভাগ ভালো হলেও সারা দেশে দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি রাস্তার অবস্থাই খারাপ, চলাচলের অযোগ্য। এসব সড়ক-মহাসড়ক সংস্কার ও পুনর্নিমাণ করতে হবে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে এক হাজার ৭৩ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খারাপ। খুব খারাপ রাস্তাও আগের বছরগুলোর তুলনায় বেড়েছে। এর প্রভাব পড়তে পারে আসন্ন ঈদযাত্রায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাসড়কগুলো যানবাহন চলাচলের জন্য কিছুটা উপযোগী রয়েছে। একেবারেই নাজুক অবস্থা জেলা ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোর। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-যশোর-খুলনা ও ঢাকা-গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের খানাখন্দে ভরা সড়ক দ্রæত মেরামতের নির্দেশ দেয়ার পর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের হিসাব দিয়েছে। রমজান শুরুর আগেই মন্ত্রনালয়ে দাখিল করা হিসাবে ভাঙাচোরা সড়ক ও মহাসড়ক হলো দুই হাজার ৪৯৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে খারাপ সড়ক হলো এক হাজার ৩৩০ কিলোমিটার। এতে করে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা বেশি সময় নিয়ে যানবাহন গন্তব্যে পৌঁছায়। আর একেবারে খারাপ হচ্ছে এক হাজার ১৬৫ কিলোমিটার।
খানাখন্দে ভরা সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় চলছে নির্মাণ কাজ। মন্ত্রীর বেঁধে দেয়া ৮ জুনের মধ্যে সড়ক-মহাসড়ককে যানবাহন চলাচলের উপযুক্ত করার বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারছে না সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। তাদের কথায়, সংস্কার কাজ করার পরই বৃষ্টির কারণে কোনো লাভই হচ্ছে না। একদিকে টাকা খরচ হচ্ছে। অপরদিকে সড়ক-মহাসড়কে সৃষ্ট ক্ষত দূর করা যাচ্ছে না। কমপক্ষে এক সপ্তাহ বৃষ্টি না থাকলে রাতদিন কাজ করে সড়ক-মহাসড়ককে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব।
বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এবার বৃষ্টি অনেক আগেই শুরু হয়েছে। এজন্য সড়ক-মহাসড়ক মেরামতের জন্য সময় থাকছে কম। আবহাওয়ার বিরুপ আচরনে গ্রীষ্ণের তাপদাহের পরিবর্তে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে করে সড়ক ও মহাসড়কের সংস্কার কাজে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, রমজানের দুই সপ্তাহ অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় এক হাজার কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মেরামত কাজ সম্পন্ন হয়। কিন্তু গত বুধ ও বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিতে মেরামত করা অংশ ফের নষ্ট হয়ে গেছে। আসছে ৮ জুনের মধ্যে অবশিষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত দেড় হাজার কিলোমিটার সড়ক মেরামত করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে একটানা কয়েকদিন বৃষ্টি বন্ধ থাকলেই ক্ষতিগ্রস্ত পুরো সড়কের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। ##

 



 

Show all comments
  • ইব্রাহিম ৩ জুন, ২০১৮, ২:০৭ এএম says : 0
    মন্ত্রীর ভাষণ শুনলে মনে হয় রোড়গুলো যেন সিঙ্গাপুরের চেয়ে উন্নত
    Total Reply(0) Reply
  • প্রিতম ৩ জুন, ২০১৮, ২:০৭ এএম says : 0
    এই হলো উন্নয়নের মহাসড়কের অবস্থা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ