Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা

সুপার ফোর দলের গ্রুমিং ও তাদের ব্যতিক্রমী প্রশিক্ষণ

বিনোদন রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সাথে গত শুক্রবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক ভিন্ন রকম ইফতার আয়োজন করেছিল ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। মূলত দেশে প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার সুপার ফোরে উত্তীর্ণ বিতার্কিকদের সারাদিন ব্যাপী গ্রুমিং শেষে ছিলো এই মেইল বন্ধনের ইফতার। প্রতিবন্ধীসহ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার গল্প নিয়ে আয়োজিত এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করছে। গত ২১ এপ্রিল সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। বিভিন্ন রাউন্ড শেষে জাতীয়ভিত্তিক এই রিয়েলিটি শোর সুপার ফোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি দলসহ চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন মহিলা কলেজ উত্তীর্ণ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। বনানীতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র কনফারেন্স রুমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিতার্কিকদের সুপার ফোর টিমের গ্রুমিং ও প্রতিযোগিতার বিষয় প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ইমদাদুল হক মিলন। সভাপতি হিসেবে প্রতিযোগিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি যখন শুরু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করি তখন ভেবে ছিলাম দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা কি পারবে এই ধরণের একটি রিয়েলিটি শোতে অংশগ্রহণ করতে? তারা কি পারবে যুক্তি, তর্ক উপস্থাপনা দিয়ে বিরোধী পক্ষের বক্তব্যকে খন্ডন করতে? কিন্তু প্রতিযোগিতা শুরুর পর দেখলাম উল্টো চিত্র। বুঝলাম দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা কত মেধাবী! একটু সুযোগ ও পরিচর্যা পেলেই তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতই সমান তালে নিজেদের তুলে ধরতে পারে। তিনি বলেন, উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে হলে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান ও বিনোদনসহ তাদের সামাজিক নিরাপত্তা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রতিবন্ধীদের নানাবিধ সমস্যা, তাদের নিয়ে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, পরিবার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব- এসব বিষয়সমূহ স্থান পাচ্ছে। মূলত প্রতিবন্ধীদের প্রতি পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়াস হিসেবেই এটিএন বাংলা ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি যৌথভাবে ‘যুক্তির আলোয় দেখি’ শিরোনামে এই রিয়েলিটি শো-র আয়োজন করেছে। গ্রুমিং সেশনে গিয়ে দেখা গেল প্রত্যেক দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীকে কী দারুণ আন্তরিকতার সাথে অনুশীলন করাচ্ছে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র প্রশিক্ষকবৃন্দ। যেহেতু তারা দেখতে পায় না, তাই তাদেরকে সাধারণ স্ক্রিপ্টের পরিবর্তে ব্রেইল লিখন পদ্ধতিতে বিতর্কের স্ক্রিপ্ট লিখে দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক বিতার্কিকের জন্য একজন শ্রুতিলেখক তাদের এই স্ক্রিপ্ট লেখায় প্রশিক্ষকের সাথে সহযোগিতা করছে। কাউকে কাউকে স্মার্ট ফোনে সেগুলো রেকর্ড করে দেয়া হচ্ছে। দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী বিতার্কিকরা হাতের সাহায্যে ব্রেইল লিখন তৈরি করে ধীরে ধীরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। কোথাও কোন উচ্চারণে বা বলবার ভঙ্গিতে আবেগের উঠানামা কম হলে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র প্রশিক্ষকরা তা শুধরে দিচ্ছে। গ্রুমিং সেশনে আরো একটি অসাধারণ দিক লক্ষ্য করা গেল, প্রত্যেক বিতার্কিককে আলাদা আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণের ধরণ বক্তা বুঝে ভিন্ন ভিন্ন। এক একজনের কথা বলার ধরণ, উচ্চারণ, আবেগ, অনুভ‚তি, চিন্তা বা কথা বলার সক্ষমতা অন্যজনের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। তাই প্রত্যেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিতার্কিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে তার মতো করে। যে যেভাবে বক্তব্য দিতে চায়, যুক্তি-প্রতিযুক্তি প্রদান করতে চায় তাকে ঠিক সেভাবেই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। আবার প্রত্যেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার গল্পও স্ক্রিপ্ট এর সাথে সংযুক্ত করে নিবিড়ভাবে তৈরি করা হচ্ছে প্রত্যেক বিতার্কিকে। গ্রুমিং সেশনে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীসহ ব্যতিক্রমধর্মী ইফতারের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ