Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইফতার আলোচনায় ভোটের রাজনীতি

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৩ এএম, ২ জুন, ২০১৮

মাহে রমজানের প্রথমার্ধ অতিবাহিত হয়ে গেছে। যেন চোখের পলকেই পার হয়ে যাচ্ছে পবিত্র এই মাস। রমজানে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্বত্রই ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রধান রাজনৈতিক দল-সংগঠনসমূহ ছাড়াও নগরীর ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তা, আলেম-ওলামা মাশায়েখ, পেশাজীবী সংগঠনসমূহ, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান এমনকি চাটগাঁর বনেদী পরিবারসমূহের উদ্যোগেও প্রতিদিনই হচ্ছে অনেকগুলো ইফতার মাহফিল। দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা, উপজেলা-থানাসমূহ, ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে চলছে ইফতারের নজরকাড়া আয়োজন। এসব রাজনৈতিক উদ্যোগে তো বটেই এবং বেসরকারি, পেশাজীবী বা ব্যাক্তি পর্যায়ে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তৃণমূল কর্মীসহ জনসাধারণের জোরালো আলোচনায় হিসাব-নিকাশে উঠে আসছে আগামী জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচনী পরিবেশ। রাজনীতি সচেতন জনসাধারণের মাঝে আলোচনায় আরও গুরুত্ব পাচ্ছে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপরসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বা মুক্তির বিষয়টি। এতে করে ভোট রাজনীতিতে চট্টগ্রামে ইফতার মাহফিল এবার নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
আগামী ডিসেম্বর মাস নাগাদ অনুষ্ঠিত হতে পারে দেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দশম সংসদের মেয়াদকাল হিসাব করলে তাই বলা যায়। এরফলে নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জনগণের কাছে ঘন ঘন ছুটছেন। জমকালো ইফতারে হাসিমুখে আপ্যায়িত করছেন। নিজ নিজ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি, আলেম-মশায়েখদের কাছে দোয়া চাইতে ছুটছেন। দলীয় তৃণমূল নেতা-কর্মী সমর্থকদের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। অন্য যেকোন বছরের চেয়েও অধিকহারে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজনের ফলে বন্দরনগরীর কমিউনিটি সেন্টারগুলো বেশিরভাগই অগ্রিম বুকড হয়ে যায়। সবখানে এখন ইফতারের আয়োজনে ব্যস্ত বিভিন্ন দল-সংগঠন, প্রতিষ্ঠান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরী থেকে জেলা-উপজেলা, থানা-ওয়ার্ড, ইউনিয়ন হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লা সর্বত্রই মাহে রমজানের আমেজের সাথে পুরোদমে যোগ হয়েছে আনুষ্ঠানিক বড়সড় পরিসরে ইফতারের উদ্যোগ-আয়োজন। এতে করে ভিন্ন এক আবহ তৈরি হয়েছে মাহে রমজানের তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা ও ইফতার আয়োজনে। ছোট, মাঝারি, বড় পরিসরে আয়োজন করা হচ্ছে ইফতার মাহফিলের। চট্টগ্রাম নগরীর একটি অভিজাত কমিউনিটি সেন্টারে বিগত ১৯ মে (২ রমজান) দৈনিক ইনকিলাব চট্টগ্রাম ব্যুরোর উদ্যোগে ইফতার মাহফিলের মিলনমেলাটি ছিল এবার চট্টগ্রামে বড় পরিসরে এ ধরনের প্রথম আয়োজন। সেখানে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চট্টগ্রামের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, মেয়র, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ, আলেম-মাশায়েখগণ অংশগ্রহণ করেন। তবে এরপর থেকে চট্টগ্রামে একে একে প্রতিদিন অনেকগুলো ইফতার মাহফিল হচ্ছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির স্থানীয় কমিটিগুলো প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করছে। এর পাশাপাশি অন্যান্য ছোট কিংবা মাঝারি পর্যায়ের দল-জোট করছে ইফতারের আয়োজন। চাটগাঁর শত বছরের লালিত রীতি-রেওয়াজ অনুযায়ী সামাজিক সংগঠন, বনেদী ব্যক্তি-পরিবার, ঐতিহ্যবাহী শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী গ্রæপগুলোর উদ্যোগেও নগরীতে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রতিদিনই। সেখানে এতিম-দুঃস্থদেরও ইফতারে দাওয়াত করা হচ্ছে। এর বাইরে চট্টগ্রামে পেশাজীবী সংগঠনগুলো ইফতার মাহফিল আয়োজনে পিছিয়ে নেই।
চট্টগ্রাম মহানগরী, জেলা-উপজেলা, ওয়ার্ড পর্যায়ে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ইফতার মাহফিলে নির্বাচনী রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন আঙিকে আলোচনা-পর্যালোচনা সরব হয়ে উঠেছে। দেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আগাম হিসাব-নিকাশ চলছে ইফতার মাহফিলের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে। এতে পড়েছে পুরোদমে ভোট রাজনীতির প্রভাব। আগামী নির্বাচনে যারা সংসদ সদস্য পদে ফের কিংবা নতুন মনোনয়ন পেতে আগ্রহী তারা নিজ নিজ এলাকায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে জনপ্রতিনিধি (কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার), গণ্যমান্য ও মুরব্বীস্থানীয় ব্যক্তিদের সাদরে দাওয়াত দিচ্ছেন। দোয়া ও সমর্থন চাইছেন। ইফতার রাজনীতিতে বইছে ভোটের হাওয়া ও আবহ।
আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থিত নেতারা আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে স্থানীয় সমস্যা, দাবি-দাওয়া পূরণের অঙ্গীকার দিচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপির নেতৃবৃন্দ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে বেগম খালেদা জিয়ার আশু করামুক্তি এবং সারাদেশে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, হুলিয়া, নিপীড়ন, হামলা বন্ধের দাবি জানিয়েছে। গত সপ্তাহে বন্দরনগরীর অভিজাত ইন্টারন্যাশনাল করভেনশন সেন্টারে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে পৃথকভাবে জমকালো ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
চলমান ইফতার মাহফিলের বিভিন্ন আয়োজনে আগামী নির্বাচনের পরিবেশ কেমন হবে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে কিনা ইত্যাদি বিষয় রাজনীতি সচেতন চাটগাঁর জনগণের মাঝে ঘুরেফিরে উচ্চারিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবী সংগঠন, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ভোটের রাজনীতির এপিঠ-ওপিঠ নিয়ে আলোচনা চলছে। রমজান মাস প্রথমার্ধ অতিক্রম করা সত্তে¡ও চট্টগ্রামের সর্বত্র ইফতার মাহফিলগুলোতে সরব ভোট রাজনীতির আলোচনা-পর্যালোচনা অব্যাহত থাকবে।

 



 

Show all comments
  • Syed Nurul Azim ২ জুন, ২০১৮, ১২:৩৫ এএম says : 0
    জাতি চায় আগামী বারে সুষ্ঠু নির্বাচন। একদলীয় ভোট আর দেখতে চায় না।
    Total Reply(0) Reply
  • মামুন ২ জুন, ২০১৮, ২:০৪ এএম says : 0
    এখন সব জায়গাই রাজনীতি চলে .....................
    Total Reply(0) Reply
  • সাদমান আরিফ মাহমুদ ২ জুন, ২০১৮, ২:১৭ এএম says : 0
    খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে নির্বাচন দিলে সেটা জনগনের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • তমাল চৌধুরী মিলন ২ জুন, ২০১৮, ২:২৮ এএম says : 0
    একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বেশী দেরী নেই। কিন্তু অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ভোটের পরিবেশ তো এখনো জনগণের কাছে পরিষ্কার নয়। তাছাড়া নির্বাচন কমিশন তো আস্থা লাভের জায়গায় আজও নাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইফতার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ