Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সাতক্ষীরায় বাড়ছে কাঁকড়া চাষ

সাতক্ষীরা থেকে আব্দুল ওয়াজেদ কচি | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সাতক্ষীরায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কাকড়া চাষ। চিংড়িতে ভাইরাস, রপ্তানি হ্রাস এবং দাম কমে যাওয়ায় কাঁকড়া চাষে ঝুকছে চিংড়ি চাষীরা। একই সাথে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়ার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় রপ্তানিযোগ্য কাকড়া উৎপাদনে প্রতিবছর সাতক্ষীরায় গড়ে উঠছে নতুন নকুন কাকড়া মোটাতাজাকরণ খামার। বেকার যুবকেরা সরকারিভাবে কাঁকড়া চাষের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে অনেকেই দেখছেন সফলতার মুখ।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১১২টি সরকারি ও ৩৪০টি বেসরকারি কাকড়া মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। আরও কয়েকটি খামার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কাঁকড়ার চাষ হয় ৮৪.২ হেক্টর জমিতে। যেখানে উৎপাদিত হয় তিন হাজার চারশ মেট্রিক টন কাকড়া। যার প্রায় সবটাই রপ্তানিযোগ্য। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলায়।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে আরও জানা যায়, জেলাতে মোট ৪৫২টি কাঁকড়ার ঘের রয়েছে। প্রতি বছর ঘেরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাকড়া চাষ অর্থনীতিতে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।
কাঁকড়া চাষের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তি জানান, সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোতে যে পরিমান কাঁকড়া ধরা পড়ে তা প্রাকৃতিকভাবে রেনু থেকে বড় হয়। এ অঞ্চলের লবণাক্ত পানি কাঁকড়া চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। তাছাড়া চিংড়ি চাষের জন্য প্রচুর জমি ও অর্থের প্রয়োজন হলেও কাঁকড়া চাষের জন্য জমি ও অর্থ দুটোই কম লাগে। যে কারণে চাষীরা কাঁকড়া চাষে ঝুকে পড়ছে।
চাষীরা জানান, বাজার থেকে কাকড়া কিনে ছোট ছোট খাচায় রেখে মোটাতাজা করা হচ্ছে। ২০ থেকে ২২ দিনেই একবার খোলস পরিবর্তন করে প্রতিটি কাঁকড়া। এতে প্রতিটি কাকড়ার ওজন বেড়ে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হয়। পরে এই কাকড়া রপ্তানি হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আর এতে লাভ বেশি ও রোগবালাই কম হওয়ায় সাতক্ষীরায় ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাচায় কাকড়া চাষ পদ্ধতি।
জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের কলবাড়ি ব্রিজ সংলগ্ন খাস জমিতে বিশেষ এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে ইনোভেশন ইন পাবলিক সার্ভিসের আওতায় শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসন গড়ে তুলেছে কাকড়া মোটাতাজাকরণ খামার। দুই বিঘা জমির এই খামারে সাড়ে পাঁচ হাজার খাচায় কাকড়া মোটাতাজা করা হচ্ছে। যার ব্যবস্থাপনায় রয়েছে স্থানীয় বাগদী স¤প্রদায়ের আদিবাসীরা।
চাষীরা জানান, খাচায় চাষকৃত কাকড়ার খোলস নরম থাকে। এ কারণে বাজার চাহিদাও বেশি। সাতক্ষীরায় উৎপাদিত এসব কাঁকড়া প্যাকেটজাত করে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। দামও পাওয়া যায় ভালো, কেজি প্রতি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। শুধু বাগদী সমপ্রদায়ের মানুষ নয়, চিংড়ি চাষের তুলনায় লাভ ও ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা না থাকায় অনেকেই ঝুঁকে পড়েছেন কাকড়া চাষে। যার ফলশ্রতিতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ইতোমধ্যে জেলায় ৪৫২টি কাকড়া মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। আর এ খাত থেকে ক্রমেই বাড়ছে রপ্তানি আয়।
একশত খাঁচা নিয়ে কাঁকড়ার চাষ শুরু করেন দেবহাটার বদরতলা এলাকার কাঁকড়া চাষী মানিক চন্দ্র বাছাড়। বর্তমানে তার ঘেরে ১৫শ খাঁচায় কাঁকড়া চাষ হচ্ছে। ২২ শতক জমিতে সে কাঁকড়া চাষ করছে। তিনি জানান, চিংড়ির চেয়ে কাঁকড়া চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। তিনি জানান, এল্লারচর মৎস্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি কাঁকড়া চাষ করেছেন।
চাষীরা বলেন, প্রতিদিন বাজার থেকে ছোট সাইজের কাকড়া কিনে খাচায় রেখে মোটাতাজা করা হয়। খাঁচায় কাঁকড়ার খাবার হিসেবে তারা প্রতিদিন ছোট ছোট তেলাপিয়া মাছ দেন। যা বাজার থেকে সস্তায় কেনা হয়। কয়েকদিনের মধ্যে খোলস পরিবর্তন করলেই কাক্সিক্ষত ওজন বেড়ে যায় কাঁকড়ার। শ্যামনগরের কাকড়া চাষি বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল জানান, মোটাতাজা করার জন্য প্রয়োজনীয় কাকড়া জোগান দেওয়া সম্ভব হলে রপ্তানি খাতে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হতে পারে। কিন্তু যতই মোটাতাজাকরণের খামার বাড়ছে ততই ছোট কাকড়ার প্রাপ্যতা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম সরদার জানান, লাভ বেশি হওয়ায় জেলায় কাকড়া চাষ দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মোট রপ্তানির একটি বড় অংশ সাতক্ষীরা থেকে যায়। এছাড়া রপ্তানি আয় বৃদ্ধির জন্য সরকার এই খাতকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতাও করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাঁকড়া চাষ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ