Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চাষিদের ঠকিয়ে সুবিধা নিচ্ছেন মিলমালিকরা প্যাকেটজাত লবণে প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা

ঘাটতির অজুাতে অতিরিক্ত আমদানিতে দরপতন : নৈরাজ্য রোধের দাবি

কক্সবাজার থেকে শামসুল হক শারেক | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের অন্যতম লবণ। তৃণমূলের কুলি মজুর থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত প্রতিদিন যে পণ্যটির স্বাদ গ্রহণ করে থকেন তা হল লবণ। এই লবণ ব্যবহৃত হয় মানুষের খাদ্যে, পশুর খাদ্যে, মিল-কারখানা ও ইন্ডাজট্রিতে। এক কথায় লবণ ছাড়া জীবন অচল। মহান আল্লাহ তায়ালা হয়ত সে কারণে বাংলাদেশের মানুষের জন্য লবণ সহজলভ্য করে দিয়েছেন। লবণ উৎপাদন, বিপনন ও বাজারজাত করণের সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ২৫ লাখ মানুষ জড়িত রয়েছেন। তারা বাংলাদেশকে লবণে স্বনির্ভর করে তোলেছেন।
কিন্তু প্রতিবছর লবল উৎপাদন ও বিপননের সাথে জড়িত তৃণমূলের চাষীদের ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে লবণ আমদানী করা হয়ে থাকে উপরের তলার এক শ্রেণীর মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণে। আর এটা করে থাকেন একশ্রেণীর প্রেসার গ্রূপ পরিচিত কিছু মিলমালিক। ঘাম ঝরা-রক্ত ঝরা লবণ চাষীদের ঠকিয়ে লাভবান হচ্ছে এই মিলমালিকরাই। এরা মাঠ থেকে প্রতিমণ লবণ ২০০ টাকায় কিনে প্যাকেটজাত করে প্রতি কেজি লবণ বাজারে বিক্রি করছে ৩৮/৪০ টাকায়। এখন চাষীরা যেখানে লবণের উৎপাদন খরচই পাচ্ছেন না, সেখানে ওই মিল মালিকরা সারা বছরই এই রেটে গলাকাটা ব্যবসা করে গেলেও তাদের যেন ধরার কেউ নেই। লবণ মৌসুম এখন শেষ। মাঠে পাঁচ লক্ষাধিক মেট্রিক টন লব জমা থাকার পরেও ইতোমধ্যেই ওই মহলটি লবণ আমদানীর প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে বলে শুনাযাচ্ছে।
লবণ বাংলাদেশের একটি স্বনির্ভর খাত। দেশের দক্ষিণপূর্ব অঞ্চল কক্সবাজার জেলা ও চট্টগ্রাম জেলার বাশঁখালীতেই শুধু লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময় লবণ উৎপাদনের মৌসুম। প্রতিবছর এই সময়ের মধ্যে চাষিরা হাঁড়ভাঙা পরিশ্রম করে লাখ লাখ মেট্রিকটন লবণ উৎপাদন করে দেশকে লবণে স্বনির্ভর করে তোলে। গত কয়েক বছর লবণের বাম্পার উৎপাদনে দেশের চাহিদা মিঠিয়ে রপ্তানীর সুযোগ সৃষ্টি হলেও তা হয়নি। অনেকদিন পর গতবছর লবণের মূল্য বাড়ায় চাষিরা ভাল দাম পেয়ে খুশী হয়েছিল।
গত মৌসুমে আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে চাহিদার তুলনায় ২লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন লবণ কম উৎপাদন হয়। কিন্তু একটি সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ৫লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানী করা হয়। এতে করে বাজারে লবণের দাম কমে যায়। এতে বেশী দামে উৎপাদিত লবণও চাষীরা বিক্রি করতে পারেনি।
জানাগেছে, সরকারকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে একটি সিন্ডকেট ঘাটতির চেয়েও অতিরিক্ত লবণ আমদানীর পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোপূর্বে তারা চোরাই পথে লবণ আমদানী করে দেশের স্বনির্ভর খাত লবণের বারটা বাজিয়েছিল। এসময় চাষিরা ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হাজার হাজার টন লবণ নদীতে ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ করেছিল। পূবালী সল্ট, মোল্লা সল্ট, কনফিডেন্স সল্ট, এসিআই ও ফ্রেস সল্ট ইন্ডাজট্রির মালিকেরা ঘাটতির চেয়ে অতিরিক্ত লবণ আমদানীর পক্ষে প্রভাভ সৃষ্টি, পারমিট বাণিজ্য ও চোরাই পথে লবণ আমদানীর সাথে জড়িত থাকার কথা জানিয়েছেন কক্সবাজারের লবণ সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
বাজারে এখন চাষীরা তিন টাকার লবণ সাড়ে চার টাকায় বিক্রি করলেও কমেনি প্যাকেটজাত লবণের দাম। উল্লেখিত ইন্ডাজট্রির মালিকরা কিন্তু তিন টাকায় লবণ কিনে লেভেল লাগিয়ে বাজারে ৩৮/৪০ টাকায় বিক্রি করছে প্রতি কেজি লবণ। প্রতি মন লবণের মূল্য চাষিরা ২০০ টাকা পেলেও ইন্ডাজট্রির মালিকরা প্রতি মন লবণ বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন ১২ শত টাকা।
বিসিক সূত্রে জানাগেছে, ২০১৭-১৮ সালে লবণের উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছিল ১৮ লাখ মেট্রিক টন। বাজারে লবণের চাহিদা আছে ১৬ লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টন। এবারে লবণ মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ১৪ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টন। এহিসেবে ঘাটতি আছে ১লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন। গত বছরের অতিরিক্ত আমদানীর থেকে ঘাটতি পুষিয়ে উদ্বৃত্ত এবং এবছরের জামা লবণ মিলে এখন মাঠে জমা আছে প্রায় পাঁচ লাখ মেট্রিক টন লবণ। অথচ মাঠে লবণের ঘাটিতি আছে এক লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন। এর পরেও লবণ আমদানীর পাঁতারা দেশের স্বনির্ভর লবণ খাতের জন্য অশনি সংকেত বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্যাকেটজাত লবণ মোল্লা সুপার ৩৮ টাকা, কনফিডেন্স ৩৮ টাকা ও এসিআই ৩৮ টাকা এবং মোল্লাহ ৩০ টাকা, মক্কা ও মদীনার প্যাকেটে ৩০ টাকা করে রেট। ভোক্তাদের মতে এসব প্যাকেটজাত লবণের যে মান থাকার কথা সেগুলোর কিছু কিছু মান সম্মত হলেও কিছু কিছু খুবই নিশ।ণ মানের। তাদের মতে সামন্য আয়োডিন, প্রক্রিয়া ও প্যাকেটজাত করার কথা বলে লব মিল মালিকের এই নৈরাজ্য মেনেয়া যায়না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ভোক্তা অধিকার আইনের যথাযথ প্রয়োগেরও দাবি জানিয়েছেন তারা।



 

Show all comments
  • SHAUKAUT ২৭ মে, ২০১৮, ১:৪২ এএম says : 0
    shangbadik vhaider nogordiee bolbo aponarai paren ekta shundor bangla upojar dite karon jokhon aponader articel e kuli ujur ei dhoroner bakkoo bebojar na kore unnoto bangla bebojar korarjonno aponaderke onurudh korbo bhashar moddhe madhurjota thaka chai ete jatir jonno krititto boee ane dhonnobad.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ